পরিবর্তনের জন্য দরকার সামগ্রিকভাবে জনসচেতনতা
আমাদের দেশের জনগণ সর্বংসহা। তাদের ধৈর্য্যের শেষ নেই। কতিপয় দুষ্ট কুচক্রী মহলের অপরাধের ভোগান্তি ভোগ করে চলেছে দেশের সাধারণ অসহায় মানুষ। রমজানের সময় দ্রব্যমূল্যের দাম লাগামহীন হয়ে যায়। যেখানে দ্রব্যমূল্য কমানো অথবা স্থিতিশীল রাখা উচিত, সেখানে এরা দাম বাড়িয়ে দেয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে দেয়। অথচ এদেশে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মুসলমান হলেও এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় গুণাবলির লেশমাত্র আচরণে নেই। ফলে দেখা যায় সম্পুর্ণ উল্টো চিত্র। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া, আয় কমে যাওয়া, কর্মসংস্থান কাটছাঁট করাসহ জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়া ইত্যাদি এখন জনগণের প্রতিদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে মানুষের ভোগান্তি বেশি। অনেক সময় দেখা যায়, যারা বয়স্ক কিংবা নারী তাদের উপর প্রভাবটা বেশি। বাংলাদেশে রোজার সময় যে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়, এটি এমন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে–তা যেন স্বতঃসিদ্ধ। কোনো ভয়, ডর, লজ্জা নেই। বিবেকের দংশন নেই। বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতির একটি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের বাজারে। তবে এটিও সত্যি যে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না বাড়লেও বাংলাদেশে বাড়বে। কেন? এটি ভাবার বিষয়।
বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা নেই বলা যায়। জনগণের স্বার্থসুরক্ষা অর্থাৎ ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করার কেউ নেই। সহজ কথায় জনগণের পক্ষ হয়ে কাজ করার কেউ নাই। বিষয়গুলো আমাদের ভেতর নিরাশার জন্ম দেয়।
এখন জিনিসপত্রের অকারণ দাম বাড়িয়ে যদি কিছু গোষ্ঠী মুনাফা করতে চায়, তাহলে তারা সেটি খুব সহজেই করতে পারে। বলতে কষ্ট হয়–সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান কিন্তু জনগণের পক্ষে সেভাবে কাজ করে না। তারা বরং যেসব গোষ্ঠী দাম বাড়ায়, তাদেরই সুবিধা করে দেয়। এগুলোর খারাপ প্রভাব পড়ে, পড়ছে এবং আরও পড়বে জনগণের উপর। এসবের কারণে মানুষের পুষ্টিমান কমবে। জীবন যাত্রা সংকীর্ণ হবে।
সেই সঙ্গে ঋণগ্রস্থতা বাড়বে এবং অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। উৎপাদনশীলতা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পুষ্টি ক্ষতিগ্রস্থ হলে, উৎপাদনশীলতা কমে গেলে, স্বাস্থ্যসেবা যদি জনগণ গ্রহণ করতে না পারে, তখন সেটি সামগ্রিকভাবে জাতীয় ক্ষতিতে পরিণত হয়।
সবকিছু মিলিয়ে আমাদের সামনে হতাশাই বেশি। প্রত্যাশা কমে আসছে। প্রত্যাশার জায়গাটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর জন্য যারা দায়ী, তারা যখন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়, তখন জনগণের জন্য সরকারের দায়বোধ নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। অর্থনীতির উপর এটির সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে।
এই অবস্থা থেকে পরিবর্তনের জন্য দরকার সামগ্রিকভাবে জনসচেতনতা। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিবিদ, পেশাজীবী, বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞসহ শিক্ষক, সাংবাদিক, সর্বস্তরের শিক্ষিত মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের কর্মকাণ্ডের বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করতে হবে। তা না হলে, এই যে এক ধরনের লাগামহীন অরাজকতা চলছে, এর পরিবর্তন হবে না। এসব অনাচার অসদাচরণের কারণ জেনে অনুসন্ধানসহ জনমত গড়ে তুলতে হবে। সরকারের লোকজন হরহামেশা বলে থাকে–জনগণ সুখে আছে; কিন্তু জনগণ যে প্রকৃতপক্ষে সুখে নাই, সেটি অনুধাবন যেমন করতে হবে, একই সঙ্গে সেটি মানুষকে জানতে ও জানাতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
এসএ/