আগামী ৩ বছরে ভোজ্যতেল আমদানি কমবে ৪০ শতাংশ: কৃষিমন্ত্রী
কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকার তেল উৎপাদনের তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তেলের আমদানি কমিয়ে ৪০ ভাগ তেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ভোজ্য তেলের সংকট কাটবে।’ মন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে ভোজ্যতেলের চাহিদার ১২ ভাগ উৎপাদিত হয় দেশে।
মঙ্গলবার (৭জুন) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা জানান। কৃষি সচিব সায়েদুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি মন্ত্রী বলেন, ২০২২-২০২৪ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ ভোজ্যতেল উৎপাদন করা হবে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো।
তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ ভাগ অর্থাৎ ১০ লাখ টন দেশেই উৎপাদিত হবে। এজন্য একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এরমধ্যে তিন থেকে চার লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা বিদেশ থেকে আমদানি হয়। গত অর্থবছরে ভোজ্যতেল আমদানিতে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরে গত ১০ মাসে ভোজ্যতেল আমদানিতে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আরও দুই মাসে ভোজ্যতেল আমদানির মোট ব্যয় দাঁড়াবে ২৪ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভোজ্যতেলে বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের চেষ্টা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বার বার বলছেন। আস্তে আস্তে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আগামী তিন থেকে চার বছরে কীভাবে তেলের উৎপাদন বাড়ানো যায় এবং কতটা বাড়ানো যায়, সে লক্ষ্যেই আমরা তিন বছরব্যাপী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। একই সঙ্গে আবার ধানের উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। এটা কীভাবে হবে সেটা নিয়েই আমরা কাজ করছি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের আমন ধানের যে নতুন জাতগুলো রয়েছে সেগুলো ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে পেকে যায়। আগে লাগত ১৪০ থেকে ১৬০ দিন। সময় কমে আসায় যে নতুন ধান আসবে সেটা কাটার পর সেখানে সরিষা লাগাব। সেটা আসবে ৮০ থেকে ৮৫ দিনে। এটা কাটার পরে সেই জমিতে আমরা বোরোতে যেতে পারি। এতে সরিষাটা একটা অতিরিক্ত ফসল হল।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্যাটার্ন ব্যবহার হয় এমন জমির পরিমাণ হলো ২০ লাখ হেক্টরে। এর ২৫ শতাংশেও যদি আমরা সরিষা দিতে পারি তাহলেও কিন্তু বিরাট উৎপাদন বাড়ানো যাবে। এক বিঘা জমিতে কৃষক ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করতে পারবে। এটাকে আমরা কর্মসূচি হিসেবে প্ল্যান করেছি। এটাকে আমরা মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাব। এরজন্য বীজ, সারসহ যে প্রযুক্তি আছে সেটা দিয়ে আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরিষার উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছি। এই জাতগুলো যদি আমরা মানুষের কাছে জনপ্রিয় করতে পারি তাহলে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এক সময় সয়াবিন ছিল গরিবের তেল। সরিষার ঝাঁজের জন্য বলা হতো এতে খারাপ জিনিস আছে, শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এটা সঠিক না।’
তিনি বলেন, ‘চর ও উপকূলে বাদাম হতো। এখনও হয়। উপকূলে সয়াবিনও একটি নতুন ফসল। আমাদের বিজ্ঞানীরা কিছু জাত এনেছেন এগুলো নোয়াখালীর সুবর্ণচর, ভোলার চরফ্যাশন এবং বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে। এর তেলও ভালো। এতে প্রোটিন অনেক বেশি। এটাও একটি সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সূর্যমুখীও একটি নতুন ফসল হিসেবে আসছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা এক্সট্র্যাকশনের জন্য মেশিন আবিষ্কার করেছেন। এতে করে প্রতিবছর যে ২৪-২৫ লক্ষ টন তেলের প্রয়োজন হয় আমরা এর মধ্যে ১০ লাখের বেশি নিজেরাই উৎপাদন করতে পারবো।’
এমএইচবি/এমএমএ/এএস