কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ে কৃষিমন্ত্রীর ব্যাখ্যা

মেলায় অংশ নিতে নেদারল্যান্ডে কৃষি মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে চারদিকে যখন তুমুল সমালোচনা তখন তার ব্যাখা দিলেন কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ভালো কাজ করি, মহৎ কাজ করি সেটা তো রাষ্ট্রীয় টাকায় হবে। রাষ্ট্রীয় টাকা ছাড়া কীভাবে হবে? আমরা কি বাংলাদেশকে তুলে ধরব না?’
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী জানান, ছয় মাসব্যাপী চলা এই মেলায় সরকারের মোট খরচ বা বাজেট ১০-১২ কোটি টাকা। আর এখন পর্যন্ত মন্ত্রীসহ ৩৭ জন কর্মকর্তা মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কোথায় পেলেন দেড়শ কর্মকর্তা গেছে? যায় নাই। নেদারল্যান্ড আমাদের চেয়ে ছোট দেশ। জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। ওইটাও ডেল্টা, আমাদেরটাও ডেল্টা। কিন্তু আমাদের চেয়ে সাইজে ছোট। এই নেদারল্যান্ড পৃথিবীর মধ্যে কৃষি পণ্যের লার্জেস এক্সপোর্টার প্রসেস অ্যান্ড ফ্রেশ ফলমূলে। তাজা ফলমূল শাকসবজি ফুল এটাও তারা রপ্তানি করে এবং সঙ্গে প্রসেসটাও। তারা আফ্রিকা থেকে আম আফ্রিকা থেকে আনারস। ওই সকল দেশে পাইনাপল হয় না ম্যাংগো হয় না। তারা এগুলো নিয়ে বিদেশে জ্যাম জেলি করে পাঠায়। আমেরিকাতেও পাবেন মেড ইন নেদারল্যান্ড জ্যাম জেলি পাইনাপল এবং ম্যাংগো তারা সেটা বিক্রি করছে।
নেদারল্যান্ডে যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর মধ্যে এক নম্বর। গত ১৬ বছর ধরে এক টানা তারা নাম্বার ওয়ান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশ্বের মধ্যে তারা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। এই মেলার আগে আমরা, প্রাণের প্রধান আহসান চৌধুরী, স্কয়ারের আনসারি, ফ্রেশের মোস্তফা কামাল এবং লিডিং যে সমস্ত কর্পোরেট হাউজ আছে তারাসহ আমরা সেখানে গেছি। ওই দেশের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক করার চেষ্টা করছি। এই মেলার মধ্যে সারা নেদারল্যান্ড না, সারা ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি করেছি।
তিনি বলেন, যে স্টল করেছি সেই স্টলে কীভাবে বিদেশিরা আসছে, ইউরোপিয়ানরা আসছে। এই মেলাটা ১০ বছর পর পর হয় ৬ মাসব্যাপী হচ্ছে। পৃথিবীর ১৩০টা দেশ সেখানে অংশগ্রহণ করছে। এই ধরনের মেলায় কোনোদিন বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে নাই। শুধু ইপিবি গেছে। আমরা কৃষি পণ্যকে বহুমুখীকরণ করতে চাই। শুধু গার্মেন্টেসের উপর নির্ভরশীল থাকলে তো আমরা বিপর্যয়ে থাকব, যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, পাটরে যে কি ডিমান্ড। এই মেলায় দায়িত্ব হলো একজন মন্ত্রীর। সে এখন ওই মেলার কমিশনার। আমরা গেছি আমাদের রিসিভি করেছে। সেখানে ‘বাংলাদেশ ডেতে কালচারাল প্রোগ্রাম হয়েছে রবীন্দ্রসংগীত, নাজ, গান এবং বিদেশিদের এত চাপ ছিল। এই বাংলাদেশকে পৃথিবীর কাছে তুলে ধরবেন না? ইউরোপের কয়টা মানুষ জানে যে বাংলাদেশ বলে একটা দেশ আছে। সেখানে আমাদের কালচারাল প্রোগ্রামে তারা আসছে। প্রতিদিন বিদেশিরা আসছে। ৫০০-৭০০ জন করে আসছে। একটা মেলায় অন্তত দুইজন করে মানুষ লাগে প্রতিদিন। তাদের দেখাতে হয়। এই মেলার উপর একটা ভিডিও একনেক সভায় দেখিয়েছি ও টিজার করেছি।
তিনি আরও বলেন, মেলার উদ্বোধনের দিন ১৫ এপ্রিল প্রচণ্ড শীত ছিল। আমাদের অফিসাররা ছালা টেনে মেলার উদ্বোধন করেছে। কঠোর পরিশ্রম করছে, সারাদিন ভিজিটরদের দেখায় আবার গাছে পানি দেওয়া এবং ময়লা পরস্কার করেছে। আমরা মালিকে পাঠিয়েছি। এটা না জেনে মন্তব্য করেছেন।
ড. রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে জানেন। এই মেলা সারা ইউরোপে সাড়া পড়েছে। খরচ হয়েছে ১২ কোটি।
এ সময় পুনরায় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয় আমাদের দেশের অর্জন কী জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কিসের রাষ্ট্রীয় অর্থ? দাড়ান প্লিজ। রাষ্ট্রীয় অর্ধ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয় টাকা পাবে কোথায়? আমরা যদি ভালো কাজ করি মহৎ কাজ করি সেটা তো রাষ্ট্রীয় টাকাই যাবে। রাষ্ট্রীয় টাকা ছাড়া কিভাবে হবে। গাছে পানি দেওয়া মানে কি। আমিও গেছি।
পরে পাশে থাকা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, দশ দিন পর পর দুই জন করে যাচ্ছে। আগে ছিল প্রত্যেক দিনে ৩ জন। যখন সার্কুলার পেলাম কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে, তখন দুই জন অফিসারকে দিয়েছি। ওখানে প্রতিদিন ৬০০-৭০০ জন মানুষ আসে তাদের দেখাতে হয়।
বিষয়টা এত হীন বা হাস্যরস করছেন কেন? গাছে পানি দেওয়ার কথা বলে কি নিজের দেশের ছোট করা হচ্ছে না? কৃচ্ছ্রসাধন করছি বলে কি লাইট অফ করে ঘরের ভেতরে বসে থাকব। ১০ বছর অপেক্ষা করতে পরবর্তী মেলার জন্য। যে মেলা একটা প্লাটফর্ম, ওপেন ফোরাম বাংলাদেশকে পরিচিত করার জন্য ছাড়ব কেন আমরা? ৩২ জনকে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রীর টিমে ৫ জন। মোট ৩৭ জন।
এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। সেখানে কোর্ট থেকে বলে দিয়েছেন বাংলাদেশ এখন আর সেই বাংলাদেশ নাই। বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে দেন। এগুলো একটা বিষয় হলো?
মন্ত্রী বলেন, মেলা শেষ হোক। এটা থেকে কী অর্জন হয়েছে এ রকম সংবাদ সম্মেলন করে অক্টোবরে জানাব। অক্টোবরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই মেলা চলবে। ইস্ট ওয়েস্ট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হুইল চেয়ারে বসে বাংলাদেশে আসবে। অলরেডি তারা একটা পেঁয়াজের জাত দিয়েছে এসিআইকে। সেটা সামারেও হয় গ্রীষ্মেও হয়। আমাদের পেঁয়াজের গড় উৎপাদান বিঘা প্রতি ১১ থেকে ১২ টন। আর নেদারল্যান্ডের পেঁয়াজের উৎপাদন ৩২ টন। অক্টোবরে তারা বাংলাদেশে আসবে। পাটের একটা অর্ডার হয়েছে ১০০ কোটি টাকার। আরও অর্জন হবে।
এসএম/এমএমএ/
