আমরা ফেল করলে গণতন্ত্র ফেল করবে: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘আমরা ফেল করলে আইনের শাসন ফেল করবে। আইনের শাসন ফেল করলে গণতন্ত্র ফেল করবে। গণতন্ত্র ফেল করলে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে।’
দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে বিচারক ও আইনজীবীদের সচেষ্ট হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে এসব কথা বলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) খুলনা বিভাগীয় আইনজীবী সমিতির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়াম আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নানা কারণে বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা বেড়েছে। আমাদের সচেতনতা, কর্মনিষ্ঠায় মামলা জট হ্রাস পাচ্ছে। হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারে।
হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, বেঞ্চ গঠন করতে গেলে আমাকে অনেক কিছু মনে রাখতে হয়। এখনো কজলিস্টে আশির দশকের ৯০ দশকের মামলা তালিকায় আসে। এরপর ২০০০ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রমে মামলা তালিকায় আসে।
অনেক মামলা আছে যেটা ৪০ বছর পর্যন্ত পেন্ডিং আছে। মানুষ বিচারের আশায় আদালতে কত দিন ঘুরবে! এভাবে ঘুরতে ঘুরতে যদি এক সময় মানুষের বিচারের উপর অনাস্থা প্রকাশ করে বলে এই দেশে বিচার নাই। তাহলে এটাকে কি অন্যায় বলা হবে?
বেঞ্চ গঠন করতে গিয়ে আমার মনে রাখতে হয়, যেই লোক বিচার পেতে বছর বছর আদালতর বারান্দায় ঘুরছে তাদের কিভাবে বাড়ি ফেরানো যায়। বেঞ্চ গঠনের সময় এটা আমার মনে রাখতে হয়। করোনার সময় অনেক বিচারপতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেঞ্চ গঠনের বেগ পেতে হয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আশা করি আমরা কিছু দিনের ভেতরেই নতুন বিচারক পাব। তখন হাইকোর্ট বিভাগে বেঞ্চের সংখ্যা আরও বাড়বে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যেভাবে বেঞ্চ গঠন করলে ভালো হয়, সেটাই আমি করার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের বসার জায়গা সংকটের পাশাপাশি আমি মনে করি যারা গ্রামগঞ্জ থেকে সাধারণ মানুষ বিচারের আশায় উচ্চ আদালতে আসে, তাদেরও বসার জায়গা করার দরকার। এ জন্য আমি যখন শপথ নিই, তখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার প্রার্থীদের জন্য সব আদালত এলাকায় বসার জায়গা করার জন্য শেড নির্মানের অনুরোধ করি। তিনি তাৎক্ষণিক রাজি হয়ে যান।'
এখন কথা হলো টাকা তো আমার হাতে থাকে না। আলাদিনের চেরাগ পেলে আমি সাথে সাথে আপনাদের দাবি পূরণ করে দিতাম।
তারপরও কথা হলো আমাদের প্রধান সমস্যা হলো জায়গার। আমাদের এখন যতটুকু জায়গা আছে তার মধ্যে আগামী ১০০ বছরের প্ল্যান করতে হবে। প্রতিটি ইঞ্চি জায়গাই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমাদের প্ল্যান করে এগোতে হবে।
আইনজীবীদের ভবন দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, আপনাদের দুঃখ কষ্ট আমি বুঝি। এজন্য আপনাদের জন্য যতটুকু আমার করার আছে সেটুকু করব।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দুই বিচারক বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম. আমীর-উল ইসলাম ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির প্রমুখ।
এমএ/এমএমএ/
