ত্রিশালের সেই ট্রাকচালকের বৈধ লাইসেন্স ছিল না
চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ময়মনসিংহের ত্রিশালে মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে চলমান ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে বাবা-মাসহ এক সন্তানের নির্মম মৃত্যু ও অলৌকিকভাবে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঘটনায় ঘাতক ট্রাকচালক মো. রাজু আহমেদ ওরফে সিপনকে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সোমবার (১৮ জুলাই) রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামির ভারী যানবাহন চালনোর জন্য কোনো বৈধ লাইসেন্স ছিল না।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন খান র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, গত ১৬ জুলাই দুপুরের দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামের জাহাংগীর আলম তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তার এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য মহাসড়কের পাশে অবস্থান করেন। এ সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে তাদের চাপা দেয়। ওই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন মো. জাহাংগীর আলম (৩৫), তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্মা বেগম (২৬) । তার তিন বছর বয়সী কন্যা সন্তান সানজিদা আক্তারকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার সময়, অন্তঃসত্ত্বা রত্মার বেগমের উপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ায় চাকার চাপে গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান অলৌকিকভাবে ভূমিষ্ঠ হয়। ভূমিষ্ঠ শিশুটিকে আহত অবস্থায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসার উদ্দেশ তাকে ময়মনসিংহ সদরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ দুর্ঘটনায় নিহত জাহাংগীর আলমের বাবা বাদী হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর এ মামলাটি তদন্ত করে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, নিহত জাহাংগীর আলম পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। দুর্ঘটনায় নিহত কন্যা সন্তান ছাড়াও তাদের পরিবারে ৮ ও ১০ বয়সী দুজন ছেলে ও মেয়ে সন্তান রয়েছে।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত রাজু গত ১১ জুলাই হতে একটানা মালামাল পরিবহন করে আসছিল। এর মধ্যে সে একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তারাইলে মালামাল আনলোড করে সে পুনরায় রাজশাহী ফিরে আসে। পরবর্তীতে গত ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট হতে গাড়ির মালিকের আম বোঝাই করে এবং পরবর্তীতে রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফায় আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাত ১২টার সময় রওয়ানা করে। পথে সে হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার পূর্ব পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিল এবং কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের সন্নিকটে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা নিহত জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, তথ্য মতে, বিগত ৬-৭ মাস পূর্ব থেকে গ্রেপ্তার রাজু শতকরা ১০ শতাংশ কমিশনে বর্তমান ট্রাকটি চালিয়ে আসছিলেন। গাড়িটিতে করে সবসময় কাঁচামাল পরিবহন করা হত। গাড়িটির বর্তমানে ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গাড়িটির ধারণ ক্ষমতা সাত টন হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটির ওজন ১৩.৫ টন ছিল বলে জানা যায়। গ্রেপ্তার রাজুর ভারী যানবাহন চালনোর জন্য কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। পূর্বে তার মধ্যম সারির গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল, যা ২০১৬ সালে হারিয়ে যায়। গ্রেপ্তারকৃত রাজু ২০০২ সালে যশোরের এক ট্রাক ড্রাইভারের হেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনার শিকার হন। ওই দুর্ঘটনায় তার বাম পা মারাত্মকভাবে জখম হওয়ার ফলে তিনি প্রায় ছয় বছর গাড়ি চালাননি। তার এখনও বাম পায়ে সমস্যা রয়েছে। বিগত ১০ বছর ধরে তিনি নিয়মিত বিরতিতে ট্রাক চালাচ্ছেন।
গ্রেপ্তার রাজুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/আরএ/