বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের যাত্রা শুরু
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তার অসামান্য কর্মজীবন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সোমবার (১ আগস্ট) থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে এই জাদুঘরের। এ দিন দুপুর ১২টার দিকে গোপালগঞ্জ স্টেশনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে বিকাল ৫টার দিকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রেল জাদুঘরের প্রদর্শনীর শুভ সূচনা করেন।
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ব্যতিক্রমী এই জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্যোগে একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ রেল কোচের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই জাদুঘর সবাই ঘুরে দেখতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা স্টেশনগুলোতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকবে এবং ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রদর্শন করা হবে। গোপালগঞ্জে এই জাদুঘরটি পাঁচদিন থাকবে এবং সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সবাই তা পরিদর্শন করতে পারবেন।
জাদুঘরটি কোন রেলস্টেশনে কত দিন থাকবে রোববার (৩১ জুলাই) তার একটি শিডিউল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
শিডিউল অনুযায়ী, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে একটি জাদুঘর থাকবে ১ থেকে ৫ আগস্ট, ভাটিয়ারী স্টেশনে থাকবে ৫ থেকে ৭ আগস্ট, সীতাকুণ্ড স্টেশনে থাকবে ৭ থেকে ৯ আগস্ট, চিনকিআস্তানা স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১১ আগস্ট, ফেনী জংশনে থাকবে ১১ থেকে ১৫ আগস্ট, গুণবতী স্টেশনে থাকবে ১৪ থেকে ১৭ আগস্ট, নাঙ্গলকোর্ট স্টেশনে থাকবে ১৬ থেকে ১৯ আগস্ট, লাকসাম জংশনে থাকবে ১৮ থেকে ২৩ আগস্ট, চৌমুহনী স্টেশনে থাকবে ২৪ থেকে ২৫ আগস্ট, মাইজদীকোর্ট স্টেশনে থাকবে ২৬ থেকে ২৭ আগস্ট, নোয়াখালী স্টেশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ আগস্ট, চাঁদপুর স্টেশনে থাকবে ৩০ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর, কুমিল্লা স্টেশনে থাকবে ২ থেকে ৪ নভেম্বর, আখাউড়া স্টেশনে থাকবে ৫ থেকে ৮ নভেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ নভেম্বর, ভৈরব স্টেশনে থাকবে ১১ থেকে ১২ নভেম্বর, নরসিংদী স্টেশনে থাকবে ১৩ থেকে ১৪ নভেম্বর, টঙ্গী জংশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৬ নভেম্বর এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে থাকবে ১৭ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।
অন্যদিকে, আরেকটি কোচ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের গোপালগঞ্জ স্টেশনে থাকবে ১ থেকে ৫ আগস্ট, কাশিয়ানী স্টেশনে থাকবে ৬ থেকে ৭ আগস্ট, ভাটিয়াপাড়া ঘাট স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ আগস্ট, মধুখালী জংশনে থাকবে ১২ থেকে ১৩ আগস্ট, রাজবাড়ী স্টেশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৭ আগস্ট, ফরিদপুর স্টেশনে থাকবে ১৯ থেকে ২০ আগস্ট, পাংশা স্টেশনে থাকবে ২২ থেকে ২৩ আগস্ট, কুমারখালি স্টেশনে থাকবে ২৫ থেকে ২৬ আগস্ট, কালুখালী জংশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ আগস্ট, কুষ্টিয়া স্টেশনে থাকবে ৩০ থেকে ৩১ আগস্ট, খুলনা স্টেশনে থাকবে ২ থেকে ৭ নভেম্বর, দৌলতপুর স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ নভেম্বর, নোয়াপাড়া স্টেশনে থাকবে ১২ থেকে ১৩ নভেম্বর, যশোর স্টেশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৮ নভেম্বর, বেনাপোল স্টেশনে থাকবে ২০ থেকে ২১ নভেম্বর, নাভারণ স্টেশনে থাকবে ২২ থেকে ২৩ নভেম্বর, মোবারকগঞ্জ স্টেশনে থাকবে ২৫ থেকে ২৬ নভেম্বর, দর্শনা স্টেশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ নভেম্বর এবং চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রেলের বগিতে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি নির্মাণ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ কোচে একই জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে।
জাদুঘর দুটিতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের উপর নির্মিত তথ্যবহুল ও মনোমুগ্ধকর ১২টি পৃথক চিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্রের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে।
কোচের একপাশের দেয়ালের ছয়টি ভাগে রাখা হয়েছে কিংবদন্তির প্রথম প্রহর, ধ্রুবতারার প্রথম কিরণ, নক্ষত্র হওয়ার পথে, বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু, ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র, মুক্তির স্বপ্নের সূচনা শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত। এখানে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তার ছাত্রজীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি এবং গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে উঠার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে আরও রয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ননীয় নির্যাতন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের ইতিহাস। আরেক পাশের দেয়ালে থাকা ছয় ভাগে রয়েছে, দুর্বার পথচলা, নিপীড়িতদের কাণ্ডারি, এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, মুক্তি, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার কথা, স্বপ্নগড়ার দিনগুলো, যে আলো নেভেনি আজও এমন শিরোনামে শিল্প প্রদর্শনী। এতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও জাতির গৌরবোজ্জ্বল, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান দর্শকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। দেখার সঙ্গে সঙ্গে যেন দর্শকরা ভালোভাবে শুনতে পারেন সেজন্য রাখা হয়েছে হেডফোনের ব্যবস্থা। কোচের এক প্রান্তে রাখা একটি বড় এলইডিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণ।
এ ছাড়া শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ বইও রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে। জয়বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা একটি বুক শেলফ রয়েছে। সেখানে প্রায় একশ বই রয়েছে।
জাদুঘরটিতে ‘যাদু মনি’ সম্বোধন করে মেয়ে হাসুকে (শেখ হাসিনা) নিয়ে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ মোট ছয়টি চিঠি রাখা হয়েছে। যা দর্শনার্থীদের বঙ্গবন্ধুকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
জাদুঘরের ভেতরে কৃত্রিম ফুলের বাগান দর্শকদের আকৃষ্ট করবে সহজেই। আরও রয়েছে জাতির পিতার ব্যবহৃত পোশাক ও জিনিষপত্রের প্রতিকৃতি। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল, স্মৃতিসৌধ ও তার হাতে লেখা চিঠি।
ভ্রাম্যমাণ এ জাদুঘরে একটি ডিসপ্লে রয়েছে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সময়ের ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হবে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরীর লেখা ‘তুমি ইতিহাস জুড়ে সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক এই বাংলার তুমি শোষকের যম শোষিতের দম স্রষ্টা স্বাধীনতার’ গানটিকে জাদুঘরের থিম সং হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
কোচ দুটির বাইরের অংশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের উপর শিল্পীর আঁকা রঙিন ম্যুরালের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী জানান, বঙ্গবন্ধুর জীবন সংগ্রাম, স্বাধীনতা যুদ্ধ আর ইতিহাসের সমন্বয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি ব্রডগেজ এবং একটি মিটারগেজ কোচ নিয়ে তৈরি করেছে জাদুঘরটি। অত্যাধুনিক জাদুঘর দু’টি দেশের ৩৫টি রেল স্টেশনে প্রদর্শিত হবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে কোনো স্টেশনে একদিন আবার কোনো স্টেশনে পাঁচ দিন পর্যন্ত অবস্থান করবে বিশেষ জাদুঘর দু’টি।
তিনি জানান, জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’।
আরএ/