মনোয়ার হোসেন
লক্ষ্যে যাত্রা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট বিশাল। ১৯৫২ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত সময়কালে ছোট-বড় এত ঘটনাবলি রয়েছে যেগুলোর মাপ-পরিমাপ একটিমাত্র মানদন্ড ব্যবহার করে এককভাবে নির্ধারন করা খুবই দূরূহ ব্যাপার। তবে বিভিন্ন চিন্তাকোষের এবং ইতিহাস গবেষকদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে সমস্ত ঘটনাবলি একসূত্রে গাঁথার।
স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের ক্যানভাসও বিশাল। এত ঘটনাবলী মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং এর রাজধানী নয়াদিল্লীতে, কয়েক হাজার মাইল দূরের বিলাত ও আমেরিকায় ঘটেছে যার পরিসংখ্যান বের করাও দুরূহ ব্যাপার। মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ করে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, ক্যাম্প বা আস্তানা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একক বা সমষ্টিগভাবে গড়ে উঠা গ্রুপ, দেশাভ্যন্তরে এবং প্রতিবেশী অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ প্রভৃতি বিষয়ে সার্বিকভাবে জানা এখনো সম্ভব হয়নি।
সুখের বিষয় কোন কোন চিন্তাকোষ ও গবেষক মুক্তিযুদ্ধের ক্যানভাস কতবড় তা জানার প্রচেষ্টায় রয়েছেন এবং সময় সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেকেরই নিজস্ব বৃত্তান্ত প্রকাশ পাচ্ছে। এগুলো থেকে মুক্তিযুদ্ধের ক্যান্ভাসও যে বিশাল তা প্রতীয়মান হচ্ছে। এখানে উল্লেখ করা সংগত হবে যে,মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে শহরের যুব-তরুণদের চাইতে গ্রামাঞ্চলের জনমানুষের অংশগ্রহণ বহু বেড়ে যায়।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সবিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আহবানে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানীরা তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ থেমে থাকেনি, দিনে দিনে তীব্র হয়েছে তাঁরই নামে। ২৬ মার্চ ৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর’ ৭১ অর্থাৎ যতদিন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ চলেছে ততদিন পাকিস্তানী কারাগারে থাকলেও মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি সবসময় মুক্তিযোদ্ধাদের মন মানসে ছিলো। যেকোনো বিবেচনায় যা ছিলো অনন্য সাধারণ।
২৫ মার্চ একাত্তর এর সকাল ছিলো উত্তেজনা পরিপূর্ণ। সর্বত্র মিটিং মিছিল তো ছিলোই সেই সাথে ছিল আশাবাদ যে দুই একদিনের মধ্যেই ভুট্টোর কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট কেটে যাবে এবং বাংলাদেশ বৃহত্তর স্বায়ত্বশাসন পাবে।
কিন্তু সেদিন বিকালের পর থেকেই সার্বিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। একটা গুমোট ভাব, অনিশ্চয়তা সেই সাথে আশংকা ঢাকা শহরের সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়। সর্বত্রই একটা প্রশ্ন শোনা যায়, ইয়াহিয়া খান কি বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে? শুধুমাত্র বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-যুব জনতা যারা দেশ স্বাধীন করার দৃপ্ত শপথ নিয়ে অস্ত্রধারণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ও প্যারেড করছিল, তাদের মধ্যে কোন রকম ভাবান্তর লক্ষ্য করা যায়নি।
বিকাল চারটা সাড়ে চারটা হবে,আমি তখন পুরানা পল্টনে শ্রমিকলীগ অফিসে উপস্থিত ছিলাম। খবরাখবর পাওয়ার জন্য ঐ অফিসটি একটি ভালো স্থান বা কেন্দ্র ছিলো। এমন সময় মান্নান সাহেব যিনি ওয়াপদার মান্নান হিসাবে পরিচিত ছিলেন, তিনি আসলেন। তিনি উপস্থিতদের মধ্য থেকে দুই একজনকে আলাদা ভাবে ডেকে নিয়ে কিছু বললেন। আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন আজ মিলিটারি হামলা করতে পারে। দূরে কোথাও চলে যাও, গোপনে থাকো। এর কিছুক্ষনের মধ্যে অফিস ফাঁকা হয়ে গেল।
মাথার মধ্যে নানারকম চিন্তা ঘুরপাক করছিল। এই অবস্থায় ঢাকার তখনকার এক শহরতলীতে যাবার জন্য রাস্তায় নামলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে তখন অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। রাস্তায় সাধারণ যানবাহন বলতে কিছুই ছিলো না। কোনক্রমে একটি রিক্সায় ফার্মগেট পর্যন্ত এসে, বাকিপথ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরলাম।
রাত্রে একরকম ধাক্কা দিয়ে মা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বললেন শহরে বোধহয় ভীষণ গোলাগুলি হচ্ছে। তখন রাত ১২টা হবে। ঘর থেকে বেড়িয়ে বারন্দায় এসে খেয়াল করলাম দক্ষিণ দিকের আকাশ আলোময়। প্রচন্ড গোলাগুলির আওয়াজ ভেসে আসছে। প্রচন্ডতা এত বেশী যে মনে হচ্ছে খুব সামনেই গোলাগুলি হচ্ছে। বুঝলাম পাকিস্তানী সেনারা ছাউনি থেকে বেড়িয়ে এসে নিরীহ জনগনের উপর আক্রমন চালিয়েছে। সারারাত ধরেই গোলাগুলির আওয়াজ আর মাঝেমাঝে মেশিনের ঘর্ঘর আওয়াজ পাওয়া গেল। বুঝলাম বিকালে শ্রমিকলীগ অফিসে মান্নান সাহেব এই কারণেই আমাদের দূরে কোথাও চলে যেতে গোপনে থাকতে বলেছিলেন। ফোন করার চেষ্টা করে দেখা গেল টেলিফোন কাজ করছে না। রেডিও তখন বন্ধ।
২৮মার্চ কয়েকঘন্টার কারফিউ বিরতি দেয়া হয়। বাড়ীতে বসে থাকার উপায় ছিলো না। নেতা সহকর্মীরা কে কোথায় কোন অবস্থায় আছেন তা জানার তাগিদে বেরিয়ে পড়লাম। মহাখালি রেলক্রসিং এ একজন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীকে দেখলাম একটা গাড়িতে তিনি শহরের দিকে যাচ্ছেন। তেঁজগাও থানার পর থেকে সদর রাস্তায় খালি ধ্বংসের চিহ্ন। স্বল্প পরিসরে যার বর্ণনা সম্ভব নয়। বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত এসেও কারো কোন খোঁজ খবর না পেয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছি এমন সময় একটি ছেলে (নাম মনে নাই, সে আমাকে চিনতো) কাছে এসে “নদীর ঐ পারে গেলে পাবেন” বলেই চলে গেলো। কি করবো ভাবছি এমন সময় শোনা গেলো কারফিউ বিরতি বাড়ানো হয়েছে। বাড়ীর দিকে রওয়ানা দিলাম।
এপ্রিলের মাঝামাঝি বিভিন্নভাবে খবর পাওয়া গেলো ঢাকা থেকে ত্রিপুরা যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি রুট চ্যানেল কাজ করছে। তবে নিদৃষ্ট কয়েকজন ছাড়া অন্যদের পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। এই পুরো সময়টাই একেবারে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নভাবে লুকিয়ে ছিলাম। বহু চেষ্টা করে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠীকে পাওয়া গেলো। সৌভাগ্যক্রমে সে এক ব্যক্তিকে জানতো যে নিজে একটা চ্যানেল অনুসরন করে ইতিমধ্যেই ঢাকা-ত্রিপুরা (আগরতলা) যাওয়া আসা করছে। সহপাঠীর মাধ্যমে সেই ব্যক্তিকে একদিন বাসায় দাওয়াত দিয়ে আনলাম। তিনি ঢাকা শহর আওয়ামীলীগের একজন উঁচুস্তরের কর্মী ছিলেন। তিনি আমাকে অনায়াসে চিনলেন। জিজ্ঞেস করলেনট,যাবেন নাকি। সম্মতি জানাতে তিনি বললেন যে রুটে যাই এখন সেখানের পরিস্থিতি কি রকম খবরটা নিয়ে জানাবেন। কয়েকদিন পর আমার সহপাঠির মাধ্যমে কবে কোথায় কখন আসতে হবে তা জানালেন। আরো জানালেন কোন রকম বাক্স পেটরা নেয়া যাবে না। সাধারণ পোষাকে আসতে হবে। তবে আমি একটি এয়ারব্যাগে কিছু কাপড়, নিত্য ব্যবহার্য জিনিষপত্র নিয়েছিলাম। ভাবটা এরকম যেন পরিস্থিতির কারণে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ীতে যাচ্ছি।
