গাছ কাটা বন্ধ না হলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়: বন ও পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত বনের কোনো গাছ না কাটতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, অবৈধভাবে বনের গাছ কাটা বন্ধ না হলে আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। এজন্য বন সংশ্লিষ্টদের প্রতি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশনা দেন।
জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০২২ এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে বন অধিদপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব ডক্টর ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন। উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান এবং নির্বাচিত স্টল মালিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বৃক্ষমেলায় প্রথম স্থান অধিকারী বরিশাল নার্সারির মালিক মো. ইব্রাহিম।
বনমন্ত্রী বলেন, আগে মানুষ কম ছিল, বন বেশি ছিল। তবে এখন হিসেব বদলেছে। বনে বসবাস করা আদিবাসীরাও বনের ভেতর বড় জনপদ গড় তুলছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের বনের পরিমাণ ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। আমাদের প্রয়োজন ২৫ শতাংশ বনায়ন। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বনায়নের যে লক্ষ্য, তা অর্জনে ২০৩০ সাল পর্যন্ত পাহাড় ও বনের গাছ কাটা যাবে না। টিলা কাটা ও নদীভরাট বন্ধ করে অধিক হারে বৃক্ষরোপণের জন্য সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
শাহাব উদ্দিন বলেন, দেশে সবুজ আচ্ছাদন তৈরি করে টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতি বছর আয়োজিত বৃক্ষমেলা ও বৃক্ষরোপণ অভিযান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ বছর শেরে বাংলা নগরস্থ মাঠে আয়োজিত জাতীয় বৃক্ষমেলায় সর্বমোট ১৬ লাখ ৩০ হাজারের বেশি চারা বিক্রি হয়েছে। দেশের সব বিভাগ ও জেলাতে এবং বেশ কিছু উপজেলাতেও বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বন ও প্রতিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমকে বৃক্ষরোপণ অভিযানে রূপ দেওয়া হয়েছে। সবার অংশগ্রহণে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্য অর্জনের অংশ হিসাবে বনের জবরদখল উচ্ছেদ, বৃক্ষহীন ও অবক্ষয়িত বনভূমি, প্রান্তিকভূমি এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, ২০০৯-২০১০ হতে ২০২০-২১ আর্থিক সাল পর্যন্ত ম্যানগ্রোভসহ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭৮ হেক্টর ব্লক, ২৬ হাজার ৪৫৩ সিডলিং কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং বিক্রয় বিতরণের ১০ কোটি ৫৯ লাখ চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে। একই সময়ে সামাজিক বনায়নে সম্পৃক্ত ১ লাখ ৪১ হাজার ২৩৮ জন উপকারভোগীর মাঝে লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়েছে। বিগত ৩ বছরে বন অধিদপ্তর কর্তৃক ৪ হাজার ৭২৯ হেক্টর বনভূমি জবরদখল মুক্ত করে বনায়ন করা হয়েছে। মন্ত্রী বন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের বন রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী "বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০১৯ ও ২০২০" এবং সামাজিক বনায়নের ৬ জন উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের ৩৭ লাখ টাকার চেক, নির্বাচিত স্টল মালিকদের এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করেন।
উল্লেখ্য, এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলায় মোট স্টল ছিল ১১০টি। এর মধ্য ৮০টি স্টলে ৬৩টি ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারি, ১৫টি স্টলে ৩৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ৬টি স্টলে ৪টি বেসরকারি সংস্থা এবং ৯টি স্টলে ২টি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এ বছর জাতীয় বৃক্ষমেলায় মোট ১২ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ২৪২ টাকার চারা বিক্রি হয়। এ বছর জাতীয় বৃক্ষমেলায় মোট বিক্রিত চারার সংখ্যা এবং বিক্রয়মূল্য আগেকার যেকোনো বছরের তুলনায় বেশি।
এনএইচবি/এসএন