শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১

দ্য ফার্স্ট ম্যান

প্রথম ভাগ: পিতার সন্ধানে

পাথুরে পথে গড়িয়ে চলা ওয়াগনের মাথার উপর দিয়ে বড় বড় ঘন মেঘের পাহাড় গোধূলির গা বিদীর্ণ করে ছুটে চলেছে পূর্বদিকে। আটলান্টিকের উপর মেঘেদের শরীর ভরে উঠেছে প্রায় তিন দিন আগেই। পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা বাতাসের অপেক্ষায় ছিল অনড়। তারপর আস্তে আস্তে চলা শুরু করে ক্রমেই দ্রুত থেকে দ্রুততর গতি পেয়েছে। শরতের মৃদু আলোকিত পানির উপর দিয়ে উড়ে চলে এসেছে গোটা মহাদেশের ওপর। মরক্কোর পাহাড়চূড়ায় এসে টুকরো টুকরো হয়ে আবার দলবদ্ধভাবে একত্রিত হয়েছে আলজেরিয়ার উঁচু মালভূমিতে। আর এখন তিউনিসিয়া সীমান্তে এসে চেষ্টা করছে তাইরেনীয় সমুদ্রের জলে গলে একাকার হতে।

বিশাল দ্বীপের মতো হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ভ্রমণ শেষে উত্তর দিকে বহমান সমুদ্র জল আর দক্ষিণ দিকে বহমান জমাট বালির উর্মিমালার কোলে আশ্রয় পেয়ে মেঘেদের গতিবেগ হাজার বছরের সাম্রাজ্য আর মানব অধ্যুষিত নামহীন এই দেশটার উপর ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো টুকরো সবিরাম বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে টুপ টুপ ঝরে পড়ছে এই চারজন ভ্রমণকারীর মাথার উপরের মোটা কাপড়ের ছাউনির উপর।

রাস্তাটার সুপরিসর অবয়ব থাকলেও উপরিভাগটা মজবুত নয়। ঘোড়ায় টানা গাড়িটা চলার সময় ক্যাচ ক্যাচ শব্দ হচ্ছে। যখন তখন ছোট ছোট পাথরের টুকরোর সঙ্গে ধাতব চাকার বেষ্টনীতে ঘষা লেগে কিংবা ঘোড়ার খুরের আঘাতে ফুলকি জ্বলে উঠছে; ছিটকে উঠে বাড়ি খাচ্ছে গাড়ির কাঠ-শরীরের সঙ্গে। কখনোবা বোবা শব্দ তুলে ডুবে যাচ্ছে রাস্তার খানাখন্দের নরম মাটিতে। ইতিমধ্যে ছোট ঘোড়া দুটো মাঝে মধ্যে অপারগতায় শ্লথ হলেও সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে ভারী গাড়িটাকে টেনে নিয়ে; দুলকি চালে মিশ্র পদক্ষেপে পথটাকে তারা পিছে ফেলে চলেছে। কোনোটা হয়তো কখনো নাসারন্ধ্র থেকে ফোঁস ফোঁস আওয়াজ তুলে ভারী নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিছিয়ে পড়ছে; ঠিক তখনই আরব গাড়োয়ান তার পিঠের ওপরের লাগামে টান মারছে আর পশুটা চলার ছন্দ ফিরিয়ে আনায় সচেষ্ট হচ্ছে।

চালকের পাশে প্রথম আসনে বসা ত্রিশ বছর বয়সী ফরাসি লোকটা তার সামনের পশু দুটোর ছন্দময় চলমান পেছনের অংশকে ভাসমান নিরিখে দু-এক পলক দেখে নিয়েছে। মাঝারি উচ্চতার এবং গাট্টাগোট্টা চেহারার লোকটার মুখটা লম্বাটে, ললাট চওড়া এবং গোলাকার, চোয়াল শক্ত আর চোখ নীল। মৌসুম আগে আগে শুরু হলেও লোকটার পরনে নিখুঁত করে বোনা তিন বোতামঅলা জ্যাকেট, ওই সময়ের কেতা অনুযায়ী গলা পর্যন্ত তুলে এনে আঁটো করে বাঁধা; তার ছোট করে ছাঁটা চুলের মাথার ওপরে পরেছে উদ্ভিদের শাঁস থেকে তৈরি হেলমেট। মাথার উপরে আচ্ছাদিত মোটা কাপড়ের উপর দিয়ে ঘন বৃষ্টি শুরু হলে গাড়ির পেছনের দিকে তাকিয়ে লোকটা জোর গলায় জিজ্ঞেস করে, ঠিক আছো তো?

পুরনো বাক্স-পেটরা আর আসবাবপত্রের স্তূপের মাঝে সাঁটানো দ্বিতীয় আসনটাতে বসে আছে একজন নারী, অন্য পোশাকাদি মলিন হলেও গায়ে জড়িয়ে আছে একটা পশমী মোটা শাল। ক্ষীণ একটা হাসি ছড়িয়ে দিয়ে সে বলল, হ্যাঁ, ঠিক আছি। বলার সময় তার অঙ্গভঙ্গিতে একটা ক্ষমাপ্রার্থী ভাব প্রকাশ পেল। চার বছর বয়সী একটা ছেলে তার গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মহিলার স্বাভাবিক সুন্দর অবয়বের চেহারায় ছড়িয়ে আছে কোমলতা, বাদামী চোