মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২০ কার্তিক ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নারীরা কে কোথায়

 

বাংলাদেশ সরকার ২৬ মার্চ ২০২১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ণাঢ্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন করেছে। পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের লক্ষ্যে সরকার ১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ২৬শে মার্চ ২০২১ সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে গৃহিত কর্মসূচি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় মুজিববর্ষের সময়কাল ৩১ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে, যার আওতায় এ কর্মসূচির কার্যক্রমসমূহ এখনও সুন্দর, সুশৃংখল ও সুচারুরুপে চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের মহান  স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদ্যাপনের এই সন্ধিক্ষণে ৮ মার্চ, ২০২২ তারিখে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস, যা বাঙালি নারীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ২০২২ আন্তর্জাতিক নারী দিবস-এর প্রতিপাদ্য বিষয়, , “Gender equality today for a sustainable tomorrow’ .

 

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে আমরা অনেক দিক দিয়েই এগিয়ে আছি। তবে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নারীরা কে কোথায় আছেন, তা একটুখানি দেখা যাক।

 

সরুফা বেগম। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সরুফা বেগম ১২ কি ১৩ বছরের কিশোরী। কিছুদিন স্কুলে যাওয়া আসা করেছে। কিন্তু অভাবের তাড়নায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। তিন বেলা খাবার আর খুব সামান্য পারিশ্রমিক দেয়া হতো। ছয় ভাই বোনের মধ্যে সরুফা ছিল চতুর্থ। দেশে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে তখনও সরুফা প্রতিদিনই কাজে যেতেন। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়কার ঘটনা। একদিন বিকেলে আছর নামাজের সময় হঠাৎ গ্রামে মিলিটারিরা আক্রমণ করে। তিনি তখন সংসারের কাজকর্ম নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই কয়েকজন মিলিটারি এসে তাকে ধরে ফেলে এবং স্থানীয় ক্যাম্পে নিয়ে গণধর্ষণ করে। আনুমানিক রাত ১০ টা পর্যন্ত তাকে ধর্ষণ করে। রাত ১১ টার দিকে মুক্তিবাহিনীরা সেই থানা আক্রমণ করেন। দুই পক্ষই গোলাগুলি করছে, ঠিক এমন সময় সরুফাকে নির্যাতন করছিল আকবর নামের এক মেজর। গোলাগুলির শব্দ শুনে ঐ অবস্থায় মেজর আকবর দৌড়ে বাহিরে চলে যায়। আর এই সুযোগে সরুফা পালাতে চেষ্টা করলে তাঁর পায়ে গুলি লাগে। সরুফা মাটিতে পড়ে যায়। আর কিছু বলতে পারেন না তিনি।

তিন দিন পর যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে তখন দেখেন, তিনি একটি হাসপাতালে শুয়ে আছেন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি শোয়া থেকে উঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু দেখেন, তিনি আর উঠে বসতে পারছেন না। তখন তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। তাঁর কান্না শুনে বাহির থেকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা দৌড়ে এসে শান্তনা দিয়ে বলেন, নিরাপত্তার জন্য তাঁকে দূরে বিলুনিয়া একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য আগরতলা পাঠাবে।

তখনই উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তিযোদ্ধারাই তাঁকে আগরতলায় নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা করা হয় এবং বিশেষভাবে তৈরি করা ফিতাওয়ালা বুট জুতা দিয়ে দিয়েছে। দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে আসে।

সরুফা পঙ্গু এবং পাকিস্তানি মিলিটারিদের দ্বারা ধর্ষিতা। তাই তাঁর বিয়ে হয়নি। স্বাধীনতার অনেক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। জন্মের কিছুদিন পরই মেয়েটা মারা যায়। দুই বছর সংসার করার পর বিয়েটাও ভেঙ্গে যায়। স্বামী-সন্তানহীন একাকিত্ব জীবনযাপন করছেন।

 

নবনীতা সেন। বিয়ের ১৮/২০ দিন পরই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধের সময় তিনি স্বামীর বাড়িতেই ছিলেন। মে মাসের প্রথম দিকে নবনীতাসহ তার দুই ননদ জবা সেন ও মল্লিকা সেন একই দিনে ধরা পড়েন। মল্লিকার বয়স ছিল খুব বেশি হলে ১২ বছর। আর জবার বয়স ছিল ১৫ কি ১৬ বছর। একই ক্যাম্পে তাদেরকে আটকে রেখে কয়েক শত মিলিটারি তাদেরকে ধর্ষণ করতো প্রতি রাতে। অতিরিক্ত ধর্ষণের কারণে দুই এক মাসের মধ্যেই মল্লিকা মারা যায়। তাদের চোখের সামনে মারা যায় মল্লিকা। দেশ স্বাধীন হলে জবা আর নবনীতাকে উদ্ধার করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। নবনীতা প্রথমে স্বামীর বাড়ি যায়। সেখানে জায়গা না পেয়ে বাবার বাড়িতে যায় । সেখানেও জায়গা হয়নি তার। তারপর উদ্দেশ্যহীনভাবে বাড়ি ছেড়ে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে এক রেলস্টেশনে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তখন তিনি খুব বেশি ক্লান্ত। দীর্ঘ পাঁচ-ছয় মাস টানা ধর্ষণের পর, তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। তখন তিনি গর্ভবতী। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক মাস পরই জন্ম দেয় একটি মেয়ে সন্তান। যেখানে নবনীতা আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই মহিলা তাকে দিয়ে দেহ-ব্যবসা করাতো। তাকে দিয়ে জোর করে এই কাজ করাতো। না করেও কোন উপায় ছিল না। যেখানেই যেত সেখানেই তাকে কুপ্রস্তাব দিতো।

নবনীতা কোনো স্বীকৃতি চান না। তিনি চান তাঁর জীবন থেকে এই কলঙ্কের দাগ মুছে দিয়ে আগের জীবন ফিরে পেতে, আর তার সন্তানের পরিচয়। আমাকে যদি মুক্তিযোদ্ধা বলা হয় তাহলে আমি টাকা পাব, টাকা দিয়ে কি মুছে দিতে পারবে আমার সেই সাত মাসের বন্দী জীবনের কষ্ট। মুছে দিতে পারবে কলঙ্কের দাগ। দিতে পারবে মেয়ের বাবার পরিচয়। আমি মরে যাওয়ার পরও মানুষ বলবে, এই মহিলা পাকিস্তানি আর্মি দ্বারা ধর্ষিতা। আমার মেয়ে মারা গেলে মানুষ বলবে, এই মহিলা জারজ। আমি চাই, এসব কলঙ্কের দাগ মুছে ফেলতে। তারপর না হয় মুক্তিযোদ্ধা হবো।

 

লায়লা বানু। মানুষ বলে নামের শেষে বানু থাকলে নাকি ভাল না। তাই হয়ত আমার জীবনটা এত ছন্দময়। কতটুকু বড়ই ছিলাম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৫ কি ১৬ বছর। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে আমি ধরা পড়ি পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে। যেদিন ধরা পড়ি, সেই রাত থেকে একাধিক সৈন্য আমাকে ধর্ষণ করতো। দিনের বেলায় আটকে রেখে দিতো একটা ঘরে। একবেলা খাবার দিতো। বাহিরে বের  হওয়ার কোনো রকমের সুযোগ ছিল না। বাহিরে বের হব দূরের কথা, বাহিরের পৃথিবী দেখার সুযোগও ছিল না। একসময় দেশ স্বাধীন হয়েছে শুনেছি, কিন্তু নিজের স্বাধীনতা দেখার সুয়োগ হয়নি। পাকিস্তানি সৈন্যরা জোর করে আমাকে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যায়। পাকিস্তান নিয়েও আমাকে দিয়ে এসব করাতো। যা টাকা পেতো, তা সেই মেজরই নিয়ে নিতো। বিনিময়ে আমাকে তিন বেলা খাবার দিতো। থাকতাম সেই মেজরের বাড়িতেই। প্রায় দশ বছরে আমাকে দিয়ে এই সমস্ত নোংরা কাজ করিয়ে হাজার হাজার টাকার মালিক হয়েছে। এই দশ বছরের মধ্যে দুই তিন বার আমার পেটে বাচ্চা আসে। তখন তারাই আমার বাচ্চা নষ্ট করে। তৃতীয় বাচ্চাটার সময় অনেক সমস্যা হয়। কারণ তখন বাচ্চাটা বড় হয়ে যায়। তাই অনেক বড় সমস্যা হয়েছিল। তখন তারা আমাকে হাসপাতালে রেখে চলে যায়। হাসপাতালের বিলও দেয়নি। হাসপাতাল কতৃপক্ষ প্রথমে বুঝতে পারেনি। তাই তারা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিল আমার। আস্তে আস্তে এক সময় বুঝতে পারে, তখন আমি প্রায় সুস্থ। প্রায় সময় তাদেরকে ফোন না কেমন করে যোগাযোগ করেছিল, যারা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। তারা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, আমাকে তারা চিনে না। তখন হাসপাতাল কতৃপক্ষ আমার সঙ্গে কথা বলে। আমার সব কথা শুনে। তখন ধাপে ধাপে তারা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাকে ছেড়ে দিবে এবং তাই করেছে।

 

এবার কথা হ’ল, আমি কোথায় যাব, কি খাব, কোথায় থাকবো, কার কাছে আমি আশ্রয় চাইবো। এসব ভাবতে ভাবতে আমি হাসপাতালের বাহিরে বসে থাকি। তিন দিন বসে থাকি। আর ভিক্ষা করে খাচ্ছি। একদিন এক বাংলাদেশের ড্রাইভার যায় যাত্রী নিয়ে, তখন আমি তাদের কাছে ভিক্ষা চাই। তখন শুনি ঐ ড্রাইভারকে যে টাকা দিচ্ছে সে বাংলায় কথা বলছে। তখন ঐ ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলি। সে আমার সব কথা শুনে আমাকে নিয়ে যায় তাদের বাড়িতে। সেই ড্রাইভারের নাম ছিল মিজান। আমি মিজান ভাই বলে ডেকেছি। সে-ও বোনের মতন দেখতো। কিন্তু কতদিন একজনের উপর থাকা যায়, খাওয়া যায়। তাই আমি ভিক্ষা করতে থাকি। ভিক্ষা করতে করতে একদিন একজন আমাকে তার বাড়িতে ঝি-এর কাজ করার জন্য প্রস্তাব দেয়, আমি রাজি হয়ে যাই। ঐ বাসায় কাজ করতে করতে একজনের সঙ্গে কথা হয়। তখন তাকে আমি সব বলি। সে আমাকে সাহায্য করবে বলে কথা দেয়। সে কোন দেশের বলতে পারবো না। কিন্তু কেন যেন সে আর তার কথা রাখতে পারেনি।

 

যে বাড়িতে থাকতাম সেই বাড়িতে অনেক লোক ছিল। প্রায় ১৯/২০ জন, যৌথ পরিবার। ঐ বাড়ির একটি মেয়ে ছিল জুলিয়ানা জুলি। সে খুব ভাল মনের ছিল। সে সব সময় আমার প্রতি সদয় ছিল। সময় সুযোগ হলেই সে আমার সঙ্গে কথা বলতো। আমিও তাকে আমার সব কথা মন-প্রাণ খুলে বলি। সে আমার সব কথা শুনে আমাকে কথা দেয়, আমার জন্য একটা কিছু করবে। সেই জুলি আপা আমাকে আরেক জনের কাছে পাঠান। সে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার পাসপোর্ট করে দিয়েছে এবং একসময় আমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে এসে আমি আমার বাড়ি কুমিল্লা জেলায় যাই। অনেক খুঁজে বাড়ি বাহির করি। কারণ ততদিনে বাড়িতে অনেক পরিবর্তন চলে এসেছে। বাড়িতে গিয়ে জানতেপারি, বাড়িতে কেউ নেই। বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল, বাবাকে মেরে ফেলেছিল। মা-ভাই-বোনদের খবর জানি না। যখনই মা-ভাই-বোনদের কথা জিজ্ঞাসা করি, তখনই মানুষ জিজ্ঞাসা করে, আমি কে, কি আমার পরিচয়।

 

একদিন একজন বলছেন, আমার ছোট ভাই মতিনকে তিনি চিনেন ও জানেন, তার ঠিকানাও দিতে পারবেন। তখন আমি তার সঙ্গে যাই। গিয়ে দেখি অন্য পরিবেশ। ১৫/২০ জন যুবক একটা ঘরের ভেতরে বসা। আমাকে দেখেই তাদের হাবভাব যেভাবে তারা প্রকাশ করেছে, তা দেখে খুব কষ্ট পেলাম। তারা জোর করে আমাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করছে। আমি রাজি না হওয়ায় খুব বেশি খারাপ ভাষায় আমার সঙ্গে কথা বলছে। তাদেরই একজন আমাকে সুযোগ করে দেয়। তখন আমি সেই ঘর থেকে বাহির হয়ে এলোপাথারি দৌড়াতে থাকি। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি একসময় বর্ডারের কাছে চলে আসি। বুঝতে পারি এটা বর্ডার। মনে মনে ভাবলাম, আমি যদি এই কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ঐপারে যেতে পারি, তখন হয়ত আমাকে কেউ চিনবে না। না চিনলে কেউ এমন ভয়াবহ প্রস্তাব দিবে না। সুযোগ বুঝে আমি কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে, দেশের সীমানা পার হয়ে ত্রিপুরায় চলে আসি।

 

বাংলাদেশের সীমানা পার হওয়ার পর, একজনের কাছে আশ্রয় পেয়েছি। যিনি আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন, তার নাম অর্পিতা দাস। তিনি খুব বয়স্ক, ভিক্ষা করে খায়। আমার সব কথা শুনেই তার ডেরায় আশ্রয় দিয়েছে। তাকে আমি দিদি বলে ডাকলাম। দিদি একদিন আমাকে বললেন, আমার এখানে থাকতে হলে হয় তোকে শাঁখা, সিঁদুর, পলা পরতে হবে, না হয় সাদা থান পরিধান করে বিধবা সেজে থাকতে হবে। দিদির কথা মতন আমি সাদা থান পরি আর ভিক্ষা করি। সেই থেকে সাদা থানই পরি আর দিদির সঙ্গেই থাকি। দিদি মারা গিয়েছেন প্রায় চার-পাঁচ বছর তো হবেই। দিদি মারা যাওয়ার পর এই ঘরের মালিক আমি হলাম। এখানে প্রায় ১৪/১৫ জন আছে, সবাই আমরা ভিক্ষা করি।

 

আমার শরীর খুবই খারাপ। অতিরিক্ত ধর্ষণের ফলে আমার গোপনাঙ্গে ঘাঁ হয়ে পঁচন ধরেছিল। মাঝখানে বেশ কয়েক বছর ভাল ছিলাম। আজ দুই তিন বছর হয় আমার অবস্থা খুব খারাপ। সারাক্ষণই রক্ত ঝরে। একবার ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছে, আমার ঐখানে অনেক বড় ক্ষত, অনেক বড় অপারেশন লাগবে। এর জন্য অনেক টাকার দরকার। কোথায় পাব টাকা, তাই চিকিৎসা হয় না। শরীর ভর্তি জ্বর থাকে সারাক্ষণ। আমার শরীর বলে দিচ্ছে, আমার সময় আর বেশি দিন নেই। যেকোন সময় শেষ হয়ে যাব। তাই ভাল, যে কষ্ট পাচ্ছি তার চেয়ে মরে গেলে অনেক ভাল।

 

কিন্তু বড় সাধ জাগে, যদি একবার, শুধু একবার, আমার মা-বাবা, ভাই-বোনদের কেউ যদি বেঁচে থাকে,  তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারতাম। কিন্তু জানি, তা হয়তো সম্ভব না। কারণ, তাদের কোন সন্ধানই আমার জানা নেই।

 

শত শত পাকিস্তানিরা একটা ঘরের ভেতর আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে। শুধু তাই না, পাকিস্তানিরা যাওয়ার সময় আমাকে নিয়েও গিয়েছে। ঐখানে নিয়ে গিয়েও এমন কষ্ট দিয়েছে। দেশ স্বাধীন হ’ল। সেই স্বাধীন দেশে আমার ঠাঁই মিলেনি। আমি নামাজ পড়ি ঘরে। কিন্তু বাহিরে তো জানে আমি হিন্দু, বিধবা। আমি জানি না, আমি মারা গেলে আমাকে পোড়াবে, না মাটি দিবে। আমি চাই, আমার কবর হোক। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী গোসল, কাফন পরিয়ে, জানাজা দিয়ে দাফন করা হোক। এটাই আমার শেষ চাওয়া।

বাংলাদেশ আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা দিয়েছে। দেরিতে হলেও আজ নির্যাতিতা, ধর্ষিতা নামটি মুছে তাঁদেরকে বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছে। সেই সাথে ভাতাসহ সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

 

                   

লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক।

Header Ad

আরও ২৯ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল

ছবি: সংগৃহীত

তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) সম্প্রতি আরও ২৯ জন সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট পেশার ব্যক্তির প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। রোববার (৩ নভেম্বর) পিআইডির প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

আদেশে বলা হয়, প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা অনুযায়ী এই সাংবাদিকদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হওয়া কার্ডধারীদের মধ্যে আছেন বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমের সম্পাদক, সংবাদ প্রধান এবং বিশেষ প্রতিনিধি।

কার্ড বাতিল হওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন টিভি টুডের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, নিউজ২৪-এর হেড অব নিউজ রাহুল রাহা, এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান নুরুল আমিন প্রভাষ, দৈনিক ডেসটিনির উপ-সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম, সময় টিভির সিইও আহমেদ জোবায়ের, দৈনিক জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান, এবং নিউজ২৪-এর সিনিয়র রিপোর্টার জয়দেব চন্দ্র দাস।

এছাড়া, নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দীপ আজাদ, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী জ.ই. মামুন, বাসসের উপপ্রধান বার্তা সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি হোসনে আরা মমতা ইসলাম সোমা, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি হায়দার আলী, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সিনিয়র নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি, দৈনিক পূর্বকোণের ঢাকা ব্যুরো প্রধান কুদ্দুস আফ্রাদ, বৈশাখী টিভির প্রধান সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ডিবিসি নিউজের অ্যাসাইমেন্ট এডিটর নাজনীন নাহার মুন্নী, ফ্রিল্যান্সার নাদিম কাদির, বাসসের নগর সম্পাদক মধুসূদন মন্ডল, এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশিষ ঘোষ সৈকত।

তালিকায় আরও আছেন দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জাফরউল্লাহ শরাফত, দৈনিক আনন্দ বাজারের বিশেষ প্রতিনিধি কিশোর কুমার সরকার, দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিনের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন, মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন, আরটিভির সিইও আশিকুর রহমান, একুশে টিভির হেড অব ইনপুট অখিল কুমার পোদ্দার, গাজী টিভির এডিটর রিসার্চ অঞ্জন রায় এবং দৈনিক ভোরের কাগজের বার্তা সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিন।

এই সাংবাদিকদের কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্তের পর গণমাধ্যমজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

Header Ad

কৃষক বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে পুলিশের এএসপি হন শতকোটি টাকার মালিক হারুন

সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত

মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের। ২০তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় পুলিশে যোগ দিলেও তার বাবা মো. হাসিদ ভূঁইয়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তার বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা পরে হারুনের পুলিশের চাকরির ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

২০১১ সালের ৬ জুলাই সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদীন ফারুককে মারধর করে আলোচনায় আসেন হারুন। এ ঘটনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা অর্জন করেন তিনি এবং তার পর থেকেই একের পর এক পদোন্নতির মাধ্যমে পুলিশের অন্যতম প্রভাবশালী কর্মকর্তায় পরিণত হন।

হারুন অর রশীদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়েন। বলা হয়, সাধারণত হেলিকপ্টার ছাড়া তিনি বাড়িতে আসতেন না। তার বিরুদ্ধে দেশ ও বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগও ওঠে। মিঠামইনে নিজ গ্রামের বাড়িতে শতকোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলেন বিলাসবহুল 'প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট', যেখানে রয়েছে হেলিপ্যাড এবং অত্যাধুনিক সুইমিং পুল।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টটি একসময় ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রিসোর্টের জৌলুসও কমে যায় এবং অবশেষে রিসোর্টের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেখানে জনমানবহীন ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হারুনের রিসোর্টটির জন্য এলাকার সংখ্যালঘু ও অন্যান্য ভূমি মালিকদের ভয় দেখিয়ে জমি দখল করা হয়েছিল এবং অধিকাংশ মালিক এখনো তাদের জমির মূল্য পাননি। স্থানীয় সংখ্যালঘু প্রতিনিধি দীলিপ চৌধুরী জানান, তার কোটি টাকার মূল্যমানের জমি হারুন ভয় দেখিয়ে দখল করেছেন, কিন্তু টাকা পরিশোধ করেননি। একইভাবে মানিক মিয়া নামে আরেক ব্যক্তি তার ৫ একর জমির কোনো মূল্যই পাননি।

স্থানীয়রা বলছেন, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা হারুন পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন।

Header Ad

হত্যা মামলার আসামি হয়েও পাসপোর্ট পেতে যাচ্ছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী

সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী-এমপিদের লাল পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় বাতিল করা হয়েছে সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কূটনৈতিক পাসপোর্টও। রংপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় করা হত্যা মামলার আসামি শিরীন শারমিন আত্মগোপনে রয়েছেন এবং গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকায় সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।

৩ অক্টোবর, তিনি এবং তার স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। অভিযোগ রয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত না হয়ে তারা বাসায় বসেই আঙুলের ছাপ ও আইরিশ স্ক্যান জমা দেন। অথচ নিয়ম অনুসারে, এসব তথ্য পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জমা দিতে হয়।

এ প্রসঙ্গে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, শিরীন শারমিন চৌধুরী ও তার স্বামী অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন এবং এর জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করছেন। যদিও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে আইনের সীমার মধ্যে থেকে পাসপোর্ট অধিদপ্তর কাজ করে।

সাবেক এ স্পিকারের বাসার ঠিকানা হিসেবে ধানমণ্ডির একটি বাসার উল্লেখ থাকলেও সেই ঠিকানায় তাদের পাওয়া যায়নি বলে জানান রক্ষণাবেক্ষণকারী কর্মচারী শাহাবুদ্দীন। তিনি জানান, শিরীন শারমিন এ বাসায় থাকেন না এবং এখানে তার উপস্থিতি গত কয়েক মাসে দেখা যায়নি।

পাসপোর্ট বিষয়ক এই বিতর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই সময়ে হত্যা মামলার আসামিদের পাসপোর্ট প্রক্রিয়া সহজ করা সন্দেহজনক। এতে বিচার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ সরকার এ ধরনের সুবিধা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং জানান, নিয়মের বাইরে কেউ এভাবে সুবিধা নিতে পারেন না। এদিকে মামলার তদন্তকারী রংপুর মহানগর পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, শিরীন শারমিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের জন্য খোঁজা হচ্ছে এবং তার সন্ধান পাওয়া মাত্রই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আরও ২৯ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল
কৃষক বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে পুলিশের এএসপি হন শতকোটি টাকার মালিক হারুন
হত্যা মামলার আসামি হয়েও পাসপোর্ট পেতে যাচ্ছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্রদলের দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা
শেখ হাসিনা কীভাবে ভারতে আছেন, জানতে চাইলেন ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী
মানুষ আগেও ভোটারবিহীন সরকারকে মানেনি, এখনও মানবে না: মির্জা আব্বাস
মাওলানা সাদকে দেশে আসতে দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের পতন
সরকারি অনুষ্ঠানে স্লোগান ও জয়ধ্বনি থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা
বেনাপোল স্থলবন্দরে ভোক্তা অধিকারের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
গুম কমিশনে জমা পড়েছে ১৬০০ অভিযোগ, সবচেয়ে বেশি র‌্যাবের বিরুদ্ধে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে হত্যার হুমকি, থানায় জিডি
মালয়েশিয়ায় বন্দিশিবির থেকে ছয় বাংলাদেশিকে উদ্ধার, মানবপাচার চক্র আটক
১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম কমলো ১ টাকা
বিডিআর হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তে হাইকোর্টের জাতীয় কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন নয়
বাংলাদেশে ইজতেমা একবারই হবে, দুবার নয়: মহাসম্মেলনে বক্তারা
এক মাস পর খাগড়াছড়ি ও সাজেক পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত
মার্কিন নির্বাচনে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬ প্রার্থী
শাকিব খানের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন, মুখ খুললেন পূজা চেরি
মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা রেখেই ঢাবির ভর্তি কার্যক্রম শুরু
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলায় ব্যালট পেপার