মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ ধরে রাখতে পারলেই আমরা খুশি
এবারের বাজেটে একটি কথা এসেছে যে, পাচারকৃত অর্থ বৈধকরণ। আমি এ বিষয়টিকে ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করি, তা হলো অসাধুদের জন্য এটি একটি সবুজ সংকেত।
কিছুদিন আগে মিডিয়াতে এলো রেমিট্যান্স পাঠালেও কোনো প্রশ্ন করা হবে না। প্রশ্ন না তুললে কেউ চুরি করে বাইরে টাকা নিয়ে এবং সেটি যদি রেমিট্যান্স আকারে পাঠায়, তাহলে সরকারি সহায়তা ২% থেকে ২.৫% সেটিও সে পেয়ে যাচ্ছে। তারপর এখনতো ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি টাকা বাইরে নিয়ে গিয়ে আবার সেটি ভিন্নভাবে পাঠালো, পাচারকে বৈধতা দিয়ে যারা পাচারকারী তাদের উৎসাহ দেওয়া এটির কোনো লজিক আমি খুঁজে পাই না।
পাচারকৃত অর্থ বাইরে নিয়ে গিয়ে সে যদি ডিক্লেয়ার করত যে, সে এটি বাইরে নিয়ে গিয়েছিল এবং ফিরিয়ে এনেছে, এখন নরম্যাল ট্যাক্স দিয়ে সে এটি সমাধান করতে চায়। তাহলে হয়ত কিছুটা ঠিক আছে। কিন্তু যদি রেমিট্যান্স আকারে পাঠায়, সেটা প্রশ্ন তুলবে না সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন যেটি হবে—এটি একটি বাণিজ্য হবে। পাচার করা অথবা বাংলাদেশে ভিন্নপন্থায় ফেরত নিয়ে আসা। আরেকটি বিষয়—৫% মূল্যস্ফীতি, আমাদের এখানে ৭% থেকে ৮% এ হয়েই গেছে। সেটি কিভাবে ধরে রাখবে? মূল্যস্ফীতি দেশে দেশে বাড়ছে। আমাদের ৫.৬% এর মধ্যে রাখতে পারলেতো সাধুবাদ।
জিডিপি বৃদ্ধি নির্ভর করছে ইনভেস্টম্যান ও এক্সপোর্টের উপর। বিনিয়োগ ও রপ্তানি যদি ঠিক থাকে, বিদেশি বিনিয়োগ হতে হবে, এসব ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলা আছে। আমরতো মনে হয়, আমরা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে পারিনি। জাপানি অ্যাম্বাসেডর সেটি বললেন। বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র যেখানে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি অর্থাৎ জিডিপি চাহিদা আছে। কিন্তু এটি নিয়ে গুরুত্ব দেখায়নি বাংলাদেশ।
আরও যেটি লক্ষ্যণীয় সেটি হলো, আমাদের রেভিনিউ বাজেট খুব দ্রুত বাড়ছে। এতে যেটি হবে অপ্রয়োজনীয় সংস্থা সৃষ্টি করবে। লোকজন নিয়োগ করবে। তারপরও সরকার আয়তন বড় করছে। গত দশ বছর আগেও রেভিনিউ বাজেট এবং উন্নয়ন বাজেট প্রায় কাছাকাছি ছিল। এখন রেভিনিউ বাজেট অনেক বড় হয়ে গেছে উন্নয়ন বাজেট থেকে। সরকারি সংস্থা যেগুলো চলে না। জোর করে ভর্তুকি দিচ্ছে, বেতনভাতা দিচ্ছে, আর ব্যুরোক্রেসিতে সাইজ বড়। সবাই প্রমোশন পাচ্ছে, বেশি বেতন ভাতা, বোনাস এই আর কি সবমিলিয়ে।
অন্যদিকে মানুষের জন্য ট্যাক্স একধরনের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া আর কি। তবে মূল্যস্ফীতি ৫.৬% এ ধরে রাখতে পারলেও আমরা খুশি।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরএ/