ঈদে কেনাবেচা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকার পশু
এবারের কোরবানি ঈদে সারাদেশে এক কোটির বেশি পশু বিক্রি হয়েছে। লেনদেন হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। আর কোরবানির প্রথম দিন সারাদেশে প্রায় এক কোটি পশু কোরবানি হয়েছে। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এই বছর সারাদেশে গরু ও ছাগল মিলিয়ে গবাদিপশু প্রস্তুত ছিল এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি। আর কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল প্রায় ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার।
দেশে প্রতি বছর কোটির কাছাকাছি গবাদিপশু কোরবানি হয়। গত কয়েক বছরে কোরবানির চাহিদা অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় বেড়েছে কয়েক গুণ। কোরবানির এই সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও কোরবানির ঈদের সময় কোরবানির পশুর জন্য হাহাকার শুরু হতো কোরবানিদাতাদের মধ্যে। বেশিরভাগ পশু বিশেষ করে গরু আসত সীমান্তের ওপার অর্থাৎ ভারত ও মায়ানমার থেকে। কোরবানিদাতারা সেই গরুর জন্য মুখিয়ে থাকতেন। দামও হতো বেশ চড়া।
কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চিত্র একেবারেই পাল্টে গেছে। এখন কোরবানির পশুর শতভাগই দেশে উৎপাদন হয়। কোরবানিকে সামনে রেখে ২০১৫-২০১৬ সাল থেকে দেশে গবাদিপশুর ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয়। বিশেষ করে গ্রামীণ কৃষক থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা ও শহর এলাকায় গড়ে উঠা গরুর খামারে ব্যাপকভাবে গরু উৎপাদন ও লালন-পালন শুরু হয়।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ২০১৭ সাল থেকে কোরবানির পশুর শতভাগ দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। এখন আর দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা কোনও পশু কোরবানি দেওয়া হচ্ছে না।
গত পাঁচ বছর ধরেই দেশি গবাদি পশুর উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে কোরবানি। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ বছর সারাদেশে কোরবানির জন্য এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছিল। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৬ লাখ। বাকিগুলো ছিল ছাগল ও ভেড়া।
এদিকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫২১ টি গবাদিপশু বেশি কোরবানি হয়েছে। গত বছর সারাদেশে মোট ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২ টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের কোরবানিতে গবাদি পশু বিক্রি হয়েছে এক কোটির বেশি। এই গবাদি পশুর ক্রয়-বিক্রয়ে অর্থের লেনদেন হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশির ভাগ টাকা শহর থেকে গ্রামে গিয়েছে। কারণ গ্রামের খামারিরা ঈদ বাজারকে ঘিরে গ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাটাবাজারসহ বড় বড় শহরগুলোতে গরু ও অন্যান্য গবাদি পশু বিক্রির জন্য তুলেছিলেন।
সোমবার (১১ জুলাই) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, রবিবার ঈদের প্রথম দিনে সারাদেশে কোরবানি হয়েছে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার গবাদি পশু। আজ সোমবার এবং আগামীকাল মঙ্গলবার আরও পশু কোরবানি হবে। সব মিলিয়ে এবার কোরবানির এই সংখ্যা কোটির বেশি হবে বলে জানান তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, এবার প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার গবাদি পশু কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ পশুই গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এসেছিলেন খামারি ও চাষিরা। যার ফলে গ্রামের চেয়ে শহরে গরুর কেনাবেচা বেশি হয়েছে এবং খামারি ও চাষিরা দামও ভালো পেয়েছেন।
তিনি জানান, গবাদি পশুর এই মূল্য খামারি ও চাষিদের আগামীতে গরু-ছাগল উৎপাদনে উৎসাহিত করবে। ফলে আগামীতেও দেশে কোরবানির পশুর কোন সংকট হবে না।
এসআইএইচ