পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক- ২০২২’ প্রদান
সরকার এ বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উল্লেখযোগ্য ও প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা ক্যাটাগরিতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক ২০২২’ প্রদান করেছে।
শনিবার (২৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদ্যাপন’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক ২০২২ প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে (গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পক্ষ হতে পদকটি গ্রহণ করেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন সেল’ কর্তৃক গৃহীত ‘বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শান্তি দর্শন: আন্তর্জাতিকীকরণ ও বিশ্ব রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা’ নামক উদ্যোগের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দর্শন: বহুপাক্ষিকতাবাদ ও শান্তির কূটনীতিকে’ বিশ্বপরিমণ্ডলে আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য এ পদক প্রদান করা হয়।
গতানুগতিক নিয়মিত দায়িত্ব সম্পাদন ও সেবা প্রদান কার্যক্রমের বাইরে গিয়ে গত দুই বছরে (মার্চ ২০২০ - মার্চ ২০২২) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি মৌলিক, অনন্য ও বিশেষায়িত কার্যক্রম বাস্তবায়নের সমন্বিত ফলস্বরূপ এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যসমূহ হচ্ছে-(১) সদর দপ্তরসহ বিদেশস্থ সকল মিশনে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন, (২) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার ফর ফরেন পলিসি অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি এবং গণহত্যা কেন্দ্র (জেনোসাইড সেন্টার) স্থাপন, (৩) আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান আলোচকদের নিয়ে 'বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজ' আয়োজন, (৪) পোল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, থাইল্যান্ড, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ চালুকরণ ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপন, (৫) বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’- ১৪টি এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’- ২টি বিদেশি ভাষায় অনুবাদকরণ, (৬) জাতিসংঘ ও বিশ্বের বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সাথে যৌথভাবে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ, (৭) বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোম্যাটিক অ্যাওয়ার্ড অব এক্সসিলেন্স প্রবর্তন, (৮) বঙ্গবন্ধুর নামে মরিশাস, তুরস্ক, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সড়কের নামকরণ, (৯) তুরস্ক ও ভুটানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ প্রতিকৃতি স্থাপন, (১০) বঙ্গবন্ধু-ইউনেস্কো অ্যাওয়ার্ড ফর ক্রিয়েটিভ ইকোনমি প্রবর্তন, (১১) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত দশ দিনব্যাপী ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে করোনা মহামারী সত্ত্বেও ৫টি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ৬ জন রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধানের সশরীরে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, (১২) বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, স্পিকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, খ্যাতিমান রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণের ২৪০ এর অধিক লিখিত এবং ভিডিও বার্তা সম্বলিত ‘ওয়ার্ল্ড লিডার্স অন বঙ্গবন্ধু এন্ড বাংলাদেশ’ (World Leaders on Bangabandhu and Bangladesh) নামে সংকলন প্রকাশ, ইত্যাদি।
এই মন্ত্রণালয়ের ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন সেল’ এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সদরদপ্তর এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশের সকল মিশনসমূহের সাথে সমন্বয়পূর্বক উল্লিখিত কার্যাবলী সম্পন্ন করা হয়েছে।
এছাড়াও, বঙ্গবন্ধুর দর্শনের ভিত্তিতে প্রণীত সংবিধান ও পররাষ্ট্রনীতিকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে পরিচিতি করা এবং শান্তিকামী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ০৪-০৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী প্রথমবারের মতো ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন-২০২১’ আয়োজন করে যেখানে করোনার বাধা সত্ত্বেও প্রায় ৫০টি দেশের ১০০ জনের মতো বরেণ্য ব্যক্তি সশরীরে অংশগ্রহণ করেন এবং ‘বিশ্ব শান্তি ও মানবতার অগ্রদূত’ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মহতী উদ্যোগগুলো পর্যালোচনা করেন।
সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত ‘ঢাকা পিস ডিক্লেয়ারেশন-২০২১’ (Dhaka Peace Declaration-2021) কে জাতিসংঘের ডকুমেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিবকে অনুরোধ জানিয়ে পত্র প্রেরণ করেছেন যা বর্তমান বিশ্বে চলমান অস্থিরতা নিরসনে এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই গৌরবময় অর্জনসমূহই এই মর্যাদাপূর্ণ পদক প্রাপ্তিতে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, এমপি এবং পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন এই গৌরবময় অর্জনের পেছনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে নিয়োজিত রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও মিশনপ্রধানসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অবদানের জন্য তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, এই পদক প্রাপ্তি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আরও উজ্জীবিত করবে ফলে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম আরও বেগবান হবে যা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি তথা বাংলাদেশের মর্যাদাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
আরইউ/