সরকারি-বেসরকারি অর্থ ব্যয়ে মিতব্যয়িতা অত্যাবশ্যক
সরকারি প্রকল্পসহ অনেক ক্ষেত্রে সম্প্রতি সরকার অর্থ ব্যয়ে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশনা জারি করেছেন। এ কাজটি অনেক আগেই করা জরুরি ছিল। কারণ, সরকারি অর্থ মানেই হলো এদেশের জনগনের ট্যাক্সের টাকা। যারা এই রাজস্ব আহরণ করেন তারাই জানেন— কত কষ্ট করে তা আহরণ করতে হয়।
পরিবারের যে সদস্য আয়-উপার্জন করেন তিনিই জানেন কাজটি কত কঠিন। তিনি সেই উপার্জিত অর্থ ব্যয় করার সময় অনেক কৃপণতা করে থাকেন। কিন্তু পরিবারের যে সদস্য আয় করেন না তাকে টাকা দিলে তিনি অনায়াসে তা খরচ করে আরাম আয়েশ করতে পারেন।
সরকারি অর্থ যারা বরাদ্দ পান তাদের উপরের উদাহরণটি মনে রাখতে হবে। কারণ, একজন সরকারি কর্মকর্তার পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে দেশের উন্নয়নে কাজ করা এবং জনগণের করের টাকা খরচ করার সময় বিষয়টি মনে রাখা। তা’হলে দেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলোও অনেক ক্ষেত্রে অমিতব্যয়ী হয়ে থাকে। এশিয়ার অন্যান্য দেশ এমন করে না। যারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে লাক্সারি জীবনযাপন করেন এবং পরবর্তীতে ঋণ খেলাপি হয় তাদের প্রতি করুণা প্রদর্শনের পরিবর্তে যেদিন তাদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হবে, সেদিনই আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আসবে। ব্যাংক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে যত দিন তদবির চলবে তত দিন তা আসবে না।
আগে সরকারি অর্থ ব্যয়ের পর কঠোর নিয়ম মেনে তা অডিট করা হত। এখন তা আগের মত করা হচ্ছে কিনা তা অনেকের মনে প্রশ্ন। অডিট বিভাগের জনবল সেরকমভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে কিনা তাও দেখার বিষয়। মনে রাখতে হবে নিরীক্ষা কার্যক্রম যে দেশের যত কঠোরভাবে পরিচালনা করা হয় সেদেশের আর্থিক অনিয়ম তত কম হয়ে থাকে ।
সরকারি যানবাহন সঠিক নিয়ম মেনে চলছে কিনা তাও মনিটর করা দরকার। সরকারি কাজ ছাড়াও মহাসড়কে বহু সরকারি গাড়ি চলতে দেখা যায়। রাজধানীর সরকারি গাড়ি ছুটির দিনে জেলা উপজেলায় কি কারণে যাবে কিংবা গেলে কার অনুমতি লাগবে এসব বিষয়ে বিধি বিধান আছে। কিন্তু তা কতটা মানা হচ্ছে তাও মনিটর করতে হবে। এ বিষয়ে একটি অফিস আদেশ পুনরায় জারি করা আবশ্যক।
সেই দিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারে মিতব্যয়ী না হওয়ার মাশুল দিতে হবে। আমাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের সবাইকে বিলাসবহুল ব্যয় কমাতে হবে। নানা কারণে বিশ্বের আর্থিক মন্দা আরও অনেক দিন চলবে। সেজন্য আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে অর্থ ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধনে। মনে রাখতে হবে, সময় গেলে সাধন হবে না ..।
লেখক: মো. বজলুল কবির ভূঞা, সাবেক কর কমিশনার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ট্যাক্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ
আরএ/