গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরার সাংবাদিক নিহত

ছবিঃ সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পৃথক ইসরায়েলি হামলায় দুই গণমাধ্যম কর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে আল জাজিরার একজন সাংবাদিকও রয়েছেন। উত্তর গাজায় আল জাজিরার নিহত ওই সাংবাদিকের নাম হোসাম শাবাত। এই ঘটনাটি আবারও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরেছে। গাজায় সাংবাদিকদের কাজ করতে গিয়ে যে ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) আল জাজিরা একটি প্রতিবেদনে জানায় যে, ২৩ বছর বয়সী হোসাম শাবাত উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার পূর্ব অংশে তার গাড়িতে হামলার শিকার হন। শাবাত আল জাজিরার মুবাশ্বার বিভাগের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন এবং তার গাড়িতে হামলার ফলে তিনি নিহত হন। তার সহকর্মী তারেক আবু আযম জানিয়েছেন যে, শাবাত আগেও একবার ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি গাজায় সংবাদ সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন।
হোসাম শাবাত তার শেষ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছিলেন, “যদি আপনি এটি পড়ছেন, তাহলে এর মানে আমি নিহত হয়েছি — সম্ভবত ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি।” শাবাত আরও লিখেছেন, তিনি ১৮ মাস ধরে গাজার পরিস্থিতি নথিভুক্ত করেছেন এবং প্রতিটি মুহূর্ত তার জনগণের পক্ষে উৎসর্গ করেছেন। তিনি গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেছিলেন যে, "প্রতিটি দিন ছিল বেঁচে থাকার লড়াই" এবং কখনোই তিনি তার জনগণের পক্ষ ত্যাগ করেননি।
শাবাত তার পোস্টে আরও বলেন, “আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি: গাজা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করবেন না। বিশ্বকে চোখ এড়াতে দেবেন না। আমাদের গল্প বলতে থাকুন যতক্ষণ না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়।” এই ভাষায় তিনি গাজার স্বাধীনতা এবং সত্য প্রকাশের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে, ২৪ মার্চ দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্যালেস্টাইন টুডের সাংবাদিক মোহাম্মদ মনসুরও নিহত হয়েছেন। তিনি তার পরিবার, স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে বাসায় ছিলেন যখন হামলা চালানো হয়। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায় যে, এই দুই সাংবাদিকের মৃত্যুতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত মিডিয়া কর্মীর সংখ্যা বেড়ে ২০৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
গাজার মিডিয়া অফিস (জিএমও) এক বিবৃতিতে এই হত্যাকাণ্ডগুলোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং বিশ্ব মিডিয়া ও প্রেস অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়েছে, গাজায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই পদ্ধতিগত হামলা ও হত্যার বিরুদ্ধে তাদের নিন্দা প্রকাশ করতে। এই ঘটনা আবারও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
