তেলের সংকট দীর্ঘস্থায়ী নয়, ঋণ নিয়ে সতর্কতা জরুরি
রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে দেশে সয়াবিন তেলের বড় ধরনের সরবরাহ আসত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে তেল সংকট আরও বেড়ে গেছে। আমদানিকারক, যারা পাইকারি বিক্রেতা, তারা এই সুযোগটা নিয়েছে। দাম বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে এটির সমাধান হবে বলে মনে হয় না। এটি ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। নতুন কোনো পরিবর্তন যখন আসে, তখন মানুষের মধ্যে এমনিতেই নাই নাই একটা হাহাকার তৈরি হয়। তারপর মানুষ একসময় সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নেয়।
সয়াবিন এক ধরনের কমোডিটি। এর বিকল্পও আছে। যেমন–সরিষা আছে, পাম আছে, সূর্যমুখী আছে ইত্যাদি। দুষ্কৃতিকারীরা আগেও যেমন এসব অপকর্ম করেছে, এখনও করছে। লিটার প্রতি তেলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সরকার থেকেও তেমন জোরালো কোনো নজরদারি নেই। অন্যায় করার ক্ষেত্রে প্রশ্রয় করে দেয় বিভিন্ন মহল। তবে লোকজন অর্থাৎ কনজিউমার বা ভোক্তারা যদি ব্যবহার কমিয়ে দেন, এটি একটি সমাধান হতে পারে। এটিতো আর লবণ না যে, তরকারিতে খেতেই হবে। ভোজ্যতেলের বিষয়ে সেটি করা যেতে পারে। ভোজ্যতেলের ব্যাপারে বাজার মনিটরিং ভোক্তা অধিদপ্তর করছে। সেটি যথাযথ ও জোরালোভাবে করা দরকার।
অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে যেটুকু বলা যায়, আরও বেশি পরিমাণে লাইসেন্স ইস্যু করা যেতে পারে, যারা চায় আমদানি করতে, রিফাইনিং করতে বা বাজারজাত করতে। এটি সরাসরি করতে পারে বাইরে থেকে না আমদানি করেও। এগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। কোনো ধরনের বাধা থাকা উচিত না। লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া তো ভোক্তাদের উপরে জুলুম। তাদের কষ্ট বাড়ছে কি না। খরচ কত বাড়ছে? এগুলো দেখতেই হবে। কোনো প্রতিবন্ধকতা যদি না থাকে। তারপর চারদিক থেকে যখন আসা শুরু করছে তখন দাম কমে গেছে। সুতরাং এটি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবার কিছু নেই। সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির ব্যাপারটি সবক্ষেত্রেই হয়। এটি চালের ক্ষেত্রে হয়, বিভিন্ন ধরনের খাবারের ক্ষেত্রে হয়, কিছুদিন আগে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে হয়েছে।
তা ছাড়া আরও একটি বিষয় হলো–কোভিডের কারণে থমকে গেছে অর্থনীতি। চাইনিজ ইকোনমি স্লো ডাউন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র স্লো ডাউন হয়েছে। বাংলাদেশ এখনো ভালো অবস্থানে আছে। এর দুটি কারণ হলো–এক কোটিরও বেশি মানুষ বিদেশে আছে। প্রতিবছর ২৬ বিলিয়ন ডলার তারা দেশে পাঠাচ্ছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিও একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। নেপাল বা শ্রীলঙ্কার অবস্থা ভিন্ন। নেপালের অর্থনীতি নির্ভর করে পর্যটনের উপর। শ্রীলঙ্কার অবস্থা আরও ভয়াবহ।
তবে আরও একটি বিষয়ে সাবধানতা জরুরি–বিদেশি ঋণ। সরকার যেন যত্রতত্র বিদেশি ঋণ না নেয়। যারা ঋণ বিক্রয় করে বেড়াচ্ছে, তাদের খপ্পরে যেন না পড়ে যাই আমরা। সেটি বিশ্ব ব্যাংক হোক, এডিবি হোক, আইএমএফ হোক, বা কোনো কমার্শিয়াল ব্যাংকেরই হোক–এগুলো এভয়েড করতে হবে এবং সাবধান থাকতে হবে। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এটি দরকার।
এখন যেসব ঘটনা ঘটছে, ব্যবসায়ীদের দৌড়াত্ম্য বৃদ্ধির কারণ কিছু লোকের হাতে বাজার চলে যাওয়া। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু কোম্পানি একে-অপরের সঙ্গে হাত মেলায়। এখন বিদেশে প্রতিযোগিতামূলক বাজারকে উন্মুক্ত করে দেওয়া। অন্যকে প্রবেশ করতে দেওয়া। আরেকটি উপায় হলো–সরাসরি বলে দেওয়া–তোমাদের আমরা মনিটর করব। তোমাদের খরচ কত পড়ে? তোমরা মার্কেটিং কীভাবে করো? তোমরা আরতদারি করছ কি না। এই দুটিই করতে হবে। সরকারও কিন্তু জনস্বার্থের বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহী নয়। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দৌড়াত্ম্য। সংকটের কারণ হিসেবে এই দুটোই দায়ী। এত যদি লাভ থাকে তাহলে অন্যদের লাইসেন্স দিয়ে দিলে ক্ষতি হয় না। অপব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি থাকার তো কোনো মানে হয় না।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এসএ/