জোয়ারের হাত থেকে উপকূল রক্ষায় ৮ দফা সুপারিশ
উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে উপকূল রক্ষায় আট দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। রবিবার (২৪ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স, ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশ এবং সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্ৰ ভদ্র।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)'র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমার মণ্ডল, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, সচেতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাকিলা পারভীন, শহীদ আলীম সাহিত্য সংসদের সানজিদুল হাসান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, পাকিস্তান আমলে পোল্ডার নির্মাণের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। পোল্ডারকে ঘিরে বাঁধই এখন বিপর্যয়ের কারণ। বাঁধ নির্মাণ করে সমুদ্র থেকে জনপদকে বিচ্ছিন্ন করলে টিকে থাকা যাবে না। সাগরের সঙ্গে বসবাস করা শিখতে হবে।এজন্য ঝুঁকি থাকা জনপদকে রক্ষায় টেকশই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি উপকূলের সম্মলিত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। উপকূলের প্রকল্প গ্রহরের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের মতামতকে প্রধান্য দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে উপকূলের ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরে মোহন কুমার মণ্ডল বলেন, চলতি জুলাই মাসে জোয়ারের পানির চাপে বাঁধ ভেঙে উপকূলের অনেক অঞ্চল লবন পানিতে তলিয়ে গেছে। এই সময়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল ও চট্টগ্রামের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধির মানুষ নানান ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন এবং সহস্রাধিক পরিবার বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ওই সকল এলাকায় সুপেয় পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
মূল বক্তব্যে আরো বলা হয়, ভৌগলিক অবস্থান, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ভঙ্গুর অবকাঠামো, দারিদ্রতা, দীর্ঘমেয়াদী লবনাক্ততা, সংকটাপন্ন কৃষি, প্রভৃতির কারণে উপকূলীয় এলাকার মধ্যে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ওই অঞ্চলের মানুষ বাঁচার স্বপ্ন হারিয়ে ফেলছে। ওদেরকে সেই স্বপ্ন ফিরিয়ে দিতে হবে। ওই এলাকাকে বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে উপকূলে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ করতে হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারসহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। গড়ে তুলতে হবে। উপকূলীয় মানুষের সুপেয় পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করতে হবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে উপকূলে একটি বাড়ি একটি সেন্টার' নির্মাণ করতে হবে। নদীভাঙ্গন ও ভূমিক্ষয় ঠেকাতে উপকূলে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। সুন্দরবনসহ আশপাশের এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। উপকূলের রক্ষাকবচ বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে (ফুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট) জনজীবনে সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একের পর এক ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দূর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেখানকার বেড়িবাঁধ। ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হচ্ছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও খুলনা জেলার কয়রা উপজেলাসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় বাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং বহু মানুষ সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছে।
এনএইচবি/