ইসির সংলাপ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরত চায় খেলাফত আন্দোলন
ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার প্রস্তাব করেছে। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগী হতে বলেছে দলটি।
রবিবার (২৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ও মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীর সই করা লিখিত বক্তব্যে উল্লেখিত প্রস্তাবসহ ৪০ দফা দাবি জানান। এ সময় দলটির নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মান্নান, মাওলানা সানাউল্লাহ হাফেজ্জী, হাজী জালালুদ্দীন বকুলসহ ১২ জন প্রধিনিধি অংশ নেন।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙে দেওয়া, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএমে ভোট না করা এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে সেখানে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এতে ইসি কমিশনার মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতান, আনিছুর রহমান ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান ও ইসি সচিব হুমায়ন কবির খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য হওয়ার কারণে দেশে রাজনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এসব নির্বাচনে সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতি যেমন বিপন্ন হয়ে পড়েছে, তেমনই আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নতজানু নীতির ফলে মানুষের ভোটের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার তথ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ৪০ দফা প্রস্তাবনা পেশ করছি।
খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন অপরিহার্য। এ উদ্দেশ্যেই বৃহৎ দুটি দলসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, দেশের মানুষ ৯৬ দিনের হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলন সহ্য করেছে। মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল। ফলে জাতির মধ্যে প্রফুল্লতা এসেছিল। ভোটারগণ আগ্রহের সঙ্গে ভোট প্রদান করেছিলেন। এ পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অস্থিরতা ও অবিশ্বাস বেড়েছে। উক্ত বিষয়টিও বিবেচনায় রাখবেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। সব দল ও প্রার্থীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সব ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দ মতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রদত্ত ভোটগণনা ও ফলাফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনের কাজে সরকার কোনো প্রকারের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এমন নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা ও নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহ বিশেষত: মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে যারা নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, তাদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বদলি করা, বরখাস্ত করা ইত্যাদি এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকতে হবে। নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের সময় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করে মোতায়েন করতে হবে।
মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, নারীদের সরাসরি সব আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ আছে, অতএব সিলেকশনের মাধ্যমে নারীদের জন্য সংসদে পৃথক আসন সংরক্ষণ করার যৌক্তিকতা নেই। আসন সংরক্ষণের এ ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক বিধায় তা বিলুপ্ত করা হোক।
তিনি বলেন, ইভিএমের ব্যাপারে জনগণের স্বচ্ছ ধারণা নেই। ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশে এটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আর ইভিএম সম্বন্ধে আমাদের দেশের মানুষ বিশেষত: গ্রাম-বাংলার মানুষ অজ্ঞ। তাই এটি ব্যবহার করা হলে অনেকের ভোট দেওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়বে এবং নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অতএব জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না।
তিনি বলেন, চলমান সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। কারণ সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তা প্রভাবমুক্ত হবে না। সে নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতাও পাবে না। পাশাপাশি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীর গেজেট প্রকাশ না করে ফের নির্বাচনের বিধান করতে হবে। তখন জীবননাশের হুমকি দিয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহারে বাধ্য করার প্রবণতা বন্ধ হবে। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথও বন্ধ হবে।
এসএম/এসএন