বিজয় আমাদের চেতনার শীর্ষে, গৌরবের মহান জায়গায়
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করছি। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে আমরা যেভাবে আনন্দ এবং বেদনায় ধারণ করেছিলাম আজকের দিনে সেটি আমাদের ইতিহাসের প্রেক্ষাপট ।
আমার মনে আছে,যখন পাকিস্তান আর্মি আত্মসমর্পণ করলো রেসকোর্স ময়দানে, মিত্র বাহিনীর কাছে, সেটা ছিল ১৬তারিখ এবং ১৮ তারিখ রায়ের বাজার বদ্ধভুমিতে, সেখানে পড়ে থাকতে দেখেছি অনেক মানুষকে। আর এভাবেই আনন্দ এবং বেদনাকে ধারণ করে বিজয় দিবস উদযাপন করছি আমরা এবং যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে আজকের দিনে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি। স্মরণ করছি বরেণ্য মানুষ হিসেবে যে, তাঁরা স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছেন।
আমরা বিজয় দিবসকে এভাবেই দেখি যে, বিজয়ের আনন্দ এবং গৌরবকে আমরা একসঙ্গে ধারণ করছি। একইভাবে বেদনার জায়গাটিকেও আমরা বাতিল করবোনা। কারণ ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী আর্মি যেভাবে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে, আর তার একদিন পরই ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি আর্মি পরাজয় বরণ করে। এটা ছিল একটা অসাধারণ দিক। সুতরাং স্বাধীনতার ৫০বছর পরে আমরা যখন এই দিনগুলিকে স্মরণ করি, চেতনায় ধারণ করি, সেটি আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। যেন ওরা বিজয়ের আনন্দ বেদনার ইতিহাস সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারে।ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের জায়গাটি পূর্ণ করতে পারে। ওরা যেন বিপথগামী পথে কখনো পা না বাড়ায়।
আমরা দেখেছি বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী কিভাবে আমাদের স্বাধীনতাকে নষ্ট করছে! আমরা যদি এইসব জঙ্গিগোষ্ঠীকে উৎখাত করতে পারি, তাহলেই কেবল বিজয় দিবসের গৌরব, আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর প্রকৃত সাফল্যমণ্ডিত হবে। তাহলে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার আনন্দ নিয়ে ৫০বছর পূর্তি উদযাপন করতে পারতাম এবং একইসাথে আমি মনে করি, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমাদের বাংলাদেশকে অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে বঙ্গবন্ধুর যে সপ্ন ছিল, তিনি বারবারই বলেছেন, ‘আমার সামনে সবাই মানুষ, সবাই আমার দেশের নাগরিক, যার যার ধর্ম নিয়ে সবাই থাকবে,কিন্তু সবার কাছে রাষ্ট্র সমান।’
৫০ বছর আগে বঙ্গবন্ধু যখন অসম্প্রদায়িক দেশের কথা বলেছেন, কিন্তু যখন আমরা দেখি আমাদের দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইবোনদের পুজামণ্ডপ আক্রান্ত হয়, সেটি আমাদেরকে মর্মাহত করে। এই মর্মাহত হবার জায়গাটি আমরা নিজেদের মধ্যে নিতে চাই না। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ, আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ সব নিয়ে আমরা উদযাপন করবো স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে। যেখানে সকল মানুষ স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপন করবে। স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি হিসেবে কেউ দাঁড়াবে না।
আজকের বিজয়ের দিনে আমি মন-প্রাণ ঢেলে আমাদের নতুন প্রজন্মকে শিখাতে চাই, যেন তারা এই দেশকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেক বড় মহিমায়, মর্যাদার সাথে তুলে ধরতে পারে। নিজেদের গৌরবকে যেন কোনভাবেই নস্যাৎ করতে না পারে। আজকের এই বিজয় দিবস আমাদের শুধু ইতিহাস নয়, বরং বিজয় দিবসের শিক্ষা নিয়ে আমরা বিশ্বের দরবারে পৌঁছাতে চাই এবং বিশ্বের দরবারে বলতে চাই বাঙালি জাতি হিসেবে, আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছি এবং বাংলাভাষাকে সাংবিধানিকভাবে রাস্ট্রভাষা করেছি।
পৃথিবীতে যেখানেই বাঙ্গালিরা বসবাস করুক না কেন, বিজয়ের গৌরব অর্জন আমাদের সকলের চেতনাকে দৃঢ় করুক, আমাদের চেতনাকে প্রসারিত করুক। আমাদের এই প্রজন্ম বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়ে বলুক যে, আমরা আজকে স্বাধীন মানবিক স্বত্তা ধারণ করেই বড় হয়ে যাচ্ছি। আমাদের কখনোই সাম্রদায়িক শত্রু তৈরি হবেনা। আমরা অসম্রদায়িক বাংলাদেশে নিজেদের গৌরবময় বিজয়কে ধারণ করে নিয়ে যাবো আমাদের চেতনার শীর্ষে, গৌরবের মহান জায়গায়।
লেখকঃ কথাসাহিত্যিক