আবারও যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের আবারও যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। বিশ্ব নেতাদের কাছে আমি আহ্বান করব যুদ্ধ বন্ধ করুন। যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু ও নারীরা। তাই বলব যুদ্ধ বন্ধ করুন।’
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া উদ্বোধনী ভাষণে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আঘাত আসবে, ষড়যন্ত্র আসবে। সেগুলো মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করেছিলাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম। যমুনা সেতুসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছিলাম।’
কিন্তু ২০০১ এর নির্বাচনে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। কেন পারিনি? সে বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০৬ এর নির্বাচনের আগে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ফখরুদ্দিন সরকার জনগণের দাবির মুখে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্বাচনে আমরা নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে ক্ষমতায় আসি। তারপর থেকে আমরা দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নানান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, তার সরকার উপবৃত্তি চালু করেছে। মুক্তিযুদ্ধাদের ভাতা বাড়িয়েছে। সামজিক নিরাপত্তাখাতে নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আগে নির্বাচন কী ছিল, ১০ হোন্ডা ২০টা গুণ্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাকে জেলে পাঠালেও তারা বেশ কিছু কাজ করেছিল। তারা খালেদা জিয়ার ভুয়া ভোটার তালিকা বাতিল করে ছবিযুক্ত স্বচ্ছ ভোটার তালিকা করেছে। আমাদের স্লোগান ছিল আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। আমরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করে দিয়েছি। তার আলোকেই কমিশন গঠন করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন সরকার গঠন করলাম তখন মাত্র সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল। আমরা সেটিকে ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে মহামারি কোভিট, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞা সব মিলিয়ে আমাদেরও পৃথিবীর অন্য দেশের মতো সংকটে পড়তে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা গৃহহীন, ভূমিহীনদের জন্য ঘর করতে চেয়েছিলেন। আমরা সেটি শুরু করেছি ১৯৯৬ সাল থেকে। আমরা প্রতিটি ভূমিহীন মানুষকে জমি ও ঘর বানিয়ে দিয়েছি।’
পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আমরা যদি দুর্নীতি করতাম তাহলে দেশের জন্য কিছুই করতে পারতাম না। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছি। শুধু পদ্মা সেতু নয়, দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। চতুর্থটা হচ্ছে কক্সবাজারে। আমরা ১০০টা সেতু এক সঙ্গে উদ্বোধন করেছি। ১০০টা সড়ক উদ্বোধন করেছি। এগুলো কে করেছে- আওয়ামী লীগ সরকার।
কোভিড-১৯ কালে আমরা বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিয়েছি। বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছি। হাসপাতালগুলোতে কোভিডের জন্য বেড করে দিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ। এসব প্যাকেজে সাত কোটি ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রণোদনার সুবিধা পেয়েছে। আমরা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে প্রণোদনা দিয়েছি।
বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনার জনগণ না খেয়ে থাকবে না। কষ্টে থাকবে না। আমি সমস্ত কিছু নিয়ে আপনার জনগণের পাশে থাকব।’
বক্তব্যের শুরুতে সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা প্রথমেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকসহ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আব্দুর রশদি তর্গবাগীশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক, জোহরা তাজউদ্দীনসহ আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতাদের। তিনি স্মরণ করেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ নিহত সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এনএইচবি/এমএমএ/