মে মাসের প্রথম দশদিনের একদিনে তাঁর সাথে মিলিত হলাম সদরঘাটের পোস্ট অফিসের সামনে। আমরা কেউই কারোর জন্য অপেক্ষা করিনি। চোখাচোখি হতেই আলতোভাবে হাত উঠিয়ে তাঁকে অনুসরণ করতে বললেন। সাহস থাকা স্বত্বেও বুক দুরুদুরু করছিল। পায়ে হেঁটে সুত্রাপুর পুল পার হয়ে পোস্তাগোলায় একটা রিকসা করে গেলাম। সেখান থেকে রাস্তা ছেড়ে কাঁচা হাটাপথে একটা জায়গায় পৌঁছলাম নদীর ধারে একটা গুদারা ঘাটের মত জায়গায় যেখানে একটিমাত্র মাঝারি আকারের ছৈ অলা নৌকা ছিল। এমনভাবে আড়াল করছিল যা সহজে চোখে পড়ে না। আমরা নৌকায় উঠতেই কোথা থেকে হঠাৎ করে এক বলশালী লোক এসে নৌকার দাঁড় বইতে শুরু করলো। বুঝলাম আগে থেকেই সব ঠিক করা ছিল। পাগলা ঘাটের অনেকটা পূর্বে আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে নৌকাটি আমাদের সামনে দিয়েই চলে গেলো। আমরা দুইজন হেঁটে প্রায় আধামাইল গিয়ে আরেকটা নৌকায় উঠলাম। এই নৌকায় পাল ছিলো। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
সারারাত নৌকা চলল। পরদিন দুপুর নাগাদ নৌকার বড় মাঝি বললো দাউদকান্দি ঘাট বা তার আশেপাশে নৌকা ভিড়ানো যাবে না। যেতে হবে আরো উত্তরে। কোনদিক দিয়ে যাচ্ছি সে ব্যাপারে আমার কোন ধারণা ছিলো না। যার সাথে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছি তিনি বললেন হোমনা বা বাঘরাবাদের ধারে কাছে নামা যাবে কি না। নৌকার বড় মাঝি বললেন আমরা আপনাদের মত শহরের লোকদের পারাপারের জন্যই রয়েছি। যেখানে বলবেন সেখানে নামাব। বুঝলাম ঢাকা-আগরতলা যাতায়াতের যে রুট বা চ্যানেল দিয়ে যাতায়াত হচ্ছে এই নৌকা এবং এর মাঝি সে প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত। রাতে মাঝিদের রান্না করা গরমভাত ও ডাল খেয়েছিলাম।
প্রায় পঞ্চাশ বছর পর এ বিষয়ে লিখছি। শুধুমাত্র স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করে। শত চেষ্টা করেও স্থান বা পথের বহু নাম মনে করতে পারছি না। কাজেই স্থান, পথের নাম বা সময়ের হেরফের হতে পারে। মুফাক্কার যার সাথে এসেছি, বললেন এখান থেকে চিত্তরা বা কসবা, চেষ্টা সুবিধা হয়, সেখানে যেতে হবে। এটা একটা বিকল্প রুট যার সাথে আমি নিজেও পরিচিত নই। উল্লেখিত অঞ্চলে মিলিটারির যাতায়াত প্রচুর। কাজেই অল্প সময়ে যেতে পারা যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। আমরা গ্রাম্য পথে হাঁটা দিলাম।
পরবর্তী প্রায় দুইদিন নানাবিধ বিপদ ও ঝুঁকি এড়িয়ে একটা সড়কের পাশে এসে দাঁড়ালাম। এই সড়ক সিলেটের দিকে গেছে। মাঝে মাঝে সামরিক ট্রাক ও সৈন্য চলাচল করছে। প্রায় দেড় ঘন্টা সড়ক দেখা যায় কিন্তু আমাদেরকে সড়ক থেকে দেখা যায় না এমন একটি স্থানে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করতে হলো বিকালের দিকে যখন সড়কে আর কোন যানবাহন চোখে পড়লো না তখন দৌড়ে রাস্তা অতিক্রম করে পূর্বদিকে যেতে থাকলাম। সাথে একটি মাত্র এয়ারব্যাগ ছাড়া অন্য কোন কিছু না থাকায় কাজটি সহজ হলো। হেঁটেই চলেছি কতক্ষণ ধরে তা স্মরণ নেই। আমার সমস্ত অনুভুতি শেষ হয়ে গেছে। একটা ঘোড়ের মধ্যে ছিলাম। সহযাত্রী বললেন আমরা ত্রিপুরায় চলে এসেছি, আগড়তলা সামান্য দূরে। এটুকু মনে আছে সে রাতে বিস্তারিত ক্ষেতের মাঝে অবস্থিত একটা চালা ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলাম।
সকালবেলা যতখানি সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে আগড়তলা শহরে আমার স্কুলের সহপাঠি সঞ্চিতদের বাড়িতে উঠলাম। ওঁর সাথে যোগাযোগ ছিলো। সে তো বিস্ময়ে হতবাক। তারপর কোলাকুলি। আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। ওকে সবকিছু খুলে বলার পর বললো যতদিন খুশি থাক। আমার তরফ থেকে এ ব্যাপারে অসুবিধা হবে না। তবে কয়েকদিন রাস্তায় যাওয়া চলবে না। আমার সহযাত্রী আগেই চলে গিয়েছিলেন তার গন্তব্যে।
পাঁচ ছয়দিন সম্পূর্ণভাবে ঘরবন্দি থাকার পর একদিন গৃহকর্তাকে বললাম এখন তো খোঁজ খবর নেয়া দরকার আগরতলায় কারা এলো। একমাত্র ট্রানজিস্টার রেডিও ছাড়া এতদিন আর কোন মাধ্যমেই কোন রকম খবর পাওয়া যায়নি। ও বললো যা,পরিচিত কাউকে পাস কি না দেখ; আর আমার এখানে আছিস এটা বলার দরকার নেই। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর লোক এসেছে।
প্রথমদিন আগরতলা শহরটা ঘুরলাম। আমি তিনশ টাকা নিয়ে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছিলাম। পথে বিভিন্নভাবে প্রায় আশি টাকা খরচ হয়েছে। দুপুর বেলা এক দোকানে খেলাম। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর লোক এসেছে। কিন্তু পরিচিত কোন মুখ দেখলাম না। আমি যার সাথে এসেছিলাম সেই মোফাককরকেও চোখে পরলো না। শুনলাম এখানে বহু ঘরবাড়ি, বোর্ডিং, হোটেল, সরকারি বাংলোতে বাংলাদেশ থেকে আগত অনেকে থাকেন।
দ্বিতীয়দিন আসম রব এবং আরো কয়েকজন ছাত্রনেতার সাথে দেখা। তারপর দিন কুদ্দুস মাখন কে দেখলাম। কয়েকদিন পর শুনলাম শেখ মনি এসেছেন। কিন্তু তিনি কোথায় থাকেন তা জানতে পারা গেল না। শ্রমিকলীগের কোন নেতাকর্মীর সাথে দেখা হলো না। কয়েকদিন পর শুনলাম রুহুল আমিন ভুঁইয়া, আব্দুল মান্নান এবং মোহাম্মদ শাহজাহান এক সরকারি বাংলোতে অবস্থান করছেন। শহরের ভিতরেই সেগুলোর অবস্থান হওয়ায় খুঁজে বের করতে অসুবধিা হয় নি। পাওয়া গেল শুধু রুহুল আমিন ভূঁইয়াকে।
তিনি খুব খুশি হলেন। কবে, কিভাবে এখানে এসেছি জানতে চাইলে বললাম, আগরতলাতে কোন নাম রেজিষ্ট্রি করেছি কিনা, বর্ডার পোষ্টে নাম লিখেছি কিনা জানতে চাইলে না বললাম। তিনি বললেন এখানে সবাই মুক্তিযুদ্ধ করতে এসেছে তবে বিভিন্ন গ্রুপ বা দলে বিভক্ত হয়ে। আমরা বিএলএফ এর সাথে আছি। আপনি আমার টিমে প্রশিক্ষক থাকবেন। অপরিচিত কাউকে কিছু বলবেন না। পরিচিত হলে বলতে পারেন। আর কথাবার্তা যত কম বলবেন ভালো। সাবধানে থাকবেন। আমি চলে যাচ্ছি। আমি শ্রমিকদের জন্য একটি প্রনোদনা মুলক ক্লাস বা মেটিভেশন ক্লাস নিয়মিত ভাবে করাতে চাই। এর দায়িত্ব আপনাকে আপাতত নিতে হবে। শ্রমিকরা যারা এখানে এসেছে তারা যুদ্ধ কেন সে বিষয়ে কিছুই জানে না। এই দিকটি খেয়াল রেখে আপনি ক্লাস নেবেন।
কয়েকদিন পর তাঁর এক সহকারী এসে শহরের প্রান্তে একটা পাঠশালার টিনের ঘর দেখিয়ে দিয়ে বললেন এখানেই প্রতিদিন বিকালে ক্লাস নেবেন। আপনার ‘ছাত্ররাই’ আপনার কাছে আসবে। কয়েকটি ব্যাচে মোটিভেশন হবে। ছাত্রদের তালিকা দেয়া হবে। এই প্রঙ্গনে সকালে রাইফেল চালানোর ট্রেনিং হতো। একজন হাবিলদার বিভিন্ন গ্রুপকে অস্ত্রচালনা শেখাতেন বলে শুনেছি।
ক্লাস নেয়া ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত অনেক কাজ করতে হয়েছে যার বর্ণনা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
আগরতলায় অবস্থানরত ছাত্র যুবক স্মরনার্থীদের একটা বিরাট অংশ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্যই এসেছিলেন। বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে ছিলো মুক্তিবাহিনী ও বিএলএফ। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ছোট বড় অনেক গ্রুপ ছিলো। তাদের ট্রেনিং ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে। প্রধান বিষয় ছিলো দেশ স্বাধীন করতে হবে। ১৬ ডিসেম্বর সেই অভীষ্ট লক্ষ্যই অর্জিত হয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক।