স্বপ্ন কখনো মরে না
স্বপ্ন কখনো মরে না। স্বপ্ন বেঁচে থাকে। স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। কোনো স্বপ্নবাজ মানুষ জীবনে ব্যর্থ হয়েছে তার কোনো নজির নেই। যে কোনো সফল উদ্যোগের পেছনেই কিন্তু অনেক ব্যর্থতা থাকে। থাকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, শ্রম-ঘাম। সফলতা আপনা থেকেই ধরা দেয়নি। তাকে ধরতে হলে অদম্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। সেই চেষ্টার পেছনে থাকে স্বপ্ন। স্বপ্নই মানুষকে সফলতার দিকে ধাবিত করে। কেউই একবারে হিমালয়ের চূড়ায় উঠতে পারে না। হিমালয়ের চূড়ায় আরোহন করতে হলে অনেক বাধা-বিপত্তি পেরুতে হয়। পর্বতারোহীকে প্রথমে ছোটো ছোটো পাহাড়ে উঠে নিজেকে তৈরি করতে হয়। নিজের মানসিক শক্তি, শারীরিক শক্তি বাড়াতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, হিমালয়ে আরোহন করতে গিয়ে বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়তে হয়। তখন তিনি কি করেন? হতাশ হয়ে হিমালয়ে আরোহনের চেষ্টা বাদ দেন? তাহলে তো কখনোই তার হিমালয় জয় করা সম্ভব হবে না।
অন্যভাবে যদি বলি; দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা শুরুতেই কি বড় ছিল? আমাদের দেশে খুব কম সংখ্যক বড় ব্যবসায়ী আছেন, যারা বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ব্যবসার হাল ধরেছেন। বেশির ভাগই প্রথম জেনারেশনের ব্যবসায়ী। এ প্রসঙ্গে একটা উদাহরণ দিই। একবার এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সঙ্গে কথা হলো। তাঁর উত্থানের পেছনের গল্প বলছিলেন। তিনি পড়ালেখা শেষ করে শুরুতে চাকরিতে যোগ দিলেন। কিন্তু তাতে তিনি উৎসাহবোধ করছিলেন না। ব্যবসা তাকে চুম্বকের মতো টানছিল। তিনি ব্যবসা করবেন বলে মনস্থির করলেন। কিন্তু ব্যবসার জন্য যে পূঁজি দরকার তা তাঁর ছিল না। তারপরও তিনি দমলেন না। খুব অল্প পূঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন। তিনি ফ্রান্স থেকে চামড়া আমদানির একজন এজেন্ট ছিলেন। সফলতা কিছুতেই ধরা দিচ্ছিল না। তিনিও হাল ছাড়লেন না। ধৈর্য ধরতে লাগলেন। আস্তে আস্তে তার তিনি সফলতার মুখ দেখলেন। তাঁর পূঁজি বাড়তে থাকল। তিনি এক পর্যায়ে ওরিয়েন্ট ট্যানারী কিনে নিলেন। দিনে দিনে সেই ব্যবসা প্রসার লাভ করতে থাকল। তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন। সফলতা তাকে ধরা দিল। তিনি দেশের একজন খ্যাতিমান ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন।
সরকারের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বা সচিব হওয়ার জন্য তাকে কিন্তু অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়। একজন সেকশন অফিসার থেকে নিজেকে তিলতিল করে গড়ে তুলতে হয়। উঁচু পদে যাওয়ার পথটি সরলসোজা কোনো পথ নয়। সেখানে থাকে অনেক কষ্ট, অবহেলা, অবজ্ঞা আর বেদনার নানা কাহিনি। আমরা সেগুলো দেখি না। দেখতে পাই না। কেউ সচিব কিংবা রাষ্ট্রদূত হলে বাহবা দিই। আমাদের সামনে উঠে আসেন একজন সফল মানুষ। কিন্তু তার সফলতার পেছনে যে কত শ্রম ঘাম মেধা ক্ষয় করতে হয়েছে তা দেখি না।
যে কোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য চাই ধৈর্য। ধৈর্য না ধরতে পারলে সফলতা তাকে ধরা দেবে না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও তার বান্দাকে সবুর করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সবুরে মেওয়া ফলে। কিন্তু আমরা এই সবুরটুকু করতে চাই না। অতি অল্পতেই বিপুল টাকার মালিক হতে চাই। ধনী হতে চাই। শুধু তাই নয়, অতি দ্রুত যেকোনো উপায়ে বড়লোক হতে চাই। এই প্রবণতা আমাদের নীতি-নৈতিকতাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে।
ছোটবেলায় আমরা আদর্শলিপিতে পড়েছি, লেখাপড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে। কিন্তু এখন আমাদের অবস্থাটা এমন যে, লেখাপড়া না করেই গাড়ি ঘোড়ায় চড়তে চাই। এই মানসিকতার কারণেই আমরা যে কোনো উপায়ের ধান্দা করি। আবার শুধু লেখাপড়া করলেও হবে না। স্বপ্নও দেখতে হবে। বড় হওয়ার স্বপ্ন। যে স্বপ্ন আপনাকে সারাক্ষণ পেছন থেকে তাড়িয়ে বেড়াবে। ছাত্র অবস্থা থেকেই নিজেকে তৈরি করতে হবে। বর্তমান সময়ের উপযোগী করে তুলতে হবে। পাঠ্য বইয়ের মধ্যেই নিজেকে ডুবিয়ে রাখলে হবে না। সৃজনশীল বইও পড়তে হবে। নিজেকে সৃজনশীল করে তুলতে হবে। ভবিষ্যত পরিকল্পনার ছক এঁকেই এগোতে হবে। তাহলেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। মনে রাখতে হবে, স্বপ্ন কখনো মরে না।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, ঢাকাপ্রকাশ ও সাহিত্যিক।
mostofakamalbd@yahoo.com