মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

তুমি রবে নীরবে–হৃদয়ে মম

জীবনে চলার পথে কোনো-কোনো ঘটনা আমাদের চিত্তকে নাড়া দেয়, আমরা একটু নড়ে-চড়ে বসি, আমাদের কিছুটা ভাবায় এবং তা থেকে একটি বোধের উদয় হয়। কোনো এক বড়দিনের উপাসনায় যোগ দিতে গিয়ে এমন একটি অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল, যা নিয়ে আজ লিখতে বসেছি। নিয়মিত না হলেও মাঝে-মধ্যে সাভার ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীর উপাসনায় যোগ দিয়ে থাকি। ওই মণ্ডলীর পালকের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা, শহর থেকে দূরে একটি উপ-শহরের পরিবেশ এবং ওই মণ্ডলীর খ্রিস্টভক্তগণের সান্নিধ্য আমাকে উপাসনায় যোগ দিতে অনুপ্রেরণা যোগায়।

প্রতি বড়দিনে সেখানে বড়দিনের উপাসনার পর প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। সে কারণে সবাই হাতে সময় নিয়ে উপাসনায় যোগ দিতে আসেন। পালক সে সুযোগে উপাসনায় যোগ দিতে আসা অনেককে বড়দিন সম্পর্কে তাদের নিজস্ব উপলব্ধির বিষয়ে সংক্ষেপে সবার উদ্দেশ্যে বলার জন্য আহ্বান করে থাকেন, যাতে একে-অন্যের অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে পারেন। সবার বক্তব্য শেষ হলে পালক বক্তাদের কথা শুনে সংক্ষেপে তার ওপর কথা বলেন এবং পরিশেষে তিনি বড়দিনের ওপর তার প্রচারমূলক বক্তৃতা দেন।

উপাসনা অংশগ্রহণমূলক হওয়ায় সবাই তা পছন্দ করেন বলে মনে হয়। কোনো তাত্ত্বিক বক্তব্য না রেখে বড়দিন সম্পর্কে নিজের অনুভূতির কথা বলতে পালক অংশগ্রহণকারীদের অনুরোধ করেন। তবে পালকের কথা না রেখে এই উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে প্রায় সবাই যিশুর জন্ম এবং পৃথিবীতে তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এক পর্যায়ে পালক কোন দিন অবগাহন নিয়েছেন, তা নয়; বরং ব্যক্তিজীবনে যিশু যেদিন ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন, সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে অনুরোধ করেন। বিষয়টি স্পষ্ট করতে তিনি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। এক ব্যক্তি কোথাও বের হলে সঙ্গে করে একটি বাইবেল রাখতেন। এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বাইবেল তাকে পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী পাপের পথে পা না বাড়াতে প্রেরণা দেয় এবং পাপ থেকে তাকে রক্ষা করে। যা-ই হোক, ব্যক্তিজীবনে কোন দিন বা কোন ক্ষণে যিশু আমার জীবনে প্রবেশ করলেন, সেটি একটি মাথা ঘামাবার প্রশ্ন। উপাসনায় শুধু একজনকে বলতে শোনা যায়, যিশু তাঁর ব্যক্তিজীবনে কবে প্রধান অবলম্বন হিসেবে দেখা দিয়েছেন।

আমরা জানি, সাধু পল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পথে যাওয়ার সময় যিশুর দর্শন লাভ করেন এবং এটি তার জীবনের মোড় পরিবর্তনকারী একটি ঘটনা। সেই দিন এবং সেই ক্ষণ থেকে যিশুর অনুসারীদেরকে নিপীড়ন করার পরিবর্তে তিনি তাদের রক্ষণে আত্মনিয়োগ করেন এবং জীবন বাজি রেখে রোম সাম্রাজ্যের বিভিন্ন শহরে এবং গ্রামে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে অনন্য ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন।

এখানে ভারতবর্ষে সাধু সুন্দর সিংয়ের কথা বলা যেতে পারে। তিনি পাঞ্জাবের লুধিয়ানার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মশিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি শিখতে মা তাঁকে লুধিয়ানার একটি ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করান। অধ্যয়নকালে ১৪ বছর বয়সে তাঁর মাতৃবিয়োগ হয়। এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। রাগে তিনি তাঁর স্কুলের বন্ধুদের সামনে বাইবেলের একটি-একটি পাতা ছিঁড়ে আগুনে পোড়ান। মায়ের মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে তিনি তাঁর ধর্মের (শিখ ধর্ম) ওপর তাঁর আস্থা হারান। এক পর্যায়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, ‘ঈশ্বর বলে যদি কেউ থাকেন’ এবং তিনি যদি তাঁকে দর্শন না দেন, তবে তিনি (সুন্দর সিং) রাতের বেলা চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবেন। তিনি ওই রাতে যিশুর দর্শন লাভ করেন এবং পরবর্তীকালে প্রকাশ্যে সিমলার ব্যাপিষ্ট চার্চে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে অবগাহন নেন এবং ভারতবর্ষে খ্রিস্টধর্মপ্রচারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

সাধু পল প্রথম জীবনে প্রকৃত অর্থেই একজন মৌলবাদী মানুষ ছিলেন। ইহুদি ধর্মের মর্যাদা রক্ষায় তিনি সন্ত্রাসের পথ বেছে নেন এবং যিশুর অনুসারীদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে তাদের ওপর অত্যাচার এবং নিপীড়ন চালান। অন্যদিকে, সাধু সুন্দর সিং ঈশ্বর-দর্শনে জীবনকে বাজি রাখেন। অন্তরের একটি ‘তীব্র দহন’ বা তাড়নার কারণে তাঁরা জীবনের একটি সন্ধিক্ষণে গিয়ে উপস্থিত হন, ফলে তাঁরা সত্যের মুখোমুখি হন। এ কথা স্মরণ করেই হয়ত জ্ঞানী সলোমন বলেন, ‘তাই তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বহিরে আসিয়াছি, সযত্নে (diligently) তোমার মুখ দেখিতে আসিয়াছি, তোমাকে পাইয়াছি’–হিতোপদেশ ৭:১৫ পদ। সাধারণ মানুষ যে আমরা, আমাদের পক্ষে তা করা হয়ে ওঠে না, সত্য অনুসন্ধানে প্রাণপণ চেষ্টা করি না বা জীবন বাজি রাখি না। তাই সত্যকে আমরা সেভাবে অনুভব করি না বা জানি না। পারস্যের কবি ও দার্শনিক জালালউদ্দিন রুমির একটি উক্তি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘I looked into my heart and there is He.’ আমাদের দৃষ্টি অতদূর পৌঁছে না। সে-কথা মনে করে কবিগুরু বলেন, ‘হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাই নি। বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি।’ যিশু আমাদের হৃদয়ে থাকলেও, তাঁকে দেখার মতো দৃষ্টি আমাদের অনেকেরই নেই।

জন্মের পর জীবনের প্রথম ৬ বছর আমরা hypnotic trench-এর মধ্যে থাকি। এ সময় বাবা-মা, দাদু-দিদিমা এবং অন্য যাদের সাহচর্যে বেড়ে উঠি, তাদের কাছ থেকে যা শিখি, সেগুলো আমাদের অবচেতন মনে (subconscious mind) গেঁথে যায় এবং জীবনের পরবর্তী সময়ে আমাদের জীবনের ‘রাডার’ হিসেবে কাজ করে। সে-কারণে দায়ূদ হিতোপদেশ ২২:৬ পদে বলেছেন, ‘‘বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও, সে প্রাচীন হইলেও তাহা ছাড়িবে না।” শৈশব থেকে যে ধর্মবিশ্বাস নিয়ে আমরা বেড়ে উঠি, সেটি স্থায়ী হয় এবং একে আশ্রয় করে জীবন-যাপন করি, এটি আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয়ের প্রধান অংশ (identity) হয়ে ওঠে। ফলে আমরা জীবনভর এই পরিচয়-রক্ষণে যত্নবান হই। ধর্মবিশ্বাসকে সমুন্নত রাখতে আমরা লেখাপড়া করি এবং যে সকল বিষয় আমাদের ধর্মবিশ্বাসকে re-inforce (মজবুত) করে, সেগুলো মনে রাখি এবং তার ওপর ব্যাখ্যা প্রদান করি। আমাদের ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে যে সকল চিন্তা বা মতবাদ সঙ্গতিপূর্ণ নয়, সেগুলো সযত্নে পরিহার করি। ফলে মুক্তচিন্তা এবং যুক্তির নিরীখে আমরা কখনো ধর্মকে দেখি না। ধর্ম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হিসেবেই থেকে যায়, যা আমরা ছোটবেলা থেকে শুনেছি বা জেনেছি; ধর্মকে নিজের মতো করে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার ক্ষমতা লাভ করি না, আমাদের চেতনা বা বোধের সঙ্গে নতুন কোনো মাত্রা যুক্ত হয় না। ফলে ধর্মশিক্ষাকে নিজের জীবন নির্মাণ বা সমাজ পরিবর্তনে কাজে লাগাতে পারি না। সে কারণে নিজের উপলব্ধি বা অভিজ্ঞতা থেকে যিশু সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হলে আমাদের চিন্তার মধ্যে একটি ঝাঁকুনি অনুভব করি। ধর্মবিশ্বাস অনেকটা আবেগকেন্দ্রিক। সুতরাং নিজ ধর্ম সম্পর্কে কেউ নেতিবাচক কিছু বললে আমরা ক্ষেপে যাই। আবেগতাড়িত হয়ে ধর্ম সম্পর্কে, নীতি-নৈতিকতা সম্পর্কে আমরা অনেক জ্ঞানগম্ভীর বক্তৃতা-বিবৃতি দিলেও, ব্যক্তিজীবনে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। রোগ-শোকে আমরা যিশুর কাছে প্রার্থনা করি এবং বিপদ কেটে গেলে আমরা যিশুকে ধন্যবাদ দিই। পরীক্ষায় পাশ করলে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মসংস্থান হলে, মেয়েকে পাত্রস্থ করতে পারলে, গৃহনির্মাণের কাজ সমাপ্ত হলে আনন্দিত হই এবং যিশুকে ধন্যবাদ দিই এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ প্রভুর ভাণ্ডারে দান ও দশমাংশের টাকা উপহার দিই। তবে আশা নিয়ে ঈশ্বরের কাছে কিছু চেয়ে তা না পেলে, মনে করি, আমরা যোগ্যভাবে তা চাই নি। আমরা আমাদের দোষী ভাবি। আমরা মনে করি, আমাদের পাপের কারণে ঈশ্বর আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি আমাদের পাপকে ক্ষমা করেন এবং শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করেন। ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে এই dualism বা দ্বৈত ভাবনা থাকায় আমরা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারি না, কী করে কী হয়। অন্য ধর্মের অনুসারীদেরও চিন্তা-ভাবনা অভিন্ন, কিছু লাভ করলে বিশ্বাস অনুযায়ী তারা প্রার্থনা এবং দান করে থাকেন; ব্যর্থ হলে নিজেকে অযোগ্য মনে করে আরও শুদ্ধভাবে ধর্মচর্চায় মনোযোগী হন। এই পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলের মধ্যে আমাদের ধর্মবিশ্বাস টিকে থাকে। আমাদের এ অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে ধর্মগুরুরা ধর্মের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বিভিন্ন ব্যান্ডের দল বা মণ্ডলী স্থাপনে উদ্যোগী হন। দুঃখ-কষ্টকে জয় করে কীভাবে জীবন নির্মাণ করতে হয়ে, তার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে শান্তি পাবার লক্ষ্যে কী করে স্বর্গলাভ করা যায় সে-বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান ও উপদেশ দিয়ে থাকেন। এতে জনগণের ইহজগতে বা পরজগতে কোনো লাভ হোক বা না হোক, সমাজপতি বা রাষ্ট্রপরিচালকদের লাভ হয়ে থাকে। তারা জীবনবিমুখ এবং পরকালের সুখের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকা জনগণকে নিজেদের পক্ষে ধরে রেখে তাদের শাসন এবং শোষণ করার সুযোগ লাভ করেন।

খ্রিস্টানদের প্রধান দুটি দল ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্ট। তারা নিজেদের মধ্যে যুগ-যুগ ধরে সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন, তা নয় । ফ্রান্সে ১৫৭২ সালের ২৪ আগস্ট সাধু বর্থেলময় দিবসে এমন একটি ঘটনার সূত্রপাত হয়। রাজা নবম চার্লস তার মাতা Catherine de Medici’র প্ররোচনায় তার প্রজাদের Huguenots সম্প্রদায়ে প্রোটেস্ট্যান্টদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন এবং ফলে রাজ্যব্যাপী দাঙ্গা বাঁধে। এই দাঙ্গায় ৭০ হাজার প্রোটেস্ট্যান্ট নিহত হন। ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপের কাছে এই বার্তা পৌঁছলে তিনি উল্লসিত হন এবং হত্যায় অংশগ্রহণকারী তার অনুসারীদের অভিনন্দিত করেন। ইতিহাসে ধর্মকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী ঘটনার এমন অনেক উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। খ্রিস্ট যদি সকল চার্চ বা মণ্ডলীর মস্তক হবেন, তবে নিজেদের মধ্যে দলাদলি এবং বৈরিতা কেন? যিশু বলেন, “তোমরা শুনিয়াছ, উক্ত হইয়াছিল, ‘তোমরা প্রতিবেশীকে প্রেম করিবে এবং তোমার শত্রুকে দ্বেষ করিবে’। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে, তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও।” মথি ৫:৪৩-৪৪ পদ। এই সঙ্গে আরও একটি মাত্রা যোগ করে তিনি বলেন, ‘যে তোমার এক গালে চড় মারে, তাহার দিকে অন্য গালও পাতিয়া দেও।’–লূক ৬:২৯ পদ। যিশুর কথা মানলে নিজেদের মধ্যে কেন, মানবকুলের কারও সঙ্গে তো বিরোধ থাকার কথা নয়। আসলে ধর্মের বিভাজন রাজনীতিকে কেন্দ্র করে। সম্পদ আহরণ, রক্ষণ এবং তা ভোগকে কেন্দ্র করে রাজনীতি আবর্তিত হয়। সুতরাং ধর্ম যখন রাজনীতির অনুসঙ্গ হয়ে ওঠে, তখন বিরোধ তো দেখা দেবেই।

জীবনে উন্নতি করতে হলে প্রয়োজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষমতা অর্জন, যাকে EI (Emotional Intelligence) বলে। নিজের আবেগকে সংযত রেখে Social Aptitude বা সামাজিক দক্ষতা অর্জন হচ্ছে, জীবনে সাফল্য লাভের প্রধান শর্ত। অনেক মেধাবী এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি সেটি করতে না পারায় তারা কর্মজীবনে সাফল্য-লাভে ব্যর্থ হন। যিশুর ভালোবাসার বাণী social glue হিসেবে মানুষের সঙ্গে সামাজিক বন্ধন তৈরিতে, পরস্পরকে গেঁথে তুলতে আমাদের সক্ষমতা প্রদান করে। তাছাড়া সমাজে বিবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে তা antidote হিসেবেও কাজ করে। যিশু বলেন, ‘তোমরা যদি আমাতে থাক, এবং আমার বাক্য যদি তোমাদের মধ্যে থাকে, তবে তোমাদের যাহা ইচ্ছা হয়, যাহা করিও, তোমাদের জন্য তাহা করা যাইবে।’ তাঁর কথা অনুযায়ী তাঁকে আশ্রয় করে জীবনযাপন করলে, আমরা জীবনের উপচয় লাভ করি। যিশুর শিক্ষা অনুযায়ী, সম্পদ অর্জনের পেছনে আমাদের লক্ষ্য থাকবে নিরন্ন-হতদরিদ্রের সেবা করা, তাদের মানবিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা। তা না করে আমরা যদি স্বার্থপরের মতো শুধুমাত্র নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের সুখের জন্য চেষ্টা করি এবং দরিদ্র-পীড়িতদেরকে আমাদের অর্থ-বিত্তের অংশীদার না করি, তবে আমরা লক্ষ্যচ্যূত হবো এবং যিশু আমাদের জীবন থেকে তিরোহিত হবেন। এটি সত্য যে, অন্যকে আমাদের অর্জিত সম্পদের অংশীদার করতে গেলে, নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অনিবার্যভাবে বিরোধ তৈরি হবে, যা চিত্তের দৃঢ়তা এবং আদর্শ দিয়ে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিরোধের বিষয় চিন্তা করে যিশু বলেন, ‘তোমাদের কি মনে হয় যে, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি? না, তাহা নয়। ...এখন থেকে এক বাড়ির পাঁচজন ভাগ হয়ে যাবে। তিনজন দুজনের বিরুদ্ধে, দুজন তিনজনের বিরুদ্ধে।’–লূক ১২:৫১-৫২ পদ। অন্যের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করলেই খ্রিস্ট যিশু আমাদের জীবনে স্থায়ী হন। অন্যথায় জীবনের কোনো এক ক্ষণে আমাদের চিন্তা-চেতনার মধ্যে ধরা দিলেও তিনি আমাদের জীবনে স্থায়ী হন না।

অনেকে তাদের জীবনে যে যিশুর আবির্ভাবের কথা বলেন, তা প্রকৃত বা ভ্রান্তিমূলক (delusional) কি না তা বলা কঠিন। একজন পণ্ডিত Buddhist Monk-এর কথা অনুযায়ী, ‘Buddha considered that the faith people gained from seeing miracles usually led them from the path of wisdom rather towards it.’ অর্থাৎ বুদ্ধের মতে, কোনো দৈব ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের যে বিশ্বাস তৈরি হয়, তা আমাদের প্রজ্ঞা অর্জনের দিকে না নিয়ে বরং তা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যিশু আমাদের চেতনায় ধরা দিলেও তার দিন-ক্ষণ বলাটা অত সহজ মনে হয় না। আমাদের চেতনা এবং কাজের মধ্যে যিশু অল্প-অল্প করে (incrementally) প্রকাশ পান এবং তিনি ক্রমান্বয়ে আমাদের জীবনে স্থায়ী হন। অনেকে যিশুকে পেয়েছেন বলে ঘোষণা দিলেও তাদের চরিত্র এবং জীবন দেখলে তার মধ্যে যিশুকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং অনেক তথাকথিত খ্রিস্টভক্তের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ এবং অনৈতিক কাজের অভিযোগ শোনা যায়। কথায় বলে, God has given us salvation, but we don't have the character to retain it. সুতরাং যিশু কবে, কোন তারিখে আমার জীবনে প্রকাশ পেলেন, সেটি বড় কথা নয়; বরং তাঁকে লাভ করার জন্য যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন, তার কতটুকু আমরা অর্জনে সক্ষম হলাম, সেটিই বড় কথা।

লেখক : গবেষক

এসএ/

Header Ad
Header Ad

দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) চ্যানেলটির স্ক্রলে এ তথ্য জানানো হয়।

স্ক্রলে উল্লেখ করা হয়, “অনিবার্য কারণবশত দীপ্ত টিভির সকল সংবাদ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো।”

তবে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা না দেওয়া হলেও জানা গেছে, সাম্প্রতিক এক সংবাদ প্রতিবেদনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকীর কাছে ‘জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ১৪০০ শহীদ’ সংক্রান্ত বিতর্কিত প্রশ্নের জের ধরেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, এ ঘটনায় দীপ্ত টিভির এক সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপ গ্রহণ শেষে খুব শিগগিরই সংবাদ কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

ছবি: সংগৃহীত

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সোমবার গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি জানায় ডিএসসিসি।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, এতে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের অভ্যন্তরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত নকশায় না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ (রেস্টুরেন্ট) পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ভবনের ছাদে অবৈধভাবে রুফটপ রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে, যা জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করায় এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদহানির ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনৈতিক উপায়ে করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে।

ডিএসসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্পদ ও জানমালের ঝুঁকি এড়াতে নকশাবহির্ভূত সব রেস্তোরাঁ এবং ভবনের ছাদে স্থাপিত রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করা হলো। বাতিল করা লাইসেন্স দিয়ে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যেসব রেস্তোরাঁ সঠিক তথ্য না দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে ভবনের অনুমোদন কিন্তু বাতিল করা হয়নি। ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সশরীর উপস্থিত হয়ে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত দিলে সেগুলো সচল করা হবে।’

বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি জানায় ডিএসসিসি। ছবি: সংগৃহীত

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিটি রেস্তোরাঁকে আলাদা করে চিঠি পাঠাব।’

ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা না করেই ডিএসসিসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম চলছে। ব্যবসাগুলো এক দিনে গড়ে ওঠেনি। রাজউকের পাস করা ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ নেই বললেই চলে। বিগত সরকারের সময় এই জটিলতা নিরসনে একটা টাস্কফোর্স করা হয়েছিল। সেই টাস্কফোর্সের দুটি বৈঠক হয়েছিল। তারপর তো সরকার বদল হয়ে গেল।

ইমরান হাসান বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে এখন যদি ডিএসসিসি অভিযানে নামে, তাহলে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি হলে আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর রেস্তোরাঁর অনুমোদন ও অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি সামনে আসে। ওই ভবনে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল, তবে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদন ছিল না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চার বছর আগে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ করে। সেই জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৫২টি। বাকি সব ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন।

রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারীকে সরকারের সাতটি সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয়। রেস্তোরাঁর জন্য প্রথমে নিবন্ধন ও পরে লাইসেন্স নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সব সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে মাত্র ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১২৮টি রেস্তোরাঁ।

Header Ad
Header Ad

মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বান। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ ও জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কমিয়ে এনে মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী শাসনের অবৈধ আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশের অনেক সদস্য জনরোষের মুখে পড়েছেন।” পুলিশকে জনগণের বন্ধু হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা জানান, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ সদস্যদের আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা
সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল
মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো
সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই চার বছর পর সাদমানের সেঞ্চুরি
স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন প্রধান উপদেষ্টার, মাসিক খরচের বিষয়ে যা জানা গেল!
রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডরের বিষয়টি স্পষ্ট করুন: জামায়াত আমির
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন দশম গ্রেড, সহকারী শিক্ষক ১২তম
এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই: উমামা ফাতেমা
আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিল: প্রধান উপদেষ্টা
আত্মসমর্পণ করলেন তারেক রহমানের খালাতো ভাই
চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ল বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট
রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল: ফখরুল
দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শাটডাউন কর্মসূচি
ভারতের সামরিক আক্রমণ আসন্ন,পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি পাকিস্তানের
কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত মার্ক কার্নি
নওগাঁয় ডাকাত দলের ৩ সদস্যসহ ৮ জন গ্রেপ্তার, উদ্ধার লুণ্ঠিত মালামাল
নিজের মূত্র পান করেছিলেন বলিউড অভিনেতা পরেশ রাওয়াল
নাহিদ ইসলামকে বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
কিছু লোডশেডিং না হলে ভর্তুকি বেড়ে যাবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা