বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুদের কারিকুলাম

আধুনিক শিক্ষাক্রমের প্রবক্তা Ralph Tylor ১৯৫৬ সালে শিক্ষাক্রমের একটি ধারণা দেন। এর মূল কথা হচেছ-‌‘শিক্ষার্থীদের সকল শিখন যা শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ের দ্বারা পরিকল্পিত ও পরিচালিত হয় তাই শিক্ষাক্রম।

(All the learning of students which is planned  and directed by the school to attain its educational goals.) তিনি চারটি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষাক্রমের ধারণাটি স্বচছ করার চেষ্টা করেন। প্রশ্নগুলো হচেছ (ক) শিক্ষা কি কি উদ্দেশ্য অর্জন করবে (খ) কী কী শিখন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিদ্যালয় উল্লেখিত উদ্দেশ্য অর্জন করবে (গ) এ সকল শিখণ অভিজ্ঞতা কী উপায়ে সংগঠন ও বিন্যাস করা যাবে এবং ( ঘ) উদ্দেশ্যগুলো অর্জিত হয়েছে কিনা তা কিভাবে যাচাই করা যাবে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-বিষয়বস্তু-সংগঠন-মূল্যায়ণ এই চারস্তর মডেল বলা হয়ে থাকে টেলরের ধারণাকে। ১৯৭০ সালে Mauritz Johnson বলেন, Ó“Curriculum is concerned not with what students will do in the learning situation, but with what they will learn as a consequence of what they do. Curriculum is concerned with results. ১৯৭৯সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) শিক্ষাক্রমের একটি ধারণ প্রদান করে। এতে শিখণ-শেখানো প্রক্রিয়াকে প্রাধ্যান্য দেয়া হয়। এখানে বলা হয়, A curriculum is an educational project defining: (a) the aims, goals and objectives of an educational action; (b) the ways, means and activities employed to achieve these goals; (c) the methods and instruments required to evaluate the success of the action.

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর তৃতীয় বছর থেকেই অতি উচ্চাশা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ থেকে আট বছরে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় কিন্তু ২০২১ সালে এসেও আমরা এ শিক্ষার মেয়াদ অধিকাংশ দেশের মতো ষষ্ঠ শ্রেণিতেও উন্নীত করতে পারিনি। এটিকে কি বলব-বাস্তবতা না আমাদের অপারগতা? প্রাথমিক শিক্ষা এখনও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত থাকার ফলে মাধ্যমিক স্তরের ব্যাপ্তি হয়েছে সাত বছর। এখানে উল্লেখ্য যে, মাধ্যমিক স্তর কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। সেটিও আমরা আজ পর্যন্ত ঠিক করত পারিনি কারন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিকে আমরা কলেজ বানিয়ে আলাদা শিক্ষক্ষেত্র তৈরি করে রেখেছি। এগুলো শুধুমাত্র একাডেমিক সিদ্ধান্ত নয়, এর সাথে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একাডেমিক সিদ্ধান্ত যারা নিতে পারেন, মতামত দিতে পারেন তাদের তো আর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই বিষয়টি অবহেলিত কিংবা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যেই রয়ে গেছে। সাত বছরের মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর আবার তিনটি উপস্তরে বিভক্ত: নিম্ন মাধ্যমিক তিন বছর ( ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম), মধ্য-মাধ্যমিক ( আমরা একে শুধু ’ মাধ্যমিক নামে ডাকি। দু’বছর (৯ম-১০ম শ্রেণি) এবং উচচমাধ্যমিক ( ১১শ-১২শ শ্রেণি) দু’বছর। ’আধুনিক বিশ্বের সব দেশেই ১৭-১৮ বছরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ এই তিনটি স্তরে বিন্যস্ত।

স্তুরগুলোর ব্যাপ্তিও প্রায় সমান (৫ থেকে ৭ বছর)। অষ্ট্রেলিয়ার মতো যেসব দেশে একশ্রেণির প্রাক-প্রাথমিক (যাকে ’জিরো ইয়ার’ নামে ডাকা হয়) শিক্ষা ছয় শ্রেনির প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একীভূতি, সেসব দেশে মোট সাত শ্রেণির প্রাথমিক, ছয় শ্রেণির মাধ্যমিক এবং পাঁচ-ছয় বছরের উচচশিক্ষার ব্যপ্তি (৭+৬+৫) একটি সুন্দর পিরামিডের আকৃতি ধারন করে। আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে যদি ষষ্ঠ শ্রেনি পর্যন্ত করা যেত, বাকী সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক তাহলে অনেক ঝামেলাই চুকে যেত। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আর একটি শ্রেণি বৃদ্ধি করলে শিক্ষকদের পাঠদানেও খুব একটা সমস্যা হতো না, ইনফ্রাস্ট্রকাচারেও খুব বেশি একটি খরচ হতো না। আর সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তো আমাদের একটি মডেল ইতিমধ্যে আছে-যেতন ক্যাডেট কলেজ। এভাবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও তারপর উচচশিক্ষা-এই তিনটি স্তরে বিভক্ত করা হলে বৈশ্বিক শিক্ষাস্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ন হতো।

আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতা ধরা হয়েছিল ৪৯টি। এটিও সম্ভবত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাকে ধরে করা হয়েছিল। বর্তমানে এগুলোকে কমিয়ে ২৯টি করা হয়েছে। যেমন-(১) সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসস্থাপন, সকল সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসায় উদ্দীপ্ত হওয়া। (২) নিজ নিজ ধর্ম প্রবর্তকের আদর্শ এবং ধর্মীয় অনুশাসন অনুশীলনের মাধ্যমে নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করা (৩) সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্দীপ্ত ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া। (৪) কল্পনা, কৌতুহল, সৃজনশীলতা ও বুদ্ধির বিকাশে আগ্রহী হওয়া (৫) সংগীত, চারু ও কারুকলা ইত্যাদির মাধ্যমে সৃজনশীলতা, সৌন্দয্যচেতনা, সুকুমারবৃত্তি ও নান্দনিকবোধের প্রকাশ এবং সৃজনশীলতার আনন্দ ও সৌন্দর্য উপভোগে সামর্থ অর্জন করা। (৬) প্রকৃতির নিয়ম গুলোর জানার মাধ্যমে বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করা (৭) বিজ্ঞানের নীতি ও পদ্ধতি এবং যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের অভ্যাস গঠন এবং বিজ্ঞানমনস্কতা অর্জন করা (৮) প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা ও প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা (৯) বাংলাভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা (১০) বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন ও ব্যবহার করা (১১) গাণিতিক ধারণা ও দক্ষতা অর্জন করা (১২) যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারা (১৩) মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বসংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া (১৪) স্বাধীন ও মুক্তচিন্তায় উৎসাহিত হওয়া এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুশীলন করা (১৫ নৈতিক ও সামাজিক গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপন এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা (১৬) ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সংরক্ষণে যত্মশীল হওয়া (১৭) বিশেষ চাহিতসম্পন্ন শিশুসহ নারী-পুরুষ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ন সহ-অবস্থানের মানসিকতা অর্জন করা। (১৮) অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে ত্যাগের মনোভাব অর্জন ও পরমসহিষ্ণুতা প্রদর্শন ও মানবিক গুণাবলী অর্জন করা। (১৯) সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং নিজের দায়িত্ত ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া। (২০) প্রতিকূলতা ও দুর্যোগ সম্পর্কে জানা এবং তা মোকাবেলায় দক্ষ ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। (২১) নিজের কাজ নিজে করা এবং শ্রমের মর্যাদা দেওয়া। (২২) প্রকৃতি, পরিবেশ ও বিশ্বজগত সম্পর্কে জানা ও ভালোবাসা এবং পরিবেশের উন্নয়ন ও সংরক্ষনে উদ্ধুদ্ধ হওয়া। (২৩) আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণে সচেষ্ট হওয়া। (২৪) মানুষের মৌলিক চাহিদা ও পরিবশের ওপর জনসংখ্যার প্রভাব এবং জনসম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা। (২৫) শরীরচর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন এবং নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করা। (২৬) নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের অভ্যাস গঠন করা। (২৭) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হওয়া এবং ত্যাগের মনোভাব গঠন ও দেশ গড়ার কাজে সক্রিয় অংশগ্রহন করা। (২৮) জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা এবং এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। (২৯) বাংলাদেশকে জানা ও ভালোবাসা। প্রশ্ন হচেছ আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাদান, মূল্যায়ন এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা কি এগুলো নিশ্চিত করতে পারছে।

প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির স্তরের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের পড়তে, লিখতে ও অনুসন্ধান করতে শেখাকে নিশ্চিত করা। শিশুরা যেহেতু এই স্তরেও ঠিকমতো মুক্ত পাঠের দক্ষতা অর্জন করেনা তাই এই স্তরের মূল শিখন-শেখানো সামগ্রী হচেছ শিক্ষক নির্দেশিকা। শিক্ষক নির্দেশিকাতে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খেলা, কাজ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখন যোগ্যতাসমূহ অর্জন করবে। বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক নির্দেশিকার পাশাপাশি শিক্ষার্র্থীদের জন্য তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ওয়ার্কবুক, পাঠ্যপুস্তক, সম্পূরক পঠন-সামগ্রী, চার্ট ও কার্ডের উন্নয়নসহ খেলনা সামগ্রী, অডিও-ভিজুয়াল ও বিভিন্ন উপকরণ প্রচলন করা প্রয়োজন সেটি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? কে করবেন এগুলো? প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনে এর সঠিক উল্লেখ ও দায়িত্ব বণ্টন করা আছে কিনা সেটিও দেখার বিষয়। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হচেছ শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগ-অনুভূতির বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধে, বিজ্ঞানমনস্কতায়, সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্ধুদ্ধ করা। প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় হচেছ শিশুদের পরবর্তী শিখনের জন্য প্রস্তুতিমূলক পর্ব, প্রাথমিক হচ্ছে ভিত্তি, মাধ্যমিক হচ্ছে সামাজিকীকরণ, উচ্চ মাধ্যমিক হচেছ বিশেষায়ণের জন্য প্রস্তুুতি আর উচ্চশিক্ষা হচেছ বিশেষায়ণ পর্যায়। এই উদ্দেশ্যগুলো দেখলে মনে হয় আমাদের শিক্ষার এত স্তর ও উপস্তর ঠিক আছে-কিন্তু আমাদের মেলাতে হবে বৈশ্বিক স্তর ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে। আমাদের দেশের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন বলে যে, আমরা কলেজে পড়ি তখন বাইরের যে কোন দেশ মনে করবে তারা স্নাতকের শিক্ষার্থী। আসলে বিষয়টি তো তা নয়। আবার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন বলে যে, আমরা হাইস্কুলে পড়ি তখন অনেক দেশেই সেটিকে মনে করা হবে নবম/দশম/একাদশ শ্রেণি। এই বিষয়গুলোকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুবিন্যস্ত করা প্রয়োজন ।

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের মূল কৌশল হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক সক্রিয় শিখন- যা শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া বা সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার্থী বিভিন্ন কৌশলে শ্রেণিকক্ষে, বিদ্যালয়ে, বাড়িতে, নিকট পরিবেশে বিভিন্ন কার্যক্রম ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখন সম্পন্ন করে নির্ধারিত যোগ্যতাসমূহ অর্জন করে। এরূপ নানাবিধ শিখন শেখানো কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনা করতে হলে পর্যাপ্ত শিখন সময় থাকা প্রয়োজন তবে তা শুধু শ্রেণিকক্ষ ভিত্তিক নয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রমে শিখন সময়কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

ইউনেস্কোর শিক্ষাক্রম পরিভাষায় শিখন সময়ের বিভিন্ন পরিভাষা ও তার ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। যেমন: কনট্যাক্ট পিরিয়ড বলতে শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সক্রিয় শিখন শেখানো সময়কে ধরা হয়েছে। ইন্সট্রাকশনাল টাইম বলতে সেই নির্দিষ্ট সময়কে বোঝানো হয়েছে যেখানে শ্রেণিকক্ষে বা ভার্চুয়াল পরিবেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি শিখনের জন্য সহায়তা পেয়ে থাকে। আবার শিখন সময় বলতে সেই নির্দিষ্ট সময়কে বিবেচনা করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে কোনো শিখন-সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত থাকে অথবা কার্যকর শিখনে নিবিষ্ট থাকে। বর্তমান যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রমে বিধৃত উদ্দেশ্যাবলির ওপর প্রধান তিনটি উপাদান অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ১) মাস্টারি লার্ণিং অর্থাৎ শিক্ষণীয় বিষয়ের পুরোটা শেখা ২) শিখণ-শেখানো প্রক্রিয়ায় সব শিক্ষার্থীর বিচিত্র চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখা যা অন্তর্ভুক্তি নামে পরিচিত এবং ৩) শিখনকালীন অবিরত মূল্যায়নের মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীর প্রয়োজনমতো নিরাময় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শিখণ-শেখানো প্রক্রিয়ার সময় শিক্ষক যদি এসব শর্ত মেনে চলেন তবে এ স্তরে ‘সিস্টেম লস’ অনেক কমানো সম্ভব। এসব অর্জন করতে হলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশ কম হতে হয় যাতে শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চাহিদার প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন, কিন্তু সেটি কিভাবে ও কতটা পালিত হচ্ছে সে খবর কি আমরা রাখতে পারছি?

 

মাছুম বিল্লাহ
(শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক )

Header Ad
Header Ad

আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন

আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন। ছবি: সংগৃহীত

আজ ৫ ফেব্রুয়ারি, বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন। প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে গোসল উপভোগ করতে পারেন। আবার গোসলকে নিয়মিত কাজের থেকে একটু বেশি আকর্ষণীয় বা স্মরনীয় করতে চলে যেতে পারেন দূরে কোথাও।

সেটা হতে পারে সমুদ্র বা সুইমিং পুল। আবার চলে যেতে পারেন গ্রামের পুকুরে। শৈশবের মতো দাপিয়ে গোসল করতে পারেন নদী, খাল-বিলেও। এতে বন্ধুর সাথে সুসময় কাটানোর পাশাপাশি শরীর ও মনে আসবে তাজা অনুভূতি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর ডেনভার শহরের একটি কোম্পানি ২০১৪ সালে ৫ ফেব্রুয়ারিকে 'ন্যাশনাল শাওয়ার উইথ এ ফ্রেন্ড ডে'- হিসেবে স্বীকৃতির আবেদন করে। পরে ২০১৫ সালে এটিকে দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এই দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য সুস্থ ও জীবানুমুক্ত গোসলে উৎসাহিত করার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ক্যাম্পেইন। মূলতে শীতকালে গোসলের ভীতি দূর করে উপভোগ্য করতে করণীয় নানা বিষয় মাথায় রেখে কোম্পানিটি পণ্য উৎপাদন করে। যেমন, উন্নতমানের শাওয়ার, ওয়াটার হিটার, গিজার, পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার ইত্যাদি।

 

Header Ad
Header Ad

২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংবাদ সম্মেলনে। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে আলাদা বিভাগ করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।

পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশকে ৪টি প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে আলাদা বিভাগ করার সুপারিশও করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ নিয়ে গ্রেটার সিটি ‘ঢাকা ক্যাপিটাল সিটি’ গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন।

এছাড়া ইমিগ্রেশনের জন্য পুলিশের আলাদা ইউনিট গঠনের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। পাবলিক সার্ভিস পৃথক করে তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছে।

এদিকে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিচার বিভাগ কোনো দিনও স্বাধীন ছিল না, তাই কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন করার প্রস্তাব দিয়েছে। স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিশন। এছাড়া স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছে বিচার সংস্কার কমিশন। পুলিশী তদন্ত অনেক সময় রাজনৈতিক হয়ে থাকে এজন্য এটা দরকার বলে জানানো হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট উপজেলা পর্যন্ত নেয়ার সুপারিশ, আর বিভাগীয় পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

কমিশনগুলোর প্রস্তাবনা নিয়ে সবার সঙ্গে আলাপ করে প্রাইরোটি বেসিসে কিছু প্রস্তাবনাকে একত্রিত করা হবে যেখানে সব পক্ষের স্বাক্ষর থাকবে সেটার নাম হবে জুলাই চার্টার। এই জুলাই চার্টাররের কতটুকু বাস্তবায়ন করতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো তার উপর নির্ভর করছে নির্বাচন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

Header Ad
Header Ad

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

হাইকোর্টের রায়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ সকল আসামি খালাস পেয়েছেন। ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এই রায় দেওয়া হয়।

আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কায়সার কামাল ও মো. মাকসুদ উল্লাহ, আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।

এর আগে, গত ৩০ জানুয়ারি মামলার ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।

২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী এ মামলায় ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।

পরবর্তীতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয় এবং আসামিরা খালাস চেয়ে আপিল করেন। আজকের রায়ে সবাইকে খালাস দেওয়া হলো।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "এই মামলায় আইনের চরম অপপ্রয়োগ হয়েছে। কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল একটি পক্ষপাতদুষ্ট রায়। মামলার তদন্তও ছিল দুর্বল, অবহেলাজনিত ও কাল্পনিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।"

তিনি আরও বলেন, "এই মামলায় দণ্ডিত ৪৭ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে দুজন মারা গেছেন। বাকি ৪৫ জনের মধ্যে ৯ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন, আর বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।"

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে হামলার শিকার হন। ট্রেন লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী জিআরপি থানার তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। প্রথমদিকে বিএনপির ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।

পরের বছর তদন্তে কোনো সাক্ষী না পাওয়ায় পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যা তৎকালীন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে গৃহীত হয়। তবে আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৫২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘদিন বিচারিক প্রক্রিয়া চলার পর অবশেষে আজ হাইকোর্টের রায়ে সকল আসামিকে খালাস দেওয়া হলো।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন
২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা
বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজিবাহী পিকআপ খাদে, চালকসহ নিহত ৩
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনগনের মতামত চাইলো হাসনাত  
এই ফটো তোলোস কেন? আদালত চত্বরে শাহজাহান ওমর  
মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব  
পটুয়াখালীতে বাংলাভিশনের সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম  
উত্তরবঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল বিক্রি বন্ধ
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ  
শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার নিয়ে কড়া বার্তা হাসনাত আবদুল্লাহর  
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় আজ    
সুইডেনে স্কুলে বন্দুক হামলা নিহত ১০ জন  
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত গ্রেফতার  
জাবিতে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের ঘোষণা  
মুসলিম লীগ যেমন বিলুপ্ত হয়েছে, আওয়ামী লীগও বিলুপ্ত হবে : সলিমুল্লাহ খান
ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বীসহ ৮ বুয়েট শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার