বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নারীরা কে কোথায়

 

বাংলাদেশ সরকার ২৬ মার্চ ২০২১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ণাঢ্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন করেছে। পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের লক্ষ্যে সরকার ১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ২৬শে মার্চ ২০২১ সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে গৃহিত কর্মসূচি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় মুজিববর্ষের সময়কাল ৩১ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে, যার আওতায় এ কর্মসূচির কার্যক্রমসমূহ এখনও সুন্দর, সুশৃংখল ও সুচারুরুপে চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের মহান  স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদ্যাপনের এই সন্ধিক্ষণে ৮ মার্চ, ২০২২ তারিখে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস, যা বাঙালি নারীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ২০২২ আন্তর্জাতিক নারী দিবস-এর প্রতিপাদ্য বিষয়, , “Gender equality today for a sustainable tomorrow’ .

 

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে আমরা অনেক দিক দিয়েই এগিয়ে আছি। তবে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নারীরা কে কোথায় আছেন, তা একটুখানি দেখা যাক।

 

সরুফা বেগম। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সরুফা বেগম ১২ কি ১৩ বছরের কিশোরী। কিছুদিন স্কুলে যাওয়া আসা করেছে। কিন্তু অভাবের তাড়নায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। তিন বেলা খাবার আর খুব সামান্য পারিশ্রমিক দেয়া হতো। ছয় ভাই বোনের মধ্যে সরুফা ছিল চতুর্থ। দেশে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে তখনও সরুফা প্রতিদিনই কাজে যেতেন। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়কার ঘটনা। একদিন বিকেলে আছর নামাজের সময় হঠাৎ গ্রামে মিলিটারিরা আক্রমণ করে। তিনি তখন সংসারের কাজকর্ম নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই কয়েকজন মিলিটারি এসে তাকে ধরে ফেলে এবং স্থানীয় ক্যাম্পে নিয়ে গণধর্ষণ করে। আনুমানিক রাত ১০ টা পর্যন্ত তাকে ধর্ষণ করে। রাত ১১ টার দিকে মুক্তিবাহিনীরা সেই থানা আক্রমণ করেন। দুই পক্ষই গোলাগুলি করছে, ঠিক এমন সময় সরুফাকে নির্যাতন করছিল আকবর নামের এক মেজর। গোলাগুলির শব্দ শুনে ঐ অবস্থায় মেজর আকবর দৌড়ে বাহিরে চলে যায়। আর এই সুযোগে সরুফা পালাতে চেষ্টা করলে তাঁর পায়ে গুলি লাগে। সরুফা মাটিতে পড়ে যায়। আর কিছু বলতে পারেন না তিনি।

তিন দিন পর যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে তখন দেখেন, তিনি একটি হাসপাতালে শুয়ে আছেন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি শোয়া থেকে উঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু দেখেন, তিনি আর উঠে বসতে পারছেন না। তখন তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। তাঁর কান্না শুনে বাহির থেকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা দৌড়ে এসে শান্তনা দিয়ে বলেন, নিরাপত্তার জন্য তাঁকে দূরে বিলুনিয়া একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য আগরতলা পাঠাবে।

তখনই উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তিযোদ্ধারাই তাঁকে আগরতলায় নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা করা হয় এবং বিশেষভাবে তৈরি করা ফিতাওয়ালা বুট জুতা দিয়ে দিয়েছে। দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে আসে।

সরুফা পঙ্গু এবং পাকিস্তানি মিলিটারিদের দ্বারা ধর্ষিতা। তাই তাঁর বিয়ে হয়নি। স্বাধীনতার অনেক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। জন্মের কিছুদিন পরই মেয়েটা মারা যায়। দুই বছর সংসার করার পর বিয়েটাও ভেঙ্গে যায়। স্বামী-সন্তানহীন একাকিত্ব জীবনযাপন করছেন।

 

নবনীতা সেন। বিয়ের ১৮/২০ দিন পরই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধের সময় তিনি স্বামীর বাড়িতেই ছিলেন। মে মাসের প্রথম দিকে নবনীতাসহ তার দুই ননদ জবা সেন ও মল্লিকা সেন একই দিনে ধরা পড়েন। মল্লিকার বয়স ছিল খুব বেশি হলে ১২ বছর। আর জবার বয়স ছিল ১৫ কি ১৬ বছর। একই ক্যাম্পে তাদেরকে আটকে রেখে কয়েক শত মিলিটারি তাদেরকে ধর্ষণ করতো প্রতি রাতে। অতিরিক্ত ধর্ষণের কারণে দুই এক মাসের মধ্যেই মল্লিকা মারা যায়। তাদের চোখের সামনে মারা যায় মল্লিকা। দেশ স্বাধীন হলে জবা আর নবনীতাকে উদ্ধার করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। নবনীতা প্রথমে স্বামীর বাড়ি যায়। সেখানে জায়গা না পেয়ে বাবার বাড়িতে যায় । সেখানেও জায়গা হয়নি তার। তারপর উদ্দেশ্যহীনভাবে বাড়ি ছেড়ে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে এক রেলস্টেশনে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তখন তিনি খুব বেশি ক্লান্ত। দীর্ঘ পাঁচ-ছয় মাস টানা ধর্ষণের পর, তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। তখন তিনি গর্ভবতী। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক মাস পরই জন্ম দেয় একটি মেয়ে সন্তান। যেখানে নবনীতা আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই মহিলা তাকে দিয়ে দেহ-ব্যবসা করাতো। তাকে দিয়ে জোর করে এই কাজ করাতো। না করেও কোন উপায় ছিল না। যেখানেই যেত সেখানেই তাকে কুপ্রস্তাব দিতো।

নবনীতা কোনো স্বীকৃতি চান না। তিনি চান তাঁর জীবন থেকে এই কলঙ্কের দাগ মুছে দিয়ে আগের জীবন ফিরে পেতে, আর তার সন্তানের পরিচয়। আমাকে যদি মুক্তিযোদ্ধা বলা হয় তাহলে আমি টাকা পাব, টাকা দিয়ে কি মুছে দিতে পারবে আমার সেই সাত মাসের বন্দী জীবনের কষ্ট। মুছে দিতে পারবে কলঙ্কের দাগ। দিতে পারবে মেয়ের বাবার পরিচয়। আমি মরে যাওয়ার পরও মানুষ বলবে, এই মহিলা পাকিস্তানি আর্মি দ্বারা ধর্ষিতা। আমার মেয়ে মারা গেলে মানুষ বলবে, এই মহিলা জারজ। আমি চাই, এসব কলঙ্কের দাগ মুছে ফেলতে। তারপর না হয় মুক্তিযোদ্ধা হবো।

 

লায়লা বানু। মানুষ বলে নামের শেষে বানু থাকলে নাকি ভাল না। তাই হয়ত আমার জীবনটা এত ছন্দময়। কতটুকু বড়ই ছিলাম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৫ কি ১৬ বছর। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে আমি ধরা পড়ি পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে। যেদিন ধরা পড়ি, সেই রাত থেকে একাধিক সৈন্য আমাকে ধর্ষণ করতো। দিনের বেলায় আটকে রেখে দিতো একটা ঘরে। একবেলা খাবার দিতো। বাহিরে বের  হওয়ার কোনো রকমের সুযোগ ছিল না। বাহিরে বের হব দূরের কথা, বাহিরের পৃথিবী দেখার সুযোগও ছিল না। একসময় দেশ স্বাধীন হয়েছে শুনেছি, কিন্তু নিজের স্বাধীনতা দেখার সুয়োগ হয়নি। পাকিস্তানি সৈন্যরা জোর করে আমাকে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যায়। পাকিস্তান নিয়েও আমাকে দিয়ে এসব করাতো। যা টাকা পেতো, তা সেই মেজরই নিয়ে নিতো। বিনিময়ে আমাকে তিন বেলা খাবার দিতো। থাকতাম সেই মেজরের বাড়িতেই। প্রায় দশ বছরে আমাকে দিয়ে এই সমস্ত নোংরা কাজ করিয়ে হাজার হাজার টাকার মালিক হয়েছে। এই দশ বছরের মধ্যে দুই তিন বার আমার পেটে বাচ্চা আসে। তখন তারাই আমার বাচ্চা নষ্ট করে। তৃতীয় বাচ্চাটার সময় অনেক সমস্যা হয়। কারণ তখন বাচ্চাটা বড় হয়ে যায়। তাই অনেক বড় সমস্যা হয়েছিল। তখন তারা আমাকে হাসপাতালে রেখে চলে যায়। হাসপাতালের বিলও দেয়নি। হাসপাতাল কতৃপক্ষ প্রথমে বুঝতে পারেনি। তাই তারা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিল আমার। আস্তে আস্তে এক সময় বুঝতে পারে, তখন আমি প্রায় সুস্থ। প্রায় সময় তাদেরকে ফোন না কেমন করে যোগাযোগ করেছিল, যারা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। তারা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, আমাকে তারা চিনে না। তখন হাসপাতাল কতৃপক্ষ আমার সঙ্গে কথা বলে। আমার সব কথা শুনে। তখন ধাপে ধাপে তারা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাকে ছেড়ে দিবে এবং তাই করেছে।

 

এবার কথা হ’ল, আমি কোথায় যাব, কি খাব, কোথায় থাকবো, কার কাছে আমি আশ্রয় চাইবো। এসব ভাবতে ভাবতে আমি হাসপাতালের বাহিরে বসে থাকি। তিন দিন বসে থাকি। আর ভিক্ষা করে খাচ্ছি। একদিন এক বাংলাদেশের ড্রাইভার যায় যাত্রী নিয়ে, তখন আমি তাদের কাছে ভিক্ষা চাই। তখন শুনি ঐ ড্রাইভারকে যে টাকা দিচ্ছে সে বাংলায় কথা বলছে। তখন ঐ ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলি। সে আমার সব কথা শুনে আমাকে নিয়ে যায় তাদের বাড়িতে। সেই ড্রাইভারের নাম ছিল মিজান। আমি মিজান ভাই বলে ডেকেছি। সে-ও বোনের মতন দেখতো। কিন্তু কতদিন একজনের উপর থাকা যায়, খাওয়া যায়। তাই আমি ভিক্ষা করতে থাকি। ভিক্ষা করতে করতে একদিন একজন আমাকে তার বাড়িতে ঝি-এর কাজ করার জন্য প্রস্তাব দেয়, আমি রাজি হয়ে যাই। ঐ বাসায় কাজ করতে করতে একজনের সঙ্গে কথা হয়। তখন তাকে আমি সব বলি। সে আমাকে সাহায্য করবে বলে কথা দেয়। সে কোন দেশের বলতে পারবো না। কিন্তু কেন যেন সে আর তার কথা রাখতে পারেনি।

 

যে বাড়িতে থাকতাম সেই বাড়িতে অনেক লোক ছিল। প্রায় ১৯/২০ জন, যৌথ পরিবার। ঐ বাড়ির একটি মেয়ে ছিল জুলিয়ানা জুলি। সে খুব ভাল মনের ছিল। সে সব সময় আমার প্রতি সদয় ছিল। সময় সুযোগ হলেই সে আমার সঙ্গে কথা বলতো। আমিও তাকে আমার সব কথা মন-প্রাণ খুলে বলি। সে আমার সব কথা শুনে আমাকে কথা দেয়, আমার জন্য একটা কিছু করবে। সেই জুলি আপা আমাকে আরেক জনের কাছে পাঠান। সে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার পাসপোর্ট করে দিয়েছে এবং একসময় আমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে এসে আমি আমার বাড়ি কুমিল্লা জেলায় যাই। অনেক খুঁজে বাড়ি বাহির করি। কারণ ততদিনে বাড়িতে অনেক পরিবর্তন চলে এসেছে। বাড়িতে গিয়ে জানতেপারি, বাড়িতে কেউ নেই। বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল, বাবাকে মেরে ফেলেছিল। মা-ভাই-বোনদের খবর জানি না। যখনই মা-ভাই-বোনদের কথা জিজ্ঞাসা করি, তখনই মানুষ জিজ্ঞাসা করে, আমি কে, কি আমার পরিচয়।

 

একদিন একজন বলছেন, আমার ছোট ভাই মতিনকে তিনি চিনেন ও জানেন, তার ঠিকানাও দিতে পারবেন। তখন আমি তার সঙ্গে যাই। গিয়ে দেখি অন্য পরিবেশ। ১৫/২০ জন যুবক একটা ঘরের ভেতরে বসা। আমাকে দেখেই তাদের হাবভাব যেভাবে তারা প্রকাশ করেছে, তা দেখে খুব কষ্ট পেলাম। তারা জোর করে আমাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করছে। আমি রাজি না হওয়ায় খুব বেশি খারাপ ভাষায় আমার সঙ্গে কথা বলছে। তাদেরই একজন আমাকে সুযোগ করে দেয়। তখন আমি সেই ঘর থেকে বাহির হয়ে এলোপাথারি দৌড়াতে থাকি। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি একসময় বর্ডারের কাছে চলে আসি। বুঝতে পারি এটা বর্ডার। মনে মনে ভাবলাম, আমি যদি এই কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ঐপারে যেতে পারি, তখন হয়ত আমাকে কেউ চিনবে না। না চিনলে কেউ এমন ভয়াবহ প্রস্তাব দিবে না। সুযোগ বুঝে আমি কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে, দেশের সীমানা পার হয়ে ত্রিপুরায় চলে আসি।

 

বাংলাদেশের সীমানা পার হওয়ার পর, একজনের কাছে আশ্রয় পেয়েছি। যিনি আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন, তার নাম অর্পিতা দাস। তিনি খুব বয়স্ক, ভিক্ষা করে খায়। আমার সব কথা শুনেই তার ডেরায় আশ্রয় দিয়েছে। তাকে আমি দিদি বলে ডাকলাম। দিদি একদিন আমাকে বললেন, আমার এখানে থাকতে হলে হয় তোকে শাঁখা, সিঁদুর, পলা পরতে হবে, না হয় সাদা থান পরিধান করে বিধবা সেজে থাকতে হবে। দিদির কথা মতন আমি সাদা থান পরি আর ভিক্ষা করি। সেই থেকে সাদা থানই পরি আর দিদির সঙ্গেই থাকি। দিদি মারা গিয়েছেন প্রায় চার-পাঁচ বছর তো হবেই। দিদি মারা যাওয়ার পর এই ঘরের মালিক আমি হলাম। এখানে প্রায় ১৪/১৫ জন আছে, সবাই আমরা ভিক্ষা করি।

 

আমার শরীর খুবই খারাপ। অতিরিক্ত ধর্ষণের ফলে আমার গোপনাঙ্গে ঘাঁ হয়ে পঁচন ধরেছিল। মাঝখানে বেশ কয়েক বছর ভাল ছিলাম। আজ দুই তিন বছর হয় আমার অবস্থা খুব খারাপ। সারাক্ষণই রক্ত ঝরে। একবার ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছে, আমার ঐখানে অনেক বড় ক্ষত, অনেক বড় অপারেশন লাগবে। এর জন্য অনেক টাকার দরকার। কোথায় পাব টাকা, তাই চিকিৎসা হয় না। শরীর ভর্তি জ্বর থাকে সারাক্ষণ। আমার শরীর বলে দিচ্ছে, আমার সময় আর বেশি দিন নেই। যেকোন সময় শেষ হয়ে যাব। তাই ভাল, যে কষ্ট পাচ্ছি তার চেয়ে মরে গেলে অনেক ভাল।

 

কিন্তু বড় সাধ জাগে, যদি একবার, শুধু একবার, আমার মা-বাবা, ভাই-বোনদের কেউ যদি বেঁচে থাকে,  তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারতাম। কিন্তু জানি, তা হয়তো সম্ভব না। কারণ, তাদের কোন সন্ধানই আমার জানা নেই।

 

শত শত পাকিস্তানিরা একটা ঘরের ভেতর আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে। শুধু তাই না, পাকিস্তানিরা যাওয়ার সময় আমাকে নিয়েও গিয়েছে। ঐখানে নিয়ে গিয়েও এমন কষ্ট দিয়েছে। দেশ স্বাধীন হ’ল। সেই স্বাধীন দেশে আমার ঠাঁই মিলেনি। আমি নামাজ পড়ি ঘরে। কিন্তু বাহিরে তো জানে আমি হিন্দু, বিধবা। আমি জানি না, আমি মারা গেলে আমাকে পোড়াবে, না মাটি দিবে। আমি চাই, আমার কবর হোক। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী গোসল, কাফন পরিয়ে, জানাজা দিয়ে দাফন করা হোক। এটাই আমার শেষ চাওয়া।

বাংলাদেশ আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা দিয়েছে। দেরিতে হলেও আজ নির্যাতিতা, ধর্ষিতা নামটি মুছে তাঁদেরকে বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছে। সেই সাথে ভাতাসহ সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

 

                   

লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক।

Header Ad

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের এ কুশল বিনিময় হয়।

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া পৌঁছালে উপস্থিত সবাই তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা তার পাশে এসে দাঁড়ান এবং শারীরিক খোঁজখবর নেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের অভিনন্দন জানান এবং দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় এই ৩ উপদেষ্টা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দোয়া চান এবং সরকারের সংস্কার কাজে তার সর্বাত্মক সহযোগিতা চান।

এদিকে সেনাকুঞ্জে গেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। একযুগ তিনি আসার সুযোগ পাননি। আমরা গর্বিত এই সুযোগ দিতে পেরে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

Header Ad

দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

ছবি: সংগৃহীত

আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আজকেও ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩ হাজার ৬৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গয়নার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকায়। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৬ টাকায়।

এর আগে, সবশেষ গত ১৯ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় টানা চার দফা কমার পর ভরিতে ২ হাজার ৯৪০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে গত ২০ নভেম্বর থেকে।

এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৫১ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ৩০ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার।

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম
‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত