হাজারে ১০০-২০০ টাকায় গরু জবাই করছেন কসাইরা
ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সকাল থেকেই রাজধানীতে চলছে পশু কোরবানি। রাজধানীর বাসা-বাড়ির গ্যারেজ থেকে শুরু করে অলিগলি হয়ে রাজপথ পর্যন্ত যত্রতত্র চলছে পশু কোরবানি।
এত এত কোরবানির পশুর মাংস কাটার মূল কাজটি সম্পন্ন করে থাকেন মৌসুমি কসাইরা। চাহিদার তুলনায় পেশাদার কসাইয়ের সংখ্যা অতি নগণ্য হওয়ায় অপেশাদার বা মৌসুমি কসাইদের ওপরই নির্ভর করতে হয় রাজধানীবাসীর। এরা সাধারণত কোরবানির ঈদের আগের রাতে কামারের দোকান থেকে দলগত বা ব্যক্তিগত ছুরি-চাপাতিসহ ক্ষুদ্রাস্ত্র সংগ্রহ করেন।
মৌসুমি এ কসাইরা সারা বছর দিনমজুর বা রিকশাচালকের কাজসহ বিভিন্ন কাজ করেন। তাদের সবাই রাজধানীতে থাকেন, তাও নয়। কোরবানির উদ্দেশ্যে তাদের অনেকে বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বড় শহরগুলোতে পৌঁছান। তাদের একজন মেহেরপুরের কাউসার মিয়া।
ঈদের দিন রবিবার (১০ জুলাই) সকালে তার সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায়। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, তারা ৮ জন মিলে একটি গরু জবাই করছেন। গরুটির দাম ২ লাখ ৭ হাজার টাকা। গরুটি কেটে দেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে হাজারে ১০০ টাকা দরদাম হয়েছে। তাতে তারা এ একটি গরু কেটে ২০ হাজার ৭০০ টাকা পাবেন। অর্থাৎ তারা জনপ্রতি পাবেন আড়াই হাজার টাকার বেশি। তা ছাড়া চুক্তির বাইরে জনপ্রতি দুই-আড়াই কেজি করে মাংস পাবার আশাও করছেন।
ঈদের আগের রাতেই ক্ষুদ্রাস্ত্র সংগ্রহ করেন মৌসুমি কসাইরা
মোহাম্মদপুর আল্লাহ করিম মসজিদ এলাকায় কথা হয় মৌসুমি কসাই তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। বছরের অন্যান্য সময় তিনি একটি সবজির দোকানে কাজ করেন। তিনি বললেন, ঈদের দিন বিকালেও তাদের আয় হতে পারে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বিকালে যদি কারও একটা ছাগল প্রস্তুত করে দেওয়ার কাজ পাওয়া যায় তাতে কিছু বাড়তি আয় হতে পারে। এমন কাজ ঈদের পরের দুই দিনও পাওয়া যেতে পারে।
ধানমন্ডি স্টার কাবাব এলাকায় কথা হয় মৌসুমি কসাই আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ধানমন্ডি এলাকায় গরু কাটার দর হাজারে ২০০ টাকা। তার ব্যাখ্যা ধানমন্ডি, গুলশান বা উত্তরার মতো ‘বেশি ধনী’ এলাকার মানুষজন দরদাম খুব কম করে। কারণ সবারই তো টাকা আছে সেসব এলাকায়।
তবে গরু কাটার দর নিয়ে ভিন্ন ধারণা দিলেন মালিবাগের সফর আলি। তিনি বললেন, সব মানুষ চায় ঈদের দিন সকাল সকাল গরু - ছাগল জবাই করে কেটেকুটে বাসায় মাংস ঢোকাতে। তাই সকাল বেলায় কসাইদের 'ডিমান্ড' বেশি, রেটও বেশি। তবে দুপুরের পর বিকালে রেট কমে আসে। পরের দুই দিন রেট আরও কম।
কসাইদের আয় প্রসঙ্গে হাতিরপুলের ইনসাফ উল্লাহ বললেন, একটা গরু কাটার চুক্তি যে করে তারে আমরা বলি সর্দার। আমরা টাকা ভাগ করার সময় ধরেন সবাই সমান ১৩০০ টাকা করে পেল। ভাগের পর ৪০০-৬০০ টাকা থাকল। এটা সর্দারকে দিয়ে দেই। আবার কখনো আগেই কথা হয়ে থাকে যে, মোট টাকা থেকে সর্দার ৫০০-১০০০ টাকা রেখে বাকি টাকা সমান ভাগ হবে বলে জানান তিনি। আবার কোনো কোনো সর্দার এক রকম চুক্তিতে কাজ নিয়ে সহকর্মীদের তা কিছুটা কমিয়ে শোনান বলেও জানান ইনসাফ।
এমএ/এসএন