ইসির চার ধাপের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তাবে বিশেষজ্ঞদের ‘না’
ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও ভোটে স্বচ্ছতা আনতে চার দিনে জাতীয় নির্বাচন করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন। তবে সব রাজনৈতিক দল চাইলেই সেই পথে পা বাড়াবে ইসি। অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলো ইসির সুরে সুর মেলাবে কি না তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। কারণ এখন পর্যন্ত বড় রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে চার ধাপে বা চার দিনে নির্বাচন করার কোনো আলোচনা বা ভাবনার কথা শোনা যায়নি। যদিও ছোট ছোট কয়েকটি দল ইসির সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত যাই আসুক বিশ্লেষকরা মনে করেন চার দিনে জাতীয় নির্বাচন করার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি কোনোটিই দেশে নেই। এতে আরও বেশি হানাহানি ঘটতে পারে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন সংক্রান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ইচ্ছের কথাটি জানান দিয়েছেন। তবে সেটি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যেহেতু আমরা একদিনেই নির্বাচন করব বা সবাই যদি চান চার দিনে ইলেকশন করার…, কারণ আমরা একটা সংকট দেখি সেন্টারে পর্যাপ্ত ফোর্স দিতে পারছি না। সেই ফোর্সটা লাগত না যদি সব দল নির্বাচনের কেন্দ্রে এসে দাঁড়াত, তাহলে ওরাই ফোর্স হয়ে যেত।’
তার এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। তাহলে কী ভারত বা অন্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো ধাপে ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ভোট এক দিনে হোক আর চার দিনে হোক সেটা নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্লেষকদের মধ্যে। তারা মনে করেন চার দিনে ভোট করার মতো পরিস্থিতি আমাদের দেশে নেই। এখানে চার দিনে ভোট করলে সহিংসতা আরও বাড়তে পারে। তাদের যুক্তি যখন কোনো একটি বিভাগে ভোট হবে তখন ওই বিভাগে ক্ষমতাসীনরা সর্বশক্তি দিয়ে বিজয় নিজেদের করে নিতে চাইবে।
ক্ষমতাসীনদের এই কর্মের প্রতিবাদ করতে গেলে অপেক্ষাকৃত দুর্বলরা হামলার শিকার হতে পারেন বলেন মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাই ভোট চার দিনে না করে একদিনেই করার পক্ষে বিশ্লেষকরা। তার আগে প্রয়োজন নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফেরানো। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা ফেরাতে না পারলে কোনো পদ্ধতিই সফল নির্বাচন উপহার দেবে না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চার দিনে নির্বাচন সম্ভব না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ওই রকম তৈরি হয়নি এখনও। ইলেকশন কমিশন এটা ম্যানেজ করতে পারবে না। সব দল চাইবেও না। আওয়ামী লীগ কী চাইবে জানি না। আমরা যখন প্রস্তাব করেছিলাম ১০০ শতাংশ দল বলেছিল না। আধাঘণ্টা দেরি হলে যেখানে মারামারি লাগে সেখানে চারদিনে নির্বাচন করে পাঁচ দিন, ছয় দিনে রেজাল্ট দেবে তাও আবার ইভিএম রেখে, আমাদের এখানে এখনও সেই ম্যাচুউরিটি আসেনি। যখন আসবে তখন এটা হতে পারে।’
এবিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনি ব্যবস্থায় যে অবিশ্বাসের সংস্কৃতি, এখানে এটা (চার ধাপে) সম্ভব না। আমাদের এখানে কারো ওপর কারো বিশ্বাস নেই। বিশ্বাস না থাকারও যথেষ্ট কারণ আছে। আমাদের জনগণের ভোটের পবিত্র আমানত খেয়ানত করেছে। চার দিনে ভোট হওয়া সম্ভবপর না।’
এসএম/এসএন