আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেও সংকট: সিইসি
নির্বাচনকালীন স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করার দাবি তুলেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। তার জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ন্যস্ত করলেও আমি নিতে পারব কি না সন্দেহ আছে, কারণ ক্যাবিনেট কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী গঠন হয়। সংবিধান সংশোধন করে আইন কানুন সংশোধন করে যদি আমাদের উপর ন্যস্ত করা হয় তাহলে বৈধভাবে নেওয়া যাবে, অন্যথায় অবৈধভাবে আমরা নিতে পারব বা নেব সেটা আমরা আশ্বাস দিতে পারছি না। নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনই। নির্বাচন কমিশন কোনো মন্ত্রণালয় নয়। আমি কিন্তু নির্বাচন কমিশনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিরক্ষামন্ত্রী বা ওই ধরনের মন্ত্রী হয়ে গেলে সেটা আরেকটা সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ শেষে এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দেশে যে সংবিধান ও আইন আছে, তার আলোকে আমরা সবকিছু করব। আমরা কখনোই বলিনি যে নির্বাচন হবে না। আপনারা (রাজনৈতিক নেতারা) যাই বলুন আমরা সব দলকে সব সময় আহ্বান জানাব আপনারা নির্বাচনে আসেন, নির্বাচন করেন এবং আপনারা নির্বাচনে না এলে নির্বাচন করব না এ কথা নির্বাচন কমিশন কখনোই বলেনি। ধারাবাহিকভাবে সবাইকে ডাকব। যেহেতু আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, নির্বাচনে বিশ্বাস করি এটা হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্র। এটা যদি বিলেতের মতো দুই দলীয় গণতন্ত্র হতো বা তিন দলীয় গণতন্ত্র হতো তাহলে একটা ভিন্ন প্রসঙ্গ হয়তো থাকত।
দলগুলোর কাছেই রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান চান সিইসি
ওয়ার্কারস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি তিনবার জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এ সময় বাদশা বলেন, তিনবার ফেল করেছি। জবাবে সিইসি বলেন, সেটাও কিন্তু অভিজ্ঞতা। আগে আমরা বলতাম বিএ ফেল একটা ডিগ্রি। অনেক আগে লেখা হতো বিএ ফেল এটাও একটা ডিগ্রি। তিনবার ফেল করলেও সেটাও একটা বড় ডিগ্রি।
সিইসি বলেন, আপনারা ভোটে ধনী-গরিবের বৈষম্যের কথা বলেছেন। গরিবের কথা বলেছেন, যারা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন না এবং বিত্তবান এটা এখন গ্রাউন্ড রিয়েলিটি। এত বড় একটা বাস্তবতা সত্ত্বেও সেটা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এটাকে ওভারকাম করা কঠিন বরং আপনারা যদি পলিটিক্যালি বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে পারতেন তাহলে ভালো হতো।
সিইসি বলেন, আপনার সঙ্গে একমত। বিত্তের একটা শক্তি এখনো আছে, অর্থের শক্তি আছে। আপনারা বলছেন ২০ লাখ টাকা খরচ, বাইরে খরচ হচ্ছে ২০ কোটি টাকা সেটা তো আমরা চোখে দেখি না। আমি চোখে দেখি না, জানি না কিন্তু অনেকে বলেন বলে সেটা বিশ্বাস করি। সেটা হচ্ছে গ্রাউন্ড রিয়েলিটি ইন পলিটিক্স।
দেশের বাইরে থেকেই কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থন এলে ইসি কী করতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দেশের বাইরে থেকে কোনো দলের সমর্থন যদি আসে, আমরা কিছুই বলতে পারব না। দেশের বাইরে থেকে কোনো হুমকি-ধমকি সেটা পলিটিক্যালি আপনারা ফেস করবেন। নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে কোনো কিছু করার নেই। এটা আসার কথাও নয়। অন্য কোনো দেশ আমাদের দেশকে বা আমাদের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেবে বা ধমক দেবে এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয় না, হলেও পলিটিক্যালই আপনাদের মাঠে ফেস করতে হবে।
নির্বাচনকালীন কয়েকটি মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। তার জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর চার-পাঁচটা মন্ত্রণালয় আমাদের উপর ন্যস্ত করলে এমনকি সেটা সাংবিধানিকভাবে ন্যস্ত করলেও আমি যে নিতে পারব তাতে আমার সন্দেহ আছে। কারণ ক্যাবিনেট কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী গঠন হয়। সংবিধান সংশোধন করে আইন কানুন সংশোধন করে যদি আমাদের উপর ন্যস্ত করা হয় তাহলে বৈধভাবে নেওয়া যাবে অন্যথায় অবৈধভাবে যে আমরা নিতে পারব বা নেব সেটা আমরা আশ্বাস দিতে পারছি না।
তিনি বলেন, কারণ ক্যাবিনেট কীভাবে গঠন হবে সেটা আমাদের সংবিধানের ৫৪, ৫৬ অনুচ্ছেদে আছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন কোনো মন্ত্রণালয় না। আমি কিন্তু নির্বাচন কমিশনের হোম মিনিস্টার বা ডিফেন্স মিনিস্টার বা ওই ধরনের মিনিস্টার হয়ে যাব সেটা আর একটা সংকট সৃষ্টি করতে পারে। সেটা তবুও আপনাদের বিষয়গুলো আমরা চেষ্টা করব আমাদের যে আইনকানুন আছে সেগুলোর পর্যাপ্ত ক্ষমতা আইনে আমাদের দেওয়া আছে। হয়তো সেই ক্ষমতাগুলো অতীতে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়নি এটা আমাদের ধারণা। সেই বিধিবিধানগুলো যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি সেই নজরদারিটা আপনারা আমাদের উপর করতে পারেন। যে ক্ষমতা আছে সেই ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমরা এটা করলাম না কেন সেটা জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমাদের মধ্যে যেন জবাবদিহি-পেশাদারিত্ব একটা দায়িত্ব বোধ গড়ে ওঠে এবং আমরা আমাদের, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব দল ও অংশীজনের আন্তরিক কমিটমেন্ট প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যদি সৌহার্দ্য ও অনুকূল পরিবেশ বাইরে না থাকে তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সরকারের সহায়তা অবশ্যই নিতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সে সময় সরকারের ওপর থাকলেও আমাদের কমান্ড আমাদের উপর যে কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে সেই কর্তৃত্বটা আপনারা জানেন বিধিবদ্ধভাবে প্রয়োগ করতে পারি, আমরা সেই চেষ্টা অবশ্যই করব। জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা একটা কঠিন কাজ। এটা এককভাবে নির্বাচন কমিশন এর পক্ষে সুচারুর গ্রুপে করা সম্ভব হবে না। আপনি আপনার দল ও সব দল নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করলে আমরা একটা সফলতার স্বপ্ন দেখতে পারি।
এসএম/এসএন