প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করে ২০-২৫ হাজার টাকা ইনকাম
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের ১৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এরপরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। জানা যায়, কিভাবে চক্রটির সদস্যরা টিকিট কালোবাজারি করে প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করে ২০-২৫ হাজার টাকা ইনকাম করে আসছিলেন।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অনেকেই এটিকে একটি অল্প পুঁজির ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে। রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাচালক ও দিনমজুরদের টিকিট কাটার লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে টিকিট কাটা হতো। যেহেতু প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে চারটি টিকিট দেয়া হয়। এই ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে চারটি করে টিকিট সংগ্রহ করার বিনিময়ে ১০০ টাকা করে দেয়া হতো। এভাবেই চক্রটির সদস্যরা প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করে ২০-২৫ হাজার টাকা ইনকাম করে আসছিল।
তিনি বলেন, ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনিয়ে আসত তাদের মজুদকৃত কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়তো। সুযোগ বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকিটের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দিতো তারা। ঈদসহ বিভিন্ন উপলক্ষে ছুটিকে কেন্দ্র করে গ্রেফতাররা প্রতিটি টিকিট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করতো। সাধারণত প্রতিটি টিকিট তারা দেড় গুণ থেকে দুই গুণ বেশি দামে বিক্রি করতো। এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ গ্রেফতাররা নিতো এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেয়া হতো।
তিনি আও বলেন, শুধু স্টেশনের আশেপাশের মানুষই না, চক্রটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতো। এমনকি স্টেশনে থাকা তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিটও সংগ্রহ করতো। সেসব টিকিটের মূল্য কাউন্টারের বুকিং কর্মচারীদের সাথে তারা ভাগ করে নিতো। এভাবে গ্রেফতাররা অবৈধভাবে বিভিন্ন পন্থায় বিপুল সংখ্যক ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতো। যার ফলে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি রেলওয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা এই কালোবাজারির বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি, যারা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এমন কিছু নামও পেয়েছি। তাদের বিষয়ে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবো। প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে এক হাজার ২৪৪টি আসনের টিকিট, ১৪টি মোবাইলফোন এবং টিকিট বিক্রির নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- সেলিম (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), হারুন মিয়া (৬০), মান্নান (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু (৫০), ফারুক (৬২), শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), জুয়েল (২৩), আব্দুর রহিম (৩২), উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), মোর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২) ও জোবায়ের (২৫)।
এদের মধ্যে সেলিম ও উত্তম চন্দ্র দাস ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির দুই হোতা, যাদের নিজেদের ‘সেলিম সিন্ডিকেট’ ও ‘উত্তম সিন্ডিকেট’ নামে পরিচিত।