শহরের যানজট কমাতে নৌরুট কাজে লাগাতে হবে
সরকারের বদ্বীপ পরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতকে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, ‘শহরাঞ্চলে যানজট কমাতে নৌরুটের সম্ভাব্যতা কাজে লাগাতে হবে। এজন্য মূল ঢাকার সঙ্গে এর নিকটবর্তী অঞ্চল এবং জেলাগুলোর নৌপথের রুট চালু করা অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে পণ্য পরিবহন খরচ কমানো ও সহজতর করা গেলে একটি নিরাপদ পরিবেশবান্ধব ডেলটা অর্জনের অনেকটাই সহায়ক হবে।
শনিবার (৬ আগষ্ট) মতিঝিলে এফবিসিসিআইর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত 'বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০: নিরাপদ, পরিবেশ-বান্ধব ও সমৃদ্ধ বদ্বীপ অর্জনে বেসরকারি খাতের সংযুক্ততা' বিষয়ক সেমিনারে তিনি এ আহ্বান জানান। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. মিজানুর রহমান।
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নে প্রতি বছর গড়ে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে। যার শতকরা ২০ ভাগ বেসরকারি খাত থেকে আসবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে। নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনাসহ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ যত বাড়বে, কাজের গতি ও মান তত বাড়বে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘রাজস্ব কাঠামো আয়মুখী না হয়ে উন্নয়নমুখী হওয়া উচিত। তাই বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্যতম অনুষঙ্গ ড্রেজিংয়ের জন্য অপরিহার্য যন্ত্র ড্রেজারের শুল্কহার পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সরকারের হাতে মাত্র ৩০টি ড্রেজার রয়েছে। কিন্তু এ কাজে ২ শতাধিক ড্রেজার দরকার। ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম শতভাগ বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
ডেল্টা প্ল্যানের বাস্তবায়ন হচ্ছে বলেই দেশে দীর্ঘমেয়াদী বন্যা হচ্ছে না বলে দাবি করে ড. শামসুল আলম বলেন. ‘২০৩০ সাল পর্যন্ত ডেলটা পরিকল্পনার স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ঠিক করা হবে। এসময় দেশের নতুন করে কোন সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ না করে বর্তমান অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হতে হবে। বর্ষার সময় নদীর পানি সমুদ্রে যাওয়ার আগে যদি সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে সারাবছর দেশে পানির কোন অভাব হবেনা, একই সঙ্গে পানি রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
মূল প্রবন্ধে সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সমৃদ্ধ বদ্বীপ অর্জনে ড্রেজিং, ভূমি পুনরুদ্ধার, জাহাজ নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, কৃষি ও সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ব্যাপক ভিত্তিতে সংযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করা গেলে ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানও সহজ হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্ততায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে আরও বেশি সুশাসন নিশ্চিতের তাগিদ দেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো, সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি কমছে, বিপরীতে বাড়ছে মানুষের খাদ্য চাহিদা। তাই বেসরকারি খাত ছাড়া আগামীর স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষিখাত বিনির্মাণ সম্ভব নয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ জানান, ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি বিনিয়োগ দরকার। এজন্য ব্যাক্তিখাতকে ডেল্টা প্ল্যানের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত করার বিকল্প নেই।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, বেসরকারি খাতকে কাজে লাগিয়ে নদী ও সমুদ্র বক্ষে বিপুল পরিমাণ ভূমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এসময় প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ডেল্টা প্ল্যান পরিমার্জন করা দরকার। একই সঙ্গে বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সদস্য সচিব স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, ‘বদ্বীপ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশীদার কারা হবেন তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন আলমগীর, মোঃ হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালক মো. নাসের, আবু মোতালেবসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।
জেডএ/এএস