জীবন অনেক সুন্দর
মহান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে অনেক সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবী সৃষ্টির পর মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন আঠারো হাজার প্রজাতি। এরমধ্যে মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন। সেই মানুষ নিজেরাই নিজেদের সম্মানহানি করে। পারস্পরিক রেষারেষি, দ্বন্দ্ব, সংঘাতের কারণে জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ট। এরা জীবনের মানে বোঝে না। জীবনকে ভালোবাসতে জানে না। জীবনকে উপলব্ধিও করতে পারে না। এরা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। এরা হতাশাবাদী। এদের কোনো আশা নেই। এদের কাছে জীবনের মানে কষ্টের দিনলিপি।
আসলেই কি তাই? আশাবাদীরা কি বলেন? জীবন নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা কি রকম? আশাবাদীরা বলেন, জীবন অনেক সুন্দর। জীবনকে সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য যা যা করা দরকার তা করতে হবে। তাহলেই জীবন সৌন্দর্যময় হয়ে উঠবে। একটা গাছ পরিচর্যা করলে যেমন সজিব সতেজ হয়ে ওঠে, তেমনি মানুষের জীবন। একে যত্ম নিতে হয়। পরিচর্যা করতে হয়। তাহলেই জীবন তার সঠিক পথ খুঁজে পায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের মতো পশ্চাৎপদ দেশে জীবনকে আনন্দময় করে তুলবেন কিভাবে? সংসার চালানোই যেখানে দায়, সেখানে সুখের সন্ধান কোথায় পাবে? চাকরি যেখানে সোনার হরিণ সেখানে জীবনকে আনন্দময় করে তোলা কিভাবে সম্ভব? তার মানে আমাদের প্রত্যেকের একটাই মিশন, লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরি করব। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের এটাই হচ্ছে একমাত্র আশা। এটাই তারা স্বপ্ন দেখে। মা-বাবাও প্রতীক্ষায় থাকেন, কবে ছেলে একটা চাকরি পাবে? কিন্তু খুব কম মানুষই আছেন যারা লেখাপড়া শেষ করে কৃষক হবেন, ব্যবসায়ী হবেন, কিংবা উদ্যোক্তা হবেন তা ভাবেন না। তাহলে পরিবর্তন আসবে কি করে? শুধুমাত্র চাকরির পেছনে না ছুটে আমরা যদি জীবনটাকে ভিন্নভাবে সাজাতে চাই!
আমাদের দেশের উন্নয়নের অন্যতম শক্তি একজন কৃষক। সেই কৃষক যদি হয় শিক্ষিত, তাহলে তিনি কতভাবে সমাজে প্রভাব ফেলতে পারেন। তার চিন্তাশক্তি দিয়ে কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে পারেন। একজন উদ্যোক্তা গ্রামে বসেও নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারেন। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন। সবাইকে কেন চাকরি করতে হবে? চাকরি করলেই যে জীবন আনন্দময় হবে তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে? যার আবিষ্কারের নেশা সে কেন চাকরির চিন্তা করে সময় নষ্ট করবে?
জীবন নিয়ে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করা যায়। অতিরিক্ত চাপ নিয়ে জীবনকে কঠিন করে তোলার কোনো মানে নেই। জীবনকে সহজ করে তুলতে পারলেই সবকিছু সহজ হয়ে যাবে। সহজ সরল পথে হাঁটুন। সহজ ভাবনা ভাবুন। সামনে সংকট আসতে পারে ভেবে বর্তমানের হাসি বন্ধ রাখা কি ঠিক? বর্তমানের আনন্দকে উপভোগ করুন। প্রাণ খুলে হাসুন। হাসতে গিয়ে মুখ চেপে রাখা যাবে না। নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। নিজেকে গড়ে তোলা বা তৈরি হওয়ার জন্য খুব যত্নশীল হতে হবে। পরিচর্যা করতে হবে। সময়ের মূল্য দিতে হবে। আপনি যদি ইতিবাচক ভাবনা ভাবেন তাহলে দেখবেন আপনার মানসিক জোর অনেক বেড়ে যাবে। আর নেতিবাচক ভাবনা বেশি ভাবলে মানসিক জোর কমে যায়। মানসিক জোর কমে গেলে দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করে।
দুশ্চিন্তা, হতাশাও কিন্তু এক ধরনের সংক্রামক ব্যাধি। একজনের থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে। হতাশা থেকে মানুষ আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। যারা আত্মহত্যা করে তাদের মতো অভাগা আর নেই। এরা চরম হতাশাবাদীদের দলে। এরা যদি জীবনকে উপলব্ধি করতে পারত তাহলে কখনো আত্মহত্যার কথা ভাবত না। জীবন থেকে হতাশা নামক শব্দ চিরদিনের জন্য বিদায় করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবন অনেক সুন্দর। জীবনকে সুন্দর রাখার জন্য নিজেকে সময় দিন। নিজেকে নিয়ে একটু ভাবুন।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, ঢাকাপ্রকাশ ও সাহিত্যিক।
আরও পড়ুন>>>
আরএ/