দ্রব্যমূল্যের মূল্যস্ফীতিও দীর্ঘমেয়াদি হবে না
কোভিড চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অর্থনীতিতে আমরা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছি।এটাই হল আসল বিষয়। আমাদের সবক্ষেত্রগুলিই ইতিবাচক আছে। উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত আছে। কোথাও উৎপাদন ব্যবস্থা মন্থর হয়নি । বিশেষ করে কৃষির ক্ষেত্রে। এটি পুরোদমেই চলছে। অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আছে যেটি তা হল, যেহেতু কোভিডের পরে সারাবিশ্ব ঘুরে দাঁড়িয়েছে, অনেক চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। কাজেই দরদাম অনেকটা বেড়ে গেছে খাদ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে। আমাদের অনেকটা আমদানি নির্ভর দেশ অনেক খাদ্যসামগ্রির জন্য। বিশেষ করে আমাদের জ্বালানি তেলের জন্য, ভোজ্য তেলের জন্য, চিনির জন্য। সেজন্য বিশ্ববাজারে এগুলোর দাম অনেক বেড়েছে।
যেহেতু এগুলোর দাম বেড়েছে সেহেতু আমরা আমদানি করছি বিশ্ব বাজার দামে। এই কারণে তুলনামূলক কিছু বেশি দেখা যাচ্ছে। গড় মূল্যস্ফীতি যদিও ১৭ শতাংশের নিচে এখনো। তবে আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা বেড়ে যাওয়ায়, সংহত হওয়ায়, রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায়, আমরা আশা করছি আমাদের মূল্যস্ফীতিও দীর্ঘমেয়াদী হবে না যদি আন্তর্জাতিক বাজারে আর দরদাম না বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে দরদাম বাড়লে আমাদের মূল্যস্ফীতিও বাড়বে যদি আমরা আমদানি করি । এই উচ্চমূল্যের মধ্যে এখন হলো মূল্যস্ফীতিটাকে সামাল দেয়া। যতটা সম্ভব নিজেদের উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও উজ্জীবিত করা, শিল্প ও সেবা খাতে আমাদের আরো উৎপাদন বাড়ানো এবং দৃশ্যত অর্থনীতি বেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে এটা আমি বলতে পারি ।
আমাদের সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে তবে আমরা অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হচ্ছি সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের অভাবটা আসলে কোথায় যে কারণে সত্যিকার অর্থেই যারা দেশের মানুষ তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভর্তুকি গুনতেই হচ্ছে ।একটা ব্যাপার মানতে হবে যে,আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আমাদের কিছুটা ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এখান থেকে উত্তরণের কি উপায় আছে? হ্যাঁ, উত্তরণের পথতো নিশ্চয় আছে। সেজন্যই তো আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের যাতে রপ্তানি দ্রুত বাড়ানো যায়। প্রবাসী-আয় যাতে আরও বেশি আসে, সেজন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাদের জন্য প্রণোদনা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা পেত এখন আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। আমরা কৃষিতে ব্যাপক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি ভর্তুকির মাধ্যমে। আবার আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গড়ে তুলছি। বড় বড় মেগা প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে মেগা তিনটা প্রজেক্ট আমাদের বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। ফলে অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে। উৎপাদন ব্যবস্থা আরও সক্রিয় ও সমন্বিত হবে। আর মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই আছে এখনও। ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়নি ।
সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিকে আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। যাতে আমাদের বাজেট ঘাটতি আর বেড়ে না যায়। সেই কারণে চেষ্টা করছি মূল্যস্ফীতি থামানোর জন্য। আমরা মূল্যস্ফীতি থামানোর জন্য কৃষি ব্যবস্থাপনাকে আরো সক্রিয় করছি প্রণোদনা ও ভর্তুকি দিয়ে। যাতে মূল্যস্ফীতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে মূল্যস্ফীতি হলেও মাথাপিছু আয় কিন্তু মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি। আমাদের দেশের যে আয় সেটা কিন্তু মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি । সে কারণে মূল্যস্ফীতির যে ব্যর্থতা আমরা তা পুষিয়ে নিতে পারি বা ভুলে যেতে পারি আমাদের বর্ধিত এই আয় এর জন্য । কাজেই আমরা যেভাবে বলছি শুধু মূল্যস্ফীতি আর মূল্যস্ফীতি কিন্তু তারচেয়ে অনেক বেশি বাড়ছে দেশের আয়। মাথাপিছু আয় তার থেকে বেশি বাড়ছে। কাজেই মূল্যস্ফীতি হলেও মানুষ বর্ধিত আয় এর কারণে সেটা পুষিয়ে নিতে পারছে । আমাদের কৃষি ছাড়াও বর্ধিত আয় এর কারণে মানুষ মূল্যস্ফীতি পুষিয়ে নিতে পারছে ।
আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো মানবসম্পদ । সত্যিকার অর্থে জনগণ কতটুকু লাভবান হয় । ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের চার লেনের হাইওয়ে কি সেটার সুফল কি জনগণ পাচ্ছে না? যারা এই রাস্তায় ভ্রমণ করে তারাইতো সবাই এর সুফল ভোগ করছে। এই যে আমাদের দেশে এত বিদ্যুৎ উৎপাদন হলো, এর সুফল কি সবাই ভোগ করছে না? ধনী-গরীব,গ্রামের-শহরের মানুষ উদাহরণ দিয়ে বলে বঙ্গবন্ধু ব্রিজ আগামী জুনে উদ্বোধন হয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে সবাই উপকৃত ধনী-গরীব বড় ছোট সকলেই। যারা বলছে বড় বড় প্রকল্প নেয়া হয় কিন্তু সাধারণ মানুষের কোন কাজে লাগে না, এটাই আমি বলছি এইসব কথাগুলো একেবারে হাওয়ায় ভাসানো কথা।
দুর্নীতি সর্বক্ষেত্রেই আছে। স্বাস্থ্য,পরিবহন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়েও অনেক দুর্নীতি হয় হাটে বাজারে ভেজাল দুর্নীতি না? যাইহোক সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, প্রকল্প নিলে তার ফল জনগণই ভোগ করে এগুলা জনগণের জন্যই নেয়া হয়। জনকল্যাণমুখি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্ববাজারের মন্দা কাটিয়ে উঠার যে চ্যালেঞ্জ সেটি আমরা যথেষ্ট ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পারছি এবং করছিও।
লেখক: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী