বাজেটে শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে
বাজেট হচ্ছে একটি দেশের পুরো বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব নিকাশ। বাজেটের ভালো এবং মন্দ দুটি দিকই আছে। আমাদের দেশে যেটি হয়, বাজেটের সাথে আমরা পলিসিগুলিকে মিলিয়ে গুলিয়ে ফেলি। বাজেটে নতুন করে আয় ব্যায়ের হিসাব নিকাশের বিষয়টি ছাড়া পলিসিগুলি কিন্তু আগে থেকেই থাকে। মূলত পলিসি অনুযায়ী আয় ব্যয়ের সিদ্ধান্তটি এই সময়ে হয়।
কোভিড পরবর্তী সময়ে আমাদের জাতীয় নীতিতে আমাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে দারিদ্র বিমোচন। কোভিডের সময়ে যারা দরিদ্র হয়ে গিয়েছিল, অনেকে হয়তো ফেরত গিয়েছে দরিদ্র অবস্থা থেকে। অনেকে তাদের কর্মসংস্থানে ফেরত যেতে পারেনি, তাদের জন্য কর্মসংস্থানটিতো খুব গুরুত্বপুর্ণ। সেজন্য সরকার কাজে কর্মে বেসরকারি খাতকে যতবেশি উৎসাহিত করা যাবে তত বেশি কাজের সুযোগ তৈরি হবে। কাজেই এবারের বাজেটটি কোভিড রিকভারি বা কোভিডের প্রকোপ থেকে যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সেটিকে মাথায় রেখে করতে হবে। সে কারণেই স্বল্পকালীন এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন, বিশেষ করে অতি দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের যে কর্মসূচি থাকে, সেগুলিতে বরাদ্দ দিতে হবে। শহর ও গ্রাম উভয়ক্ষেত্রেই এটি দিতে হবে।
এখনো কোভিডের যে প্রকোপ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সামনে রেখেই সরকারের সাপোর্ট দরকার হবে। সেক্ষেত্রে বাজেটের যে বরাদ্দ সরকার থেকে দিতে পারে, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ করে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, অনলাইন কেনাবেচা সেগুলিতে অংশ নেওয়া,তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সরকার বরাদ্দ রাখতে পারে। একইসাথে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনে সক্ষম এবং যারা বিদেশে রপ্তানিতে সক্ষম, তাদেরকে সেভাবে ট্রেইল আপ করা দরকার ,তাদের দক্ষতা উন্নয়ন আইটি স্কিল্ড বাড়ানো এগুলিকে মাথায় রেখেই সরকারের বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে।
২০২৬ এ আমরা স্বল্প উন্নত দেশের তালিকা থেকে বেড়িয়ে যাবো। কাজেই এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতিটা চলতে হবে। কোভিডের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সাথে সাথে বাজেটের বরাদ্দ থাকতে হবে। স্বল্প উন্নত দেশের তালিকা থেকে আমরা ২০২৬ সালে আমরা যখন বেড়িয়ে যাবো, তখন কিন্তু বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা আমরা পাবো না। সেক্ষেত্রে আমরা কতটা কম্পিটিভ থাকতে পারি সেজন্য আমাদের রাস্তাঘাট কতটা উন্নত, আমাদের কাস্টমস কতটা উন্নত, সেগুলিকে মাথায় রেখে আমাদের বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে এবং গবেষণার জন্যও আমাদের বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে।
বাজেটে যেহেতু আমরা ব্যয়ের দিকগুলির কথা বলছি, সেক্ষেত্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাপারটি কিন্তু এমন না যে কোভিড কমেছে বলেই স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। বরং কোভিডের সময়ে আমাদের যে উপলব্ধি,বাজেট বরাদ্দ অপ্রতুল, যতটুকু হয়, সেটিও সঠিকভাবে ব্যবহার হয় না, সেই বরাদ্দটুকু মাথায় রেখে আমাদের স্বাস্থ্যখাতে গত বছরের যে বরাদ্দ ছিল সেটি কতটুকু ব্যয় হল, সেটির জন্য একটি পর্যালোচনা থাকা উচিত। আগামীতে এই কোভিডকালীন সময়ে প্যান্ডামিক সময়ে সারাদেশের যে একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রস্তুতি, সেটি শুধুমাত্র শহরকেন্দ্রিক না, উপজেলা পর্যন্ত এ ধরণের অবস্থা মোকাবেলার প্রস্তুতি থাকতে হবে। যেখানে ডাক্তার থাকবে নার্স থাকবে, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থাকবে, সেই লক্ষ্যেই বাজেট করা উচিত। স্বাস্থ্যখাতে ডাক্তার,নার্স,কর্মী ইত্যাদি নিয়োগবৃদ্ধির জন্য আমাদের বরাদ্দ থাকতে হবে।
একইভাবে শিক্ষাখাতকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে অবশ্যই। কোভিডকালীন সময়ে দেশের শিক্ষার্থীরা দুই বছর স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে দূরে ছিল। কাজেই অবধারিতভাবেই তাদের শিক্ষাদান এবং শিক্ষাগ্রহণ বিঘ্নিত হয়েছে অনেক। অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কানেক্ট করার চেস্টা করা হয়েছে। তবে এতে করে তারা কিছুটা উপকৃত হলেও সব শিক্ষার্থী অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে পারেনি। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে বলতে হবে। স্কুল কলেজগুলোতেও প্রইয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ছিল অপ্রতুল। এসব ব্যাপারে আরও বেশি নজর দিতে হবে। তাছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিকমানের করে গড়ে তুলতে হলে টেকনোলজির উপর গুরুত্ব আরোপ করা জরুরি। অতীতের মতো যেকোন প্যান্ডামিক মোকাবেলায় আমাদের সর্বোতভাবেই প্রস্তুত থাকতে হবে। কাজেই শিক্ষাখাতকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।
লেখক: (বিআইডিএস)-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