চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে পাকিস্তানের নতুন সরকার
পাকিস্তানের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ মেয়াদ পার করতে পারেননি। ইমরান খানও এর বাইরে নন। শনিবার (৯ এপ্রিল) মধ্যরাতে অনাস্থা ভোটে বিদায় নেওয়ার পর পাকিস্তানে ক্ষমতার পালাবদল নিশ্চিত হয়। এবারই প্রথম অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারিয়েছেন কোনো প্রধানমন্ত্রী।
তীব্র রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে পাকিস্তান। এমন অবস্থা এবারই প্রথম হয়নি। এর আগেও এমন অবস্থা তৈরি হয়েছিল। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে নির্বাচিতদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তফাৎ হচ্ছে–এবার ভোটের মাধ্যমে হেরে গিয়ে, অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। এটি একদিক থেকে নতুন এক অভিজ্ঞতা; কিন্তু পাকিস্তানে এ ধরনের সংকট নতুন কিছু নয়। গণতন্ত্র সেখানে খুব ভালোভাবে শেকড় গাঁথতে পারেনি। কাজেই এসব সমস্যা যেমন ছিল আগামীতেও যে থাকবে না, সেটি বলা যায় না।
এখন নতুন করে সরকার গঠিত হচ্ছে। এ সরকারের চেহারা কেমন হবে, সেটি হলফ করে কিছু বলা যায় না। এ সরকারে সঙ্গী হয়েছে যে দুটি প্রধান পার্টি, তারা পরস্পরের বিরোধী। পরস্পরকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর প্রবণতা এদের ছিল এবং সেই নজিরও আছে। ইমরান খানকে নিয়ে ঘটনাটি হয়ত ভিন্ন আঙ্গিকে ঘটানো হয়েছে। তবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। কিছু সময় গেলে বোঝা যাবে। দেখা যাক, কি দাঁড়ায়? তবে এ সরকারও যে খুব দীর্ঘস্থায়ী হবে তা বলা যায় না। হয়তো নতুন নির্বাচনের দিকেই যাবে নতুন সরকার। নির্বাচনে তখন দেখা যাবে কী দাঁড়ায়।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে সরকারই আসুক না কেন, সেটি চ্যালেঞ্জিং হবেই। এটি অস্বাভাবিক নয়। পাকিস্তানের জন্য খুবই দুঃখজনক একটি বিষয় হলো–কোনো সরকারই মেয়াদকাল পূর্ণ করতে পারেনি। অন্যান্য শক্তি সবসময়ই এতে হস্তক্ষেপ করে। তার মধ্যে সেনাবাহিনী অন্যতম। ক্ষেত্র বিশেষে বিদেশিদের হস্তক্ষেপও রয়েছে। বিদেশি হস্তক্ষেপের জন্য বিদেশিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুযোগ সৃষ্টি হয় বলেই, এরা হস্তক্ষেপ করতে পারে। নতুন সরকারও যে মেয়াদকাল পূর্ণ করবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এখন বলা হচ্ছে যে, শ্রীলঙ্কাতে যে ক্রাইসিস হয়েছে, পাকিস্তানও সেদিকেই যাচ্ছে। এটি অস্বাভাবিক নয়। পাকিস্তান প্রচুর ঋণ নিয়েছে চীন থেকে। চীন তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরিয়ে নেবে এমনটি হয়ত হবে না। শ্রীলঙ্কার সংকট আর পাকিস্তানের সংকট ভিন্নরকম। তবে আগে থেকেই সাবধানতা গ্রহণ করা উচিত।
আবার আমাদের দেশের জন্যও সংকটকে ভয়ের কারণ বলে আমি মনে করি না। তবে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সাবধানতা জরুরি। সরকারও বলছে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করা চলবে না। তবে বিষয় হচ্ছে–দশ বছর পর কী হবে সেটি বলা মুশকিল। বড় বড় প্রজেক্টগুলোর ক্ষেত্রে যেভাবে আমরা ঋণ অথবা সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছি, প্রতি বছর আমাদের যে টাকা দিতে হতো, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিতে হয়। এটি যদি এভাবে বাড়তেই থাকে সেটি ভবিষ্যতে চিন্তার বিষয় হবে। সেজন্য এখন থেকেই সাবধানতা কাম্য। তবে এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এখন থেকেই যদি আমরা সাবধান হই, তাহলে বিপদে পড়ব না। তবে যদি আত্মতৃপ্তিতে ভুগি তাহলে সেটি হবে বিপজ্জনক।
লেখক: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব
এসএ/