মরিয়া হয়ে খেলছে খেলারামরা
ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে সড়ক ও নৌ-পরিবহন খাতে ভাড়া বৃদ্ধির অসহনীয় বোঝা জনগনের উপর চাপিয়ে দিতে সফল হয়েছে মাফিয়া চক্র। এতে সকল স্তর ও পেশার মানুষ বিরক্ত, বিক্ষুব্ধ। আর এ বিষয়টি সরকারের বিফলতার একটি মনুমেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বিশাল ক্ষোভের ছোট প্রকাশ ঘটেছে কেবল রাজধানীর সড়কে ছাত্রদের কারণে। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, ছাত্রদের এই ক্ষোভ কখনো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে না। বরং বাসভাড়া নিয়ে ছাত্রদের ক্ষোভ ও আন্দোলন দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য খেলারামরা মুখিয়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমরিকার তৎপরতা। যে আমেরিকা জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের প্রতি বৈরী। বাংলাদেশের মানুষ জানে, এর পিছনে আমেরিকার বৈরিতা রয়েছে। আর এই বৈরিতা নতুন কোন বিষয় নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার এই বৈরিতার মেয়াদ ৫০ বছরেরও বেশি। এর সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে কয়েক সদস্যের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। উল্লেখ্য, ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব ও এর ছয়জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’
পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, এ নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে, আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও বাংলাদের রাজনীতি নিয়ে খেলার একটি অংশমাত্র। যে খেলার দিকে বাসভাড়া নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে শুরু থেকেই। ফলে বাস ভাড়ার থেকে শুরু করে আমেরিকার কথিত নিষেধাজ্ঞা গভীরভাবে বিবেচেনায় নেয়া প্রয়োজন। আর সড়কে প্রকাশিত ক্ষোভের সঙ্গে নৌ-পরিবহন খাতে অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধি চরম জনক্ষোভের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন সরকারের নীতি নির্ধারকদের।
সড়কের মতো নৌ-পরিবহন খাতের বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ হয়নি। এর অর্থ এই নয় যে, এ নিয়ে কোন ক্ষোভ নেই। বরং এ নিয়ে আছে চরম জনক্ষোভ। তবে তা এখনো তেমন আলোচনায় আসেনি। সড়কে মাফিয়াদের খামখেয়ালীর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে। আবার এই আন্দোলনের ভিতর রাজনীতির অন্যখেলাও চলেছে, চলবে। ফলে সচেতন মহল উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি সুবিবেচনা প্রসূত হয়নি। তাদের মতে, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি রাজনীতির খেলা সহজ করে দিয়েছে। যার অতি সামান্য প্রকাশ ঘটেছে সম্প্রতি সড়কে।
অনেকেই মনে করেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির খেলা এরই মধ্যে প্রায়ই ক্লাইমেস্কে পৌছে গেছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে করা হচ্ছে, সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে পরিস্থিতি। কিন্তু বিষয়টি অত সরল হিসেবের নয় বলে মনে করেন অনেকেই। যেমন বলা হয় সরল অংক অত সরল নয়!
রাজনীতির খেলার প্রসঙ্গে একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। সড়কে ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে রাজনীতির যে খেলা হয়েছে সেটিই একমাত্র খেলা নয়। খেলা কিন্তু চলছেই। যে খেলার সূচনা হয়েছিলো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই। আওয়ামী লীগের একটানা সরকারদের মেয়াদ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে ততই মরিয়া হয়ে উঠেছে খেলারামরা। এবং আগামী সংসদ নির্বাচন যত নিকটবর্তী হবে রাজনীতির খেলা ততই জোরালো হবে।
খেলারামরা এতোটাই মরিয়া যে, এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের সাম্প্রতিক উক্তি বিবেচনায় রাখছেন সচেতন মহল। এখন ভালো হয় যদি ক্ষমতাসীনরা এটি বিবেচনায় নেন। কারণ মনে রাখা প্রয়োজন, ক্ষমতাসীনদের প্রতি বৈরী শক্তিসমূহ অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় অধিক সংগঠিত। তারা খেলছে মরিয়া হয়ে। আর বলাই তো হয়, ‘খেলারামরা সব সময়ই খেলে।’ পার্থক্য কেবল মাত্রার। যে খেলার মাত্রা সাম্প্রতিক সময় বেশ ঊর্ধমুখী!
লেখক: আলম রায়হান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক