ইতিহাসে বঙ্গমাতা অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের মানুষ: সেলিনা হোসেন
ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে দূরদর্শী চিন্তার বার্তা দিয়েছিলেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার সাহসী বার্তা তাকে ইতিহাসের মানুষ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির সভাপতি, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
তিনি বলেন, ‘জেন্ডার সমতার ইতিহাসে তিনি আমাদের অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের মানুষ।’
রবিবার (৭ আগস্ট) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘বঙ্গমাতা: এ প্যারাগন অব উইমেন লিডারশিপ অ্যান্ড নেশন-বিল্ডিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে এ কথা বলেন সেলিনা হোসেন।
জাতি গঠনে বঙ্গমাতার অবদান ও জীবন দর্শন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডি দুদিনের এ সম্মেলন আয়োজন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সেন্টার ও সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
সেলিনা হোসেন বলেন, ব্যক্তি থেকে রাজনৈতিক জীবনে তিনি জেন্ডার সমতার বলয় তৈরি করেছিলেন। সবক্ষেত্রেই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দুজনের পরিশীলিত জীবনের কোথাও পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যে তৈরি হয়নি। বাংলার জনজীবনে এ এক দিগন্ত বিথারী উদ্ভাসন।
রাজবন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থটি রচনায় বঙ্গমাতার অনুপ্রেরণার কথাও বলেন সেলিনা হোসেন।
জেন্ডার তাত্ত্বিক দৃষ্টির প্রসঙ্গে সেলিনা হোসেন বলেন, সমতার দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে পারিবারিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে দেশ ও জাতির ইতিহাস রচনায় দুজনেরই অবদান রয়েছে। রাজবন্দী স্বামীকে অনুপ্রেরণা দিয়ে সময়ের ছবি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখার উৎসাহ জুগিয়েছেন। সম্পর্কের এই গভীর বোঝাপড়া জেন্ডার সমতার অনন্য উদাহরণ।
মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গমাতার অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা যুদ্ধের অবদানের স্বীকৃতিতে নারীদের বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী নানা ঘটনায় দেখা যায় নির্যাতিত নারীর অনেকের বিয়ে আয়োজনও করেছিলেন। বিয়ের সময় নিজের গলার চেইন খুলে তাদের পরিয়ে দিয়েছিলেন।যুদ্ধ পরবর্তী সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্রান্তিকালেও তিনি নারী-পুরুষের সমতার জায়গায় মহীয়ান রেখেছিলেন। তার ভূমিকা জেন্ডার সমতার আলোকে উদ্ভাসিত। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে তার কোনো ভুল পদক্ষেপ নাই।
জেন্ডার তত্ত্বকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা নিজেদের জীবনে বিস্তার ঘটিয়েছিলেন উল্লেখ করে সেলিনা হোসেন বলেন, বঙ্গমাতার দূরদর্শী চেতনাবোধ সমাজ আকাঙ্ক্ষার স্বপ্ন পূরণ ঘটায়। জাতির ক্রান্তিলগ্নে সঠিক পদক্ষেপ ও দিক-নির্দেশনা কীভাবে সাহসের সঙ্গে উপস্থাপন করতে হয়, সেটাও বঙ্গমাতা শিখিয়েছেন। তিনি আমাদের এই সময়ে খনা, এই সময়ের বেগম রোকেয়া, এই সময়ের চন্দ্রাবতী। তিনি ইতিহাসের মানুষ। জেন্ডার সমতার পূর্ণতার জীবন বৈভবের দিশারী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতার অবদান ও জীবনদর্শন অনুসরণ করে জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন গবেষণার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গমাতা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এর আগে ২০২০ সালের ২৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম সেন্টারটি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে তা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গমাতার অবদান ও জীবনদর্শন অনুসরণ করে সেন্টারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’র পরিচালক অধ্যাপক তানিয়া হক।
এসএম/এমএমএ/