‘চাল ছাড়া ভাত রান্না’
’পিঁয়াজ ছাড়া রান্না শিখেছি, তেল ছাড়া্ও শিখে নেব-
চাল ছাড়া ভাত রান্না শিখে গেলে, চাকরিটা আমি ছেড়ে দেব’
ফেসবুকে এই ক’টি লাইন এখন ভাইরাল। ধন্যবাদ তাকে, যিনি এ ক’টি লাইনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মর্মবেদনাকে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। বৈশ্বিকভাবে দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির কারণগুলো বাংলাদেশেও বিদ্যমান । এনিয়ে কোন দ্বিমত নেই। দ্বিমত হচ্ছে, কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই লাগাম ছাড়া ভাবে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট জাতীয় কিছুর অভিযান চললেও, ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে এসব টোটকায় কোন লাভ হবে না।
ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য কেনার জন্য টিসিবি’র লাইন প্রতিদিন দীর্ঘতর হচ্ছে। তাই আরো বেশি কিছু,কার্যকর কিছু দরকার। যাতে সত্যিকার অর্থে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়! সাধারণ মানুষের উপর এই নির্যাতন সহনীয় করা যায়, যাতে নূন্যতমভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের জীবন যাত্রার উন্নতিও হয়েছে অনেক। আগের মত মঙ্গা নেই। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা্ও কমেছে। তবে যারা দিনে এনে দিনে খায় তাদের সাথে সাধারণ মধ্যবিত্তের পেরেশানি কমছে না। নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কবি রফিক আজাদ বলে গেছেন,
‘আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ
ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো।’
পশ্চিমবঙ্গের কবি শ্রীজাত’র প্রত্যাশা-
’একটু নুন আর ভাতে ভাত,
জুটুক সবার পাতে ভাত।’
এই যখন অবস্থা, তখন ভাইরাল হ্ওয়া ওই ক’টি লাইনের মধ্যে নিজেদের মুক্তির অলীক স্বপ্ন দেখা ছাড়া গত্যন্তর নেই সাধারণ মানুষের । চাল ছাড়া ভাত রান্না করা হয়তো সম্ভব নয়। তবে রান্না ছাড়াই ভাতের আবিস্কার হয়ে গেছে। পশ্চিম বঙ্গে উদ্ভাবিত হয়েছে এমন প্রজাতির চাল। পশ্চিম বঙ্গের কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এমন কোমল প্রজাতির ধানের চাষ শুরু হয়েছে। এই ধানের চাল ঠান্ডা পানিতে আধ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলেই ফুলে উঠে চিড়ার মত। অবিকল ভাতের মত না হলেও টকদই বা গুড় দিয়ে্ও খা্ওয়া যায়। এই ধান চাষে খরচও কম। জ্বালানি খরচ না থাকায় এই চালের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে বলে জানা গেছে।
এখন ভার্চুয়াল জগতেরই জয়জয়কার। সেই অর্থে রান্না করা ভাত ভার্চুয়ালি দেখেই ক্ষিদে মিটে যাবে এমন কোন পদ্ধতি আবিস্কার করা যেতে পারে। যাতে ভার্চুয়ালি ভাত দেখেই পেট ভরে যাবে। মুখেও স্বাদ অনুভব হবে।এতে কোটি কোটি মানুষ আর ক্ষুধা অনুভব করবে না। পৃথিবীতে আর কেউ অভুক্ত থাকবে না। রাষ্ট্রযন্ত্রও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবে।
লেখক: সাংবাদিক