বাসভাড়া: রবিবার থেকে সংকট বাড়ার শঙ্কা
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে বাসের ভাড়া বাড়া ও বাস কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী জুড়ে বাসযাত্রীদের মধ্যে বিরাজ করছে অসন্তোষ। তবে এই সংকট আগামীকাল রবিবার থেকে তীব্র হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন বাসযাত্রী, বাসচালক ও বাসকর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (৬ আগস্ট) সরেজমিনে বাসযাত্রী, চালক ও বাসকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকাপ্রকাশ'র কাছে এই শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবি জসিম উদ্দিন। তুরাগ বাসে চড়ে সায়দাবাদ থেকে এসে নামলেন রামপুরায়। বললেন, ঈদে ছুটি পাইনি। পরে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে বাড়িতে গেলাম, আজ ঢাকায় ফিরলাম। বাসায় তো ফিরতে হবে। ভাড়া বাড়তি নিচ্ছে এরা, ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা। আজকে তো শনিবার, যাত্রী কম, তাতেই এই অবস্থা, আগামীকাল শনিবার, রাস্তায় যাত্রী বেশি থাকবে, তখন তো বাসের এরা যাত্রীদের আরও পাত্তা দিবে না। মানুষও উপায় না পেয়ে বাসে উঠবে, কী করা, অফিসে তো যেতে হবে!
রাজধানীর কাকরাইলে মোহাম্মদপুরগামী তরঙ্গ প্লাস বাসের কন্ডাকটর খায়রুল ইসলাম বললেন, আমাদের গাড়ি মোহাম্মদপুর পর্যন্ত যায়। সেখান থেকে আবার ছাড়ে। মোহাম্মদপুর থেকে বিভিন্ন রুটে গাড়ি যায়, বেশিরভাগ গাড়িই ছাড়ছে না। কারণ তেলের দাম বেশি, কিন্তু যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে রাজি হয় না। আমরা পাঁচ টাকা করে ভাড়া বাড়িয়েছি। বাড়তি এই ভাড়াই মানুষ দিতে চায় না। মানুষের সঙ্গে ঝামেলা হয়। কিন্তু মালিক পক্ষ বলছে, তেলের দাম বেশি, ভাড়া বাড়াতে হবে। না হলে মনে হয়, আগামীকাল বাস নামাতে দিবে না মালিক। কিন্তু আজ অফিস–আদালত বন্ধ হলেও আগামীকাল রবিবার অফিস খোলা, যাত্রীর চাপ থাকবে, অনেক ঝামেলা হবে মনে হয়।
আরেক বাসের কন্ডাকটর সফিউল্যাহ বললেন, তরঙ্গ প্লাস গাড়ি আছে মনে হয় ৩৪টি। কিন্তু আজকে মনে হয় ২০টির মতো বের হয়েছে। কারণ মালিক বলছে তেলের দাম বেশি, তাই প্রতি ওয়েবিলে ৫ টাকা করে বেশি নিতে বলেছে। কিন্তু যাত্রীরা তা মানছে না। না মানার কারণে, সকালে গাড়ি যা বের হওয়ার হয়েছে, পরে মনে হয় আর গাড়ি বের হয়নি। এই কারণে রাস্তায় গাড়ি কম।
বনশ্রী অভিমুখী বাস রমজানের কন্ডাকটর নাজমুল হাসান রাফিও বললেন, তাদের গাড়ির মালিক বলে দিয়েছেন, প্রতি ওয়েবিলে ৫ টাকা করে ভাড়া বাড়ানোর জন্য। কিন্তু একজন যাত্রী যদি শাহবাগ থেকে বনশ্রী যায়, এখানে তিনটি ওয়েবিলে যাত্রীপ্রতি বাড়তি ভাড়া দিতে হয় ১৫ টাকা। অনেক যাত্রী এটা মানতে চায় না। তবে আগামীকাল রবিবার থেকে যাত্রী বেশি হবে। তাই ঝামেলাও বাড়তে পারে।
রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট এলাকায় তুরাগ বাসের চালক মোহাম্মদ হাসান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ভাড়া যা ছিল, তাই আছে, মানুষ বাড়তি ভাড়া দিতে চায় না। ৫ টাকা করে বাড়তি চাইছি, দেয় না। এই কারণে অনেক গাড়ি বের হয় নাই আজ।
এদিকে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার সকালে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোসহ পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার।
গতরাতে সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে। গতকাল ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা আর পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় গতকাল রাত ১২টা থেকেই। এখন এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে ১১৪ টাকা লাগছে। এক লিটার অকটেনের জন্য দিতে হচ্ছে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পেট্রলের দাম রাখা হচ্ছে ১৩০ টাকা।
এমএ/এএস