বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

নারী জাগরণের অবিস্মরণীয় চরিত্র বিদ্রোহী জমিদার প্যারীসুন্দরী

[আজীবন লড়েছেন মাটি ও মানুষের পক্ষে, দেশমাতৃকার স্বার্থে। অত্যাচারী নীলকরের বিরুদ্ধে গ্রামের সাধারণ মানুষ ও লাঠিয়ালদের নিয়ে তাঁর সংগ্রাম কিংবদন্তিতুল্য। প্রতিপক্ষ ছিল নীলকর টমাস আইভান কেণী, সংক্ষেপে টি আই কেণী। বাংলার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে ঐতিহাসিক নীল বিদ্রোহী প্যারীর ভূমিকাকে ‘জোয়ান অব আর্ক’ এর সঙ্গে তুলনা করা যায়। ড. আবুল আহসান চৌধুরী ‘প্যারীসুন্দরী নীলবিদ্রোহের বিস্মৃত নায়িকা’ শিরোনামে এক লেখায় উল্লেখ করেছেন: ‘জমিদার প্যারীসুন্দরী প্রজাদরদি, স্বদেশপ্রাণ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত এক অসামান্য জননেত্রী।’ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইতিহাস বিভিন্ন সময়ে লেখা হয়েছে। অত্যাচারী নীলকর, নীলচাষ, নীলবিদ্রোহ এ শব্দগুলো আজও আমাদের মনে বিভীষিকাময় দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইতিহাস শুধু অতীতের ফেলে আসা হাসি-কান্না, সুখ-দু:খ, আনন্দ-বেদনার বহি:প্রকাশ ঘটায় না- সাথে সাথে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ চলার পথের প্রেরণার উৎস ও সঠিক দিশা দিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। কুষ্টিয়ার ইতিহাস যেমন দীর্ঘ তেমনি গৌরবময়।]

 

প্যারীসুন্দরী নীল বিদ্রোহের অবিস্মরণীয় চরিত্র। স্বদেশ প্রেমের অনির্বান শিখাসম এক নাম। জন্ম আনুমানিক ১৮০০ সালে। অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার (বর্তমান কুষ্টিয়ার) মিরপুর উপজেলার সদরপুরের জমিদার রামানন্দ সিংহের কনিষ্ঠ কন্যা। মাতা তারা সুন্দরী। অষ্টাদশ শতকের শেষাংশ থেকে ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এই স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী জীবিত ছিলেন বলে অনুমান করা যায়। পুত্রহীন রামানন্দের দুই কন্যার মধ্যে গোপী বড় (কেউ কেউ বলে থাকেন ব্রজ সুন্দরী) এবং প্যারীসুন্দরী ছোট ও অবিবাহিত। কুমারখালীর রেশম কুঠিতে কাজ করে রামানন্দ সম্পদ করেন এবং নদীয়ার (কুষ্টিয়া) মিরপুর থানার ইসলামপুর ও বেগমাবাদ পরগনা কিনে জমিদার হয়ে বসেন। উত্তরাধিকার সূত্রে গোপী ও প্যারী তাঁরই অধিকার পান। অর্থাৎ মিরপুর উপজেলার সদরপুর এ যে মহিলা জমিদার ছিলেন, তিনিই প্যারীসুন্দরী। তিনিই কুষ্টিয়া অঞ্চলের নীলবিদ্রোহের নেত্রী ছিলেন। প্রতিপক্ষ ছিল নীলকর টমাস আইভান কেণী, সংক্ষেপে টি আই কেণী। ফার্গুসন, শেলি ক্রফোর্ড, স্টিফেনসন, সিম্পসন প্রমুখ অত্যাচারী নীলকরের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ভয়ংকর নাম তারই। ১৮৬০ সালে যে নীল বিদ্রোহ দেখা দেয় তা প্রকৃতপক্ষে কুষ্টিয়াতেই শুরু হয়।

 

নীল কমিশনের বারাসাতের ম্যাজিস্ট্রেট অ্যাসলি ইডেন বলেছিলেন, ‘খুন, জখম, দাঙ্গা, ডাকাতি, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি এমন কোনো অপরাধ নেই, যা নীলকরেরা করেনি।’ কেণী’র অত্যাচার ছিল এদের চেয়েও মাত্রাতিরিক্ত। যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান প্যারীসুন্দরী। কেণী’র কাছারি ছিল কুষ্টিয়া শহরের বেকী দালানে, কুঠি ছিল অনতিদূর শালঘর মধুয়ায়। প্যারীসুন্দরীর দেশপ্রেম, প্রজাহিতৈষণার বিপরীতে কেণী’র অন্যায়, অত্যাচার ও নির্যাতনের কাহিনি ঐতিহাসিক গ্রন্থসমূহে দেখা যায়। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘দ্য হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকায়’ও এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে। সবিশেষ রয়েছে সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’ ও রাইচরণ দাসের ‘মনের কথা অনেক কথা’ সবিস্তারে জানার জন্য। প্যারীসুন্দরীর সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে এভাবে: ‘আমার লাঠিয়াল কুঠি লুট করিয়াছে, দশজনের মুখে এ কথা শুনিয়া আমার সুখবোধ হইতেছে। আমি বাঙালির মেয়ে, সাহেবের কুঠি লুটিয়া আনিয়াছি, ইহা অপেক্ষা সুখের বিষয় আর কি আছে।’ নীলকর কেণী ও জমিদার কন্যা প্যারীসুন্দরীর লড়াই ছিল নাটকীয়তায় পূর্ণ, যা কল্পনার-গল্প-উপন্যাস-নাটকের কাহিনীকেও হার মানায়। ধূর্ততা, শঠতার ফাঁদের বিপরীতে বীরোচিত প্রজ্ঞা ও নৈপুণ্যে মাথা উঁচু করে দেশের জন্য সর্বস্ব দিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করার ব্রত বাংলার নীলবিদ্রোহের ইতিহাসে স্বদেশ প্রেমের অনির্বান শিখার মর্যাদা পেয়েছে। প্রজাবান্ধব প্যারীসুন্দরীর জীবন ও কর্ম দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করার মতো, অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার মতো। যেমন, প্যারী’র দুর্বার বক্তব্য:  ‘যে ব্যক্তি যে কোন কৌশলে কেণীর মাথা আমার নিকট আনিয়া দিবে, এই হাজার টাকার তোড়া আমি তাঁহার জন্য বাঁধিয়া রাখিলাম। ...দুরন্ত নীলকরের হস্ত হইতে প্রজাকে রক্ষা করিতে জীবন যায়, সেও আমার পণ। আমি আমার জীবনের জন্য একটুকুও ভাবি না। দেশের দুর্দ্দশা নিরীহ প্রজার দুরবস্থার কথা শুনিয়া আমার প্রাণ ফাটিয়া যাইতেছে।’ প্যারীসুন্দরীর সঙ্গে সর্বস্ব হারানো জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ছিল। প্রতি বিঘা জমিতে নীলচাষে খরচ হতো ১০ টাকা, অথচ নীলকরেরা মূল্য দিত সাড়ে তিন টাকা। নদীয়ায় ১৭ হাজার ৬০০ বিঘা জমিতে ৭০০ মণ নীল উৎপন্ন হতো। এর মধ্যে কুষ্টিয়া ছিল প্রথম, যার নেপথ্য ক্রীড়নক ছিল অত্যাচারী নীলকর টি আই কেণী। কেণী ও প্যারীসুন্দরীর বিরোধের সূত্রপাত ‘ভাঁড়ল-পোড়াদহ’ অঞ্চলের ধানের জমিতে জোরপূর্বক নীলচাষ করা নিয়ে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ কৃষক, প্রজা, চাষিরা প্যারীসুন্দরীর কাছে দিনের পর দিন প্রতিকারের জন্য নালিশ জানায়। তিনি নায়েব রামলোচনকে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়োগ ও আক্রমণের পরামর্শ দেন। কেণীর বাহিনীর কাছে তারা পরাজিত হয়। ভাঁড়ল কুঠি লুণ্ঠিত হয়। কেণীর অত্যাচার বৃদ্ধি পায়। প্যারীসুন্দরী নতুন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কেণীর কুঠিতে আক্রমণ করেন। কেণী কুঠিতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। মিসেস কেণী অজস্র কাঁচা টাকা ছড়িয়ে দিয়ে প্যারীসুন্দরীর লাঠিয়ালদের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করেন। কেণী প্যারীসুন্দরীর বিরুদ্ধে কুঠি লুটের মামলা করেন। ভীত না হয়ে উল্টো গর্ববোধ করেন প্যারীসুন্দরী। কেণীর মাথার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন এবং মিসেস কেণীকে বালা পরিয়ে বাঙালি বধূ সাজানোর অঙ্গীকার করেন, ক্ষিপ্ত হয়ে কেণী ঘোষণা করেন- যে প্যারীসুন্দরীকে তাঁর কাছে এনে দিতে পারবে তাকে তিনি এক হাজার টাকা পুরস্কার দেবেন এবং প্যারীসুন্দরীকে গাউন পড়িয়ে মেম সাজিয়ে তাঁর কুঠিতে রাখবেন।

শুরু হয় পাল্টাপাল্টি পুরস্কার ঘোষণা ও আক্রমণ। আবারও কেণীর কুঠিতে আক্রমণ করে প্যারী বাহিনী। চতুর কেণী পালিয়ে বাঁচেন। পাহাড়াদার ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশও প্রাণে রক্ষা পায়। দারোগা মোহাম্মদ বক্স খুন হলে তাঁর লাশ প্যারীর লোকেরা খণ্ড-বিখণ্ড করে প্রায় ৫০টি সড়কির মাথায় গেঁথে তা চাঁপাইগাছির বিলে ফেলে দেয়। আবারও প্যারীসুন্দরীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। প্রহসনের বিচারে যাবতীয় জমিদারি ইংরেজ সরকার অধিকার করে। গরিব কৃষক, চাষি ও প্রজা নিয়ে অকূলে পড়েন প্যারীসুন্দরী। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জমিদারি ফেরত পান। কিন্তু ততদিনে তিনি ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েন, ফলে জমিদারির বিরাট অংশ পত্তনি বন্দোবস্ত করে দেন। গবেষক ড. আবুল আহসান চৌধুরী ‘প্যারীসুন্দরী নীলবিদ্রোহের বিস্মৃত নায়িকা’ শিরোনামে এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, ‘প্যারীসুন্দরী প্রজাদরদি, স্বদেশপ্রাণ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত এক অসামান্য জননেত্রী।’

 

যোগ্যতার বিচারে একসময় অত্যাচারী কেণী নিজেই স্বীকার করেছেন, প্যারীসুন্দরী সব দিক থেকেই তাঁর চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। তাঁর সাহস ও দেশপ্রেমের কাছে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত ও শঙ্কিত ছিলেন। তাঁর বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছিল: ‘স্ত্রী লোকের মধ্যে প্যারীসুন্দরীর নাম করিতেও ভয় হয়।’ প্রজাদরদি, মানবহিতৈষী, দেশপ্রেমিক প্যারীসুন্দরী সমকালে বিস্মৃত এক নাম। বিপরীতে টি আই কেণী বর্বর অত্যাচারের প্রতিভূ। কুষ্টিয়া শহরের বেকী দালানের (ক্রিসেন্ট বিল্ডিং) রাস্তাটি লোকমুখে ক্রিসেন্ট রোড এবং কোর্ট স্টেশন মুখী রাস্তাটি এখনও কেণী রোড নামে পরিচিত। প্যারীসুন্দরী নীলবিদ্রোহের ইতিহাসে সংযোজন করেছেন স্বদেশপ্রেমের অনির্বান শিখা। যে ইতিহাসের ব্যপ্তিকাল ১৮৪৯ থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত। এই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ধানের জমিতে জোরপূর্বক নীলচাষে বাধ্য করার নীতি থেকে সরে দাঁড়ায় ইংরেজ সরকার। বিদ্রোহী জমিদার প্যারীসুন্দরী ১৮৭০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। নি:সন্তান প্যারীর জমিদারি অংশ চলে যায় তাঁরই জ্ঞাতি তারিণীচরণ সিংহের হাতে। পরের বছর কুষ্টিয়াকে দেয়া হয় মহকুমার মর্যাদা। শুধু নামে নয়, চিরকুমারী প্যারীসুন্দরী জীবন ও কর্মেও ছিলেন দেশপ্রেমের এক অনন্য প্রতীক।

 

বিস্তারিত জানতে: 

ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন ও ড. সারিয়া সুলতানা, ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’, দ্বিতীয় সংস্করণ, কণ্ঠধ্বনি প্রকাশনী, কুষ্টিয়া, একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০

 

খুজতে হলে https://www.rokomari.com/search?term=কণ্ঠধ্বনি+প্রকাশনী

লেখক : ইতিহাস গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন

ই-মেইল: dr.hasnayen@gmail.com

 

জরুরি সাংগঠনিক নির্দেশনা দিলো ছাত্রলীগ

ফাইল ছবি

সব ইউনিটের নতুন কমিটি গঠনে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার সময় কোনো ধরনের আর্থিক মূল্যমান, মনোনয়ন ফি অথবা চাঁদা আদায় নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কোনো ইউনিট নির্দেশনা না মানলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর, জেলা সমমর্যাদার ইউনিট বা সরাসরি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত মেডিকেল কলেজ, কলেজ ও অন্যান্য ইউনিটের নতুন কমিটি গঠনের জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বানের সময় কোনো আর্থিক মূল্যমান/মনোনয়ন ফি/চাঁদা আদায় নির্ধারণ করা যাবে না। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর, জেলা ও অন্যান্য ইউনিট তাদের অধীনস্থ কোনো ইউনিটের নতুন কমিটি গঠনের জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বানের সময় আর্থিক মূল্যমান/মনোনয়ন ফি/চাঁদা আদায় নির্ধারণ করা যাবে না।

এছাড়া উপজেলা, কলেজ, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও অন্যান্য ইউনিট তাদের অধীনস্থ কোনো ইউনিটের নতুন কমিটি গঠনের জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বানের সময় আর্থিক মূল্যমান/মনোনয়ন ফি/চাঁদা আদায় নির্ধারণ করা যাবে না। উল্লেখিত নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাহিত্য চর্চার আড়ালে শিশু পর্নোগ্রাফি বানাতেন টিপু কিবরিয়া

গ্রেফতার টিপু কিবরিয়া ও তার সঙ্গী। ছবি: সংগৃহীত

শিশুসাহিত্যিক ও আলোকচিত্রী হিসেবে পরিচিত টিআই এম ফখরুজ্জামান ওরফে টিপু কিবরিয়া। কয়েকটি ছড়ার বই ছাড়াও ‘হরর ক্লাব’ নামে শিশুদের জন্য সিরিজ বই আছে তার। পরিচয় সুনামের মনে হলেও আড়ালে তিনি ভয়ঙ্কর, বিকৃত মানসিকতার।

তিনি বাংলাদেশে বসে আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি অপরাধী চক্রের সঙ্গে যুক্ত। ভয়ংকর এ অপরাধে জড়িত থাকার কারণে অনেক দেশে তিনি শিশু পর্নোগ্রাফি অপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত। শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি ও বিদেশে বিক্রির অভিযোগে এক সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে।

এ সময় এক শিশুকেও উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও শিশু পর্নোগ্রাফির কনটেন্ট ও পর্নোগ্রাফি তৈরির সরঞ্জাম জব্দের কথা জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

গতকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর খিলগাঁও থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বিভাগের এন্টি ইলিগ্যাল আর্মস রিকোভারি টিম। তারা হলেন টি আই এম ফখরুজ্জামান ওরফে টিপু কিবরিয়া ও মো. কামরুল ইসলাম ওরফে সাগর।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোড ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ফকরুজ্জামান এক সময়কার খুব জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক। তিনি টিপু কিবরিয়া নামে পরিচিত। টিপু কিবরিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে বাংলায় স্নাতক এবং ১৯৮৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ সালে সেবা প্রকাশনীর মাসিক ‘কিশোর পত্রিকা’য় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশু সাহিত্য রচনা করতেন। তার অর্ধশতাধিক বই রয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০০৫ সাল থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি উৎপাদন ও বিতরণের সঙ্গে জড়ান টিপু কিবরিয়া। দীর্ঘদিন এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার পর ২০১৪ সালে সিআইডির কাছে গ্রেপ্তার হন এবং তার নামে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়। ২০২১ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় সাহিত্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন টিপু কিবরিয়া। ‘একশো এক’ নামে একটি কবিতার বই প্রকাশ করে। একই সাথে, সাহিত্য চর্চার আড়ালে পুনরায় শিশু পর্নোগ্রাফির সেই পুরোনো পথেই হাঁটতে শুরু করেন টিপু কিবরিয়া।

উদ্ধারকৃত শিশু পর্নোগ্রাফির কনটেন্ট ও পর্নোগ্রাফি তৈরির সরঞ্জাম। ছবি: সংগৃহীত

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট বানান। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাংবাদিক বেশে পথশিশুদের অর্থের লোভ দেখিয়ে বাসায় ডেকে নিজের ক্যামেরার সাহায্যে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির নগ্ন ছবি, শরীরের বিভিন্ন গোপনাঙ্গের ছবি তোলেন এবং ভিডিও করেন। নিজের বাসা ছাড়াও বিভিন্ন পার্কের নির্জন ঝোপঝাড়ে এই ছিন্নমূল শিশুদের একই প্রক্রিয়ায় অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। শিশুদের সংগ্রহ করার জন্য তার কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। যাদের মধ্যে একজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো থেকে প্রায় ২০ জন পথশিশুর ছবি ভিকটিম হিসেবে শনাক্ত করা গেছে। তার ব্যবহৃত ক্যামেরা, পিসি ও ক্লাউড স্টোরেজ থেকে পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্যে তোলা প্রায় ২৫শ’ শিশুর স্থিরচিত্র ও প্রায় এক হাজার ভিডিও কনটেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার ডেস্কটপে অসংখ্য ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের প্রচুর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে। তিনি এসব কনটেন্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিকৃত রুচির গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতেন।

অভিযান পরিচালনার সময় তার বাসায় তার ব্যবহৃত ডেস্কটপটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি MEGA এবং Totanota নামক দুইটি এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে তার ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করেন। এ পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও জর্মানির নাগরিকসহ প্রায় ২০-২৫ টি Totanota ও MEGA আইডি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যারা এসব আইডি দিয়ে মূলহোতা টিপু কিবরিয়ার সাথে শিশু পর্নোগ্রাফির বিভিন্ন কনটেন্টের জন্য যোগাযোগ করত।

এ ছাড়া তার ব্যবহৃত ক্যামেরা, পিসি ও ক্লাউড স্টোরেজ থেকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫শ’ শিশু পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্যে তোলা স্থির চিত্র ও প্রায় এক হাজার ভিডিও কনটেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার ডেস্কটপে অসংখ্য ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের প্রচুর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাওয়া গিয়েছে।

সাজেকে শ্রমিকবাহী ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ৬

সাজেকে শ্রমিকবাহী ট্রাক খাদে পড়ে ৬ জন নিহত হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

রাঙামাটির সাজেকে সড়ক থেকে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাজেক ইউনিয়নের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি টিলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল ও পুলিশ ঘটনাস্থলে রওয়ানা হয়েছে।

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাতুলাল চাকমা জানান, শ্রমিকরা কাজ শেষে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় চালকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ড্রামট্রাকটি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন মারা যান। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ৮ জন। ট্রাকটিতে ১৭ জন শ্রমিক ছিলেন।

তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সর্বশেষ সংবাদ

জরুরি সাংগঠনিক নির্দেশনা দিলো ছাত্রলীগ
সাহিত্য চর্চার আড়ালে শিশু পর্নোগ্রাফি বানাতেন টিপু কিবরিয়া
সাজেকে শ্রমিকবাহী ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ৬
ধাওয়া খেয়ে গরু ও গাড়ি রেখে পালালো চোর, গাড়িতে আগুন দিল জনতা
আর্জেন্টাইন ফুটবলার কার্লোস তেভেজ হাসপাতালে ভর্তি
সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এফডিসিতে মানববন্ধন
রাজবাড়ীতে হিটস্ট্রোকে স্কু‌লশিক্ষকের মৃত্যু
প্রসূতির পেটে গজ ও ফুল রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন
তাপদাহ কমে গেলে লোডশেডিং থাকবে না: বিদ্যুৎ সচিব
ইন্টারনেট ছাড়াই হোয়াটসঅ্যাপে ছবি-ভিডিও পাঠাবেন যেভাবে
ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশি নারী বক্সার জিন্নাত ফেরদৌস
নিজে না মেরেও সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন রিয়াজ
নারী কর্মীদের বোরকা ও নেকাব পরা নিষিদ্ধ করল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল
ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
কালশী উড়ালসেতুর নাম বদলে হলো শেখ তামিম মহাসড়ক
ক্যান্সারে না ফেরার দেশে পেপার রাইম ব্যান্ডের সাদ
গাইবান্ধায় ‘শ্রুতিকটু’ ৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন
হিটস্ট্রোকে প্রাণ হারালেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইশতিয়াক
মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা উপজেলা নির্বাচন থেকে না সরলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেললাইনে বাস, পুলিশের তৎপরতায় প্রাণে বাঁচল ট্রেনের যাত্রীরা