জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর পরই সারাদেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সেসব প্রতিক্রিয়ার কিছুটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে এসেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন তারা। জ্বালানি তেলের দাম নজিরবিহীন বাড়ানোর সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কেউ মেনে নিতে পারছেন না। সরকারের ঘোর সরকার সমর্থক তারাও মনে করছেন এক লাফে এতো দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। কেউ কেউ বলছেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এমন হঠকারি সিদ্ধান্ত।
জ্বালানির এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে তুঘলকিও বলছেন কেউ কেউ। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পরিবহন সেক্টর থেকে শুরু করে সব সেক্টরে। অনেকেই সরকারের এই সিদ্ধান্তকে জনবিরোধী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মনে করছেন।
সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর লিখেছেন, ‘‘বিশ্ব বাজারে যেদিন জ্বালানি তেলের দাম কমলো সেদিন বাংলাদেশ তার ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম বাড়ালো জ্বালানি তেলের; অন্যদিকে মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী বললেন আমাদের জ্বালানি তেল মজুদ চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত আছে। হঠাৎ কি এমন ঘটল জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সরকার কি জানে না এর দোহাই দিয়ে সর্বত্র জিনিসপত্রের দাম বাড়বে আরেক দফা! অর্থনীতি আমি সত্যিই কম বুঝি। বিশেষজ্ঞরা কি আমাকে বুঝাবেন বিষয়টি?’’
মুকিমুল আহসান হিমেল নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন ‘পাপুয়ানিউগিনি, হন্ডুরাসসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের দাম আমাদের চেয়ে কত বেশি, চাটার দল এখনো মনে হয় ওই তালিকা খুঁজে পায় নাই..।’
শাখাওয়াত আল আমিন লিখেছেন ‘জ্বালানির দাম বাড়লে উৎপাদক, ব্যবসায়ী, দোকানিরা পণ্যের দাম বাড়াবে। বেশি দামে কিনে আরও বেশি দামে বেচবে, লস নেই। পরিবহন অর্থাৎ বাস ট্রাক লঞ্চ এমনকি রিকওয়ালাও সমানুপাতে বা বেশি হারে ভাড়া বাড়িয়ে দেবে। তাদেরও লস নেই। মাইনকার চিপায় শালা ফিক্সড ইনকামের মানুষ, অর্থাৎ চাকরিজীবীরা। বছরান্তে বেতন বাড়বে ৫ শতাংশ করে (যদিও সাবার তাও বাড়ে না)। কিন্তু পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়বে তার কয়েকগুণ বেশি! এর নিজেরা অবস্থানে থেকেই দিনদিন দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।’
আব্দুল্লাহ মুয়াজ নামে একজন লিখেছেন ‘টুনু (ছোট) সাইজের একটা কলা, এক পিস কেক ২৫ টাকা নিলো সু…না হয়ে গেলাম।’
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করে সোলায়মান হাজারি নামে একজন লিখেছেন, ‘আপনারা যারা আমেরিকা-ইউরোপের তেলের দামের সাথে বাংলাদেশের তেলের দাম মেলান। সে দেশের মানুষের শ্রম মূল্যের সাথে এদেশের মানুষের শ্রম মূল্য মেলান না কেন?’
রফিকুল ইসলাম নামে আর একজন লিখেছেন ‘ট্যাক্স দেয় জনগণ, সরকার চলে জনগণের টাকায় এখন বিদেশী ঋণ লাগবে সেটাও শোধ হবে জনগণের টাকায়। আর কত চাপ জনগনকে দেবেন? করোনায় ধাক্কা না কাটাতেই মানুষের দৈনন্দিন খরচে এটা অনেক চাপ।’
শুধু সোলায়মান বা রফিকুল না এটি এখন সারা দেশের মানুষের হৃদয়ের কথা। একজন কৃষক যখন মাঠে ফসল বুনতে যাবেন তার হাতটাও ফাঁকা হয়ে যাবে। কয়েক দিন আগেই ইউরিয়া সারের মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। এবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে সেচে প্রভাব পড়বে। যার ফলে কৃষি উৎপাদনও কমতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্বালানি মজুদ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন অনেকে সেই বক্তব্য নিজের ওয়ালে শেয়ার করে ভাইরাল করছেন। সেদিন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমাদের জ্বালানির সংকট নেই। চাহিদার চাইতে বেশি জ্বালানি মজুদ আছে। তাছাড়া অকটেন, পেট্রোল আমাদের কিনতে হয় না। গ্যাস উৎপাদনের সময় বাই প্রোডাক্ট যে অকটেন, পেট্রোল পাই সেটা দিয়ে আমাদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রিও করি।’
সেদিনের বক্তব্যের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের স্বস্তি বিরাজ করছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে হঠাৎ জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে চরম অস্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। এই জ্বালানি বৃদ্ধির ফলে বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম। বাড়বে খাদ্য পণ্যের দাম, সেবামূল্য। পাশাপাশি ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর হিড়িক পরে যেতে পারে। সব দিক দিয়ে দুর্ভোগে পড়বে মানুষ।
এনএইচবি/এএস