শেখ হাসিনার ভারত সফরের ৭ সমঝোতা চুক্তির বিস্তারিত
শেখ হাসিনার ভারত সফরের ৭ সমঝোতা চুক্তির বিস্তারিতবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ ভারত সফরকালে ঢাকা ও দিল্লীর মধ্যে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে সাতটি সমঝোতা চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। শেখ হাসিনা দুই দেশের সম্পর্কের পুণঃরুজ্জীবন ও ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী করতে চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে গিয়েছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ও প্রদত্ত একটি বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তিগুলোর তালিকা।
১. জলশক্তি মন্ত্রলালয় (ভারত) ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ) একই সীমান্ত নদী ‘কুশিয়ারা’ থেকে পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে হিস্যাগত চুক্তি করেছে। ভারতীয় পক্ষে মন্ত্রণালয়ের সচিব পঙ্কজ কুমার এবং তার প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার স্বাক্ষর করেছেন।
২. ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়গুলো ভারতে বাংলাদেশী রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য চুক্তি করেছেন। এখানে ভারতের রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় কুমার ত্রিপাঠি ও ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান স্বাক্ষর দিয়েছেন।
৩. ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে আইটি ব্যবস্থা যেমন এফওআইএস (ফ্রেইট অপারেশনস ইনফরমেশন সিস্টেম) ও অন্যান্য আইটি ব্যবস্থা বাংলাদেশ রেলওয়েকে সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন ভারতের রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় কুমার ত্রিপাঠি ও ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।
৪. ভারতের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি ও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে বাংলাদেশের বিচারিক কর্মকর্তাদের ভারতে প্রশিক্ষণ ও স্বক্ষমতা বাড়ানোর চুক্তিতে ভারতের বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত বিক্রম কে. দ্বোরাইস্বামী এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল মোহা. গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষর করেছেন।
৫. বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় ভারতের কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিয়াল রিসার্চের সঙ্গে বাংলাদেশ কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রিসার্চের চুক্তিতে স্বাক্ষর দিয়েছেন ভারতীয় অংশের ডিজি ড. এন. কালাসিলভি ও বাংলাদেশ অংশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. শাহজাহান মাহমুদ।
৬. মহাকাশ প্রযুক্তিগত এলাকাগুলোতে সমঝোতা সহযোগিতা চুক্তিতে ভারতের সরকারী নিউস্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রাধাকৃষ্ণান এবং ড. ড. শাহজাহান মাহমুদ স্বাক্ষর করেছেন।
৭. প্রসার ভারতী নামের ভারতের সরকারী টিভি ও বাংলাদেশের সরকারী টিভি বিটিভির মধ্যে সম্প্রচারক্ষেত্রে সহযোগিতায় স্বাক্ষর করেছেন প্রসার ভারতীর সিইও মৈনাক কুমার আগারওয়াল ও বিটিভির মহাপরিচালক সোহরাব হোসাইন।
এছাড়াও এখনো পর্যন্ত ঘোষিত হয়নি এমন প্রকল্পগুলোর বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিস্তারিত প্রদান করেছেন। সেগুলোর মধ্যে আছে ‘মৈত্রী পাওয়ার প্ল্যান্ট’, দুই দেশের মধ্যে ‘রূপসা ব্রিজ’র উদ্বোধন এবং ‘খুলনা-কুশিয়ারা যৌথ রেলওয়ে লাইন লিংক প্রজেক্ট’ ইত্যাদি।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন তাদের দপ্তরের মাধ্যমে।
নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্র সেগুলোর মধ্যে আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমানবিক শক্তি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর।
মোদি আরো যুক্ত করেছেন, আলোচনা হয়েছে দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যুত প্রবাহ লাইনগুলোর বিনিময়ের বিষয়ে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারত ও বাংলাদেশ অনেকগুলো চোখে পড়ার মতো বিশিষ্ট বিষয়ে স্থিরসংকল্প গ্রহণ করেছে। সেগুলোর মধ্যে ‘তিস্তার পানি ভাগাভাগির সন্ধিপত্র’ আছে। তিনি বলেছেন, ‘এই সমস্যা দ্রুত অবসিত হবে।’ তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকট ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হলো ভারত এবং দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলো প্রতিবেশীদের মধ্যে কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হয়েছে।’
ওএফএস/এএস