ডিএমপিতে কে হচ্ছেন শফিকুলের উত্তরসূরি
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ অক্টোবর। ওই দিনই অবসরে যাচ্ছেন তিনি।
তার অবসরের এখনো ৭৮ দিন বাকি। কিন্তু ইতোমধ্যেই নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন শফিকুল ইসলামের উত্তসূরি বা ঢাকা মহানগর পুলিশের পরবর্তী কমিশনার— এ নিয়ে আলোচনা চলছে পুলিশের নানা মহলে।
তবে যাকেই ঢাকা মহানগর পুলিশের পরবর্তী কমিশনার করা হোক না কেন, সবার আগে বিবেচনায় নেওয়া হবে তার সততা, যোগ্যতা, জবাবদিহিতার বিষয়টি।
পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপির পরবর্তী কমিশনার হতে পুলিশের অন্তত পাঁচ জন কর্মকর্তার নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। তারা হলেন—পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, পুলিশের বিশেষায়িত শাখা এন্টিটেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. কামরুল আহসান, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) এস এম রুহুল আমিন এবং এসবির সাবেক প্রধান বর্তমানে টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপি কমিশনার পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। তাদের দুজনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। মনিরুল ইসলাম ১৫তম এবং হাবিবুর রহমান ১৭তম বিসিএস কর্মকর্তা। পুলিশ কমিশনার হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন এই দুই কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জঙ্গি দমনে মনিরুল ইসলাম অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবাদ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন তিনি। জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে তার অর্জন উল্লেখযোগ্য। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এর প্রধান ছিলেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট গঠনেও মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তার পাশাপাশি সামাজিক ও অপারেশনাল কাজের মাধ্যমে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে তার নামও শোনা যাচ্ছে কমিশনার পদে। ইতোপূর্বে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে উপ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন-ডিসিপ্লিন) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
সাহস, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং দু’বার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হয়েছেন।
পেশাগত ও মানবিক কাজের বাইরে সফল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। পুলিশের সেবার পাশাপাশি মানুষের সেবা করার জন্য গড়েছেন উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি সেবামুখী প্রতিষ্ঠান। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এই দুই কর্মকর্তার বাইরে ডিএমপি কমিশনার হওয়ার তালিকায় আছেন পুলিশের আরেক কর্মকর্তা পুলিশের বিশেষায়িত শাখা অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. কামরুল আহসান। চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া এই পুলিশ কর্মকর্তা ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে (এমবিএ) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগদান করেন। পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সংস্থাপন) ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ট্রেনিং) এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের ‘পুলিশ অ্যাডভাইজার’ হিসেবে সিয়েরা লিওন ও সুদানে দায়িত্ব পালন করেন।
আলোচনায় আছেন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) এস এম রুহুল আমিন। তিনি গোপালগঞ্জের সন্তান রুহুল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১২তম বিসিএস এর মাধ্যমে চাকুরিতে যোগ দেন।
তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আইভরিকোস্ট ও দক্ষিণ সুদানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করেছেন। চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়াও ডিএমপি কমিশনার পদে নাম শোনা যাচ্ছে ১৫তম বিসিএস এর মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি এর আগে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান ছিলেন। বর্তমান টুরিস্ট পুলিশে রয়েছেন। তার গ্রামের বাড়িও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ডিএমপি কমিশনার পদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা তালিকায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে এ পদের জন্য বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করছে মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে যে ৭০ জন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, ওই তালিকা থেকে বেশ কয়েকজনের নামও আছে।
তবে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত আইজিপির সমমর্যাদা হলো ডিএমপি কমিশনারের পদটি। এটি দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদ। দক্ষ ও যোগ্যরাই এই পদের দায়িত্ব পাবেন। তবে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মহল ও মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভূমিকা থাকে।
প্রসঙ্গত, ডিএমপির বর্তমান কমিশনার শফিকুল ইসলাম গত বছরের ৩০ অক্টোবর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার ওই বছরের ২৮ অক্টোবর এক আদেশে তাকে একই পদে এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়।
জানা যায়, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন, সৎ, যোগ্য, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তোলায় তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
কেএম/এনএইচবি/আরএ/