মহালছড়ির আদিবাসীদের উপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি
খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে আদিবাসী বসতিতে হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন দেশের ২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক। একইসঙ্গে তারা এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার আইনে বিচার করার দাবি জানিয়েছেন শুক্রবার (৮ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে তার এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ির মাইসছড়ি ইউনিয়নের জয়সেন পাড়ায় স্থানীয় বাঙালী সেটেলার কর্তৃক আদিবাসী বসতিতে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, ৫ জুলাই সকালে আদিবাসী পুরুষরা যখন পাশের বাজারে গেছেন তখন সেটেলারদের ২০০ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে জয়সেন পাড়ায় আদিবাসী নারী ও বসতিতে হামলা চালায়। এ সময় আদিবাসিদের বাড়ি-ঘরে লুটপাট করে অন্তত ৩৭টি বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসীদের বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকলেও তারা হামলাকারীদের প্রতিহত করতে এগিয়ে আসেনি।
পরবর্তী সময় হামলাকারীদের সঙ্গে স্থানীয় আাদিবাসী জনগোষ্ঠীর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং হামলাকারীরা চলে যায়। এ ঘটনায় কয়েকজন আদিবাসী ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় আমরা খুবই ব্যথিত এবং ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি। আদিবাসী নির্যাতন নিপীড়ন কিংবা আদিবাসীদের অধিকার বঞ্চনার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাষ্ট্রীয় সেবা বঞ্চনা থেকে শুরু করে জান-মালের নিরাপত্তাহীনতা এখানে সবর্দাই বিরাজ করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাটি একটি ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। এটি চরমভাবে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।
বিবৃততে তারা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে -ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে; জয়সেন পাড়ায় আদিবাসী বসতিতে হামলকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে; দ্রুত বিচার আইনে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বৈচিত্রময়তা ধ্বংস করে সেটেলারদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যে সংস্কৃতি শুরু হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে চলতে পারে না। এ ধরনের প্রবণতা দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ জাতীয় সংহতি বিনষ্ট করবে। কাজেই দ্রুততম সময়ে ঘটনার প্রভাবমুক্ত তদন্ত করে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিবৃতি স্বাক্ষর করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেরট্রাস্টি ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ডা. সারওয়ার আলী, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম,সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এসএমএ সবুর, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, উন্নয়ন কর্মী রোকেয়া কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী ড. সেলু বাসিত, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) সাধারণ সম্পাদক, আব্দুর রাজ্জাক,গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতি কর্মী এ কে আজাদ, অলক দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা এবং সংস্কৃতি মঞ্চের আহ্বায়ক সেলিম রেজা।
এনএইচবি/এমএমএ/