মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া ভয়ংকর মাদক ফেন্টানিলের কাঁচামাল সরবরাহে ভারত ও চীন রাষ্ট্রীয়ভাবে জড়িত বলে দাবি করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বার্ষিক হুমকি মূল্যায়ন (ATA) প্রতিবেদন। মঙ্গলবার মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক (DNI) তুলসী গ্যাবার্ডের দপ্তর থেকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ও চীন অপরাধী চক্রগুলোর কাছে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ফেন্টানিল তৈরির রাসায়নিক কাঁচামাল সরবরাহ করছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চীন ও ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধী সংগঠনগুলো মাদক উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ও সরঞ্জাম পেয়ে থাকে। এর মধ্যে অবৈধ ফেন্টানিল তৈরির প্রধান উৎস চীন, এরপর রয়েছে ভারত। এটি প্রথমবারের মতো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চীনের সমতুল্য হিসেবে ফেন্টানিল উৎপাদনের কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করল। গত বছরের প্রতিবেদনে চীনকে প্রধান সরবরাহকারী বলা হলেও ভারত থেকে সীমিত পরিমাণে রাসায়নিক সংগ্রহ করা হয় বলে উল্লেখ ছিল।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেন্টানিল সমস্যাকে তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে নিয়েছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমেরিকায় ফেন্টানিলের মহামারি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত তাঁর প্রশাসন বিশ্রাম নেবে না।’ এরই অংশ হিসেবে গত ১ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প ফেন্টানিল পাচারে ব্যর্থতার অভিযোগে চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। পাশাপাশি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
এছাড়া, গত ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া ‘লিবারেশন ডে’ শুল্কের আওতায় ট্রাম্প আরও কিছু দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তবে ভারত এই শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা দ্রুততর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ফেন্টানিলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে প্রাণঘাতী মাদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১২ মাসে এ মাদকের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ৫২ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ভারত ও চীনের ভূমিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তাদের ‘রাষ্ট্রীয় অভিনেতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যারা মাদক চক্রকে রাসায়নিক সরবরাহ করছে।