রাজধানীর মোড়ে মোড়ে কাঠের গুঁড়ি, চাটাই বেচাকেনার ধুম
রাত পোহালেই কোরবানির ঈদ। ঈদকে সামনে রেখেই কাঠের গুঁড়ি, চাটাই, খড়, ভুসি বেচাকোনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এসব সামগ্রী নিয়ে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বসেছে দোকানিরা।
রাজধানীর কোরবানিদাতাদের অনেকেরই কোরবানির পশু কেনা হয়ে গেছে। আর যারা এখনও কেনেননি। তাদের চলছে শেষ সময়ে ব্যস্ততা। তবে কোরবানির পশু যখনই কিনুন জবাইয়ের আগ পর্যন্ত তাকে খাওয়াতে হবে। আর সাময়িক এই প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে ঈদের আগের দুই-তিন দিনের জন্য মোড়ে মোড়ে এসব সামগ্রী সাজিয়ে বসে দোকানগুলো।
মালিবাগ বাজারের সামনের রাস্তার দুই পাশে ও রেললাইন ঘেঁষে রয়েছে অন্তত এমন ১০টি দোকান। দোকানদারদের একজন মোহাম্মদ জহির। এখানে রেলগেটের সামনেই তার দোকান। দুই দিন আগে পর্যন্তও একই জায়গায় ফুটপাতে তিনি কাঁঠালের ব্যবসা করতেন। তার আগে করতেন তরমুজের ব্যবসা। এক কথায় তিনি একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী।
রবিবার (৯ জুলাই) কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানালেন, এখানে গাছের একেকটি গুড়ি আকার ভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে গুড়ি এক হাজার ২০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। হোগলা পাতার চাটাই বিক্রি হয় ২০০-৩০০ টাকায়। শুকনা খড়ের আটি বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকায়। কাঁচা ঘাস বিক্রি হয় কম-বেশি ৩০ টাকা আঁটিতে।
তবে ছাগল-ভেড়ার জন্য প্রায় সবাই নিয়ে থাকেন কাঁঠাল পাতা। কাঁঠাল পাতাও বিক্রি হয় আঁটি প্রতি ৩০ টাকায়। গম বা ছোলার ভূষি ছাড়াও গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন ভূষি বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকা কেজিতে। আর লবণ বিক্রি হয় ৩০ টাকা কেজি দরে।
রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ে কথা হয় আমির হোসেনের সঙ্গে। ক্রেতা সামলাতে সামলাতে এই বিক্রেতা বলছিলেন, গাছের গুঁড়িগুলো সাধারণত তেঁতুল গাছের হয়। তবে কেউ কেউ কড়ই গাছের গুঁড়িও তেঁতুল গাছের গুঁড়ি বলে বেশি দামে বিক্রি করে। যদিও কড়ই গাছের গুঁড়ি থেকে কাঠের গুড়া বেরিয়ে তা মাংসের সঙ্গে লেগে যায়। কথা প্রসঙ্গে বেল গাছের গুঁড়িও ভালো বলে জানান এই বিক্রয়কর্মী।
পল্টন মোড়ে কথা হয় দোকানদার মো. খোকনের সঙ্গে। নিজের পণ্য ভালো বোঝাতে দোকানে থাকা চাটাইয়ের কথা বললেন তিনি। বললেন, চাটাই তৈরি হয় হোগলা পাতা দিয়ে। এই পাতা হয় বরিশাল অঞ্চলে নদীর পাড়ে। তবে আমার চাটাই খুবই পরিস্কার। দেখতে সুন্দর। আকারেও বড়, ৫ হাত বাই ৬ হাত। তাই ৩০০ টাকা নেই প্রতি পিস। আশপাশের দোকানের দিকে ঈঙ্গিত করে বলেন, দুইশ থেকে আড়াইশ টাকায়ও পাবেন কিন্তু কালচে কালচে রঙের।
কাঁটাবন এলাকার দোকানদার হাশমত আলী বললেন, তিন দিনের জন্য এই ব্যবসায় নামলেন তিনি। বিনিয়োগ মাত্র ৫০ হাজার টাকা।
যেহেতু মাত্র তিন দিনের জন্য এই ব্যবসা। তাই কিছু মালপত্র থেকে গেলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দোয়া করেন। শেষ দিকে টানাটানি লাগলে তো ২০০ টাকার মাল ৪০০ টাকায় বেচা যাবে।'
আর যদি দেখি থেকে যাবে তাহলে কম দামে ছেড়ে দেব। কম দামে পেলে অনেকে লাকড়ি করার জন্য গাছের গুঁড়ি নিয়ে যাবে। আবার গো-খাদ্যগুলো শহরের বিভিন্ন খামারিরা নিয়ে নেবে- বলেন তিনি।
আর খামার বাড়ি এলাকার বিক্রেতা সালেহ আহম্মদ স্মৃতিচারণ করে বললেন, আগে কেউ কেউ এসব দোকানে দাড়িপাল্লা কিনতেও আসত। কারণ মাংস ভাগ বাটোয়ারা করার জন্য পাল্লার দরকার হয়। তবে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন অনেকের বাসাতেই ডিজিটাল স্কেল পাওয়া যায়। তাই আর দাড়িপাল্লা চায় না এখন।
তবে কেউ কেউ মাংস সংরক্ষণ ও বিতরণ কাজের জন্য পলেথিন খুঁজতে আসেন বলেও জানান তিনি। আবার কোরবানির পশুর ভুড়ি পরিস্কার করার কাজে ব্যবহার করতে কেউ কেউ তাদের কাছে চুন কিনতে চান বলেও জানান তিনি। আবার কেউ কেউ ব্লিসিং পাউডারের খোঁজ নেন বলেও জানান বিক্রেতা।
এমএ/এসআইএইচ