'বেশি দামে গম আমদানি ও গ্যাসকূপ খননের চুক্তি জনস্বার্থ পরিপন্থী'
বাজার মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি দামে গম আমদানি ও গ্যাসকূপ খননের চুক্তি জনস্বার্থ পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এজন্য জবাবদিহিরও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) টিআইবি’র এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি পর্যায়ে ক্রয় প্রক্রিয়ায় বেসরকারি তৃতীয় কোনো পক্ষের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই, তথাপি গম আমদানিতে 'ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক বিডি' নামক প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার যে সুযোগ তৈরি করা হয়েছে, তা বেআইনি। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স আবিস্কৃত ভোলার গ্যাস ফিল্ডের কূপ খননের জন্য তিন গুণ বেশি ব্যয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে একই প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা কাকতালীয় কোনো বিষয় নয়, বরং উভয় ক্ষেত্রেই একটি অসাধু স্বার্থান্বেষী ও সুযোগসন্ধানী চক্রকে সুপরিকল্পিতভাবে অনৈতিক ও অতিমুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে আজ এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ‘কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানির বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তা দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী সংকট তৈরি করেছে, যা মোকাবিলায় সরকার আর্থিকখাতে নানাবিধ বিধি-নিষেধ আরোপের পাশাপাশি রাজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে যৌক্তিভাবে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি গ্রহণ করেছে। সেই একই সময়ে বিদ্যমান আইন অমান্য করে আন্তর্জাতিক চলতি বাজার মূল্য থেকে অনেক বেশি দামে খাদ্যপণ্য আমাদানিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত প্রডিনটর্গকে কার্যাদেশ দেওয়ার ঘটনায় আমরা হতবাক হয়েছি।
তারচেয়েও বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, মাত্র ১ লাখ টন গম চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়া প্রতিষ্ঠান, কোন যাদুবলে ৫ লাখ টন গম সরবরাহের কাজ পেলো এমন প্রশ্ন রেখে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আবার খাদ্যপণ্য আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হয়েও কীভাবে তৃতীয় একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সরকারি পর্যায়ের ক্রয় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে জড়িত হবার সুযোগ পেলো? সঠিকভাবে বাজার যাচাই না করেই কীভাবে বাড়তি দামে গম কেনার সিদ্ধান্ত হলো এবং এই ক্রয় পরিকল্পনা দ্রুততার সাথে অনুমোদন পেলো? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি।
গমের বাড়তি দামের কারণেই সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য একটি দেশ রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রডিনটর্গের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম যখন কমছে, তখন বাড়তি দামে একই প্রডিনটর্গের সঙ্গে চুক্তির পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীসহ সংশ্লিষ্ট একশ্রেণির সুবিধাভোগী চক্র যে যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, তা সহজেই বোধগম্য। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অজুহাতে বাড়তি দামে গম কেনার এই ঘটনা সংকটকালীন সময়ে সুযোগসন্ধানী চক্রের স্বার্থসিদ্ধির একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ, বিশেষকরে এ কারণে যে, বাড়তি দামে গম কেনার সাথে জড়িত আলোচিত 'ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক বিডি' প্রতিষ্ঠানটি তিন গুণ বেশি মূল্যে বিদেশি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের সঙ্গে গ্যাসকূপ খননের চুক্তিরও সুবিধাভোগী।’
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার কারণে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির চাপে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে, তখন জ্বালানি নিরাপত্তার নামে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স আবিষ্কৃত ভোলার গ্যাস ফিল্ডে তিনটি নতুন কূপ খননের জন্য প্রতিটি কূপের ক্ষেত্রে বাপেক্সের ৮০ কোটির বিপরীতে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ২৪০ কোটি টাকায় চুক্তি স্বাক্ষর সংশ্লিষ্ট মহলের ক্ষমতার অপব্যবহার বলে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘সরকারি আর্থিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছতার নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং বাপেক্সের সক্ষমতাকে উপেক্ষা করে কেন তিন গুণ বেশি মূল্যে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি করা হলো, তা জনস্বার্থে খতিয়ে দেখা জরুরি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যোগসাজশের দুর্নীতির এই যুগলবন্দির ফলে যারা প্রত্যক্ষ লাভবান এবং যারা এর পরোক্ষ সুবিধাভোগী, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
আরইউ/এএস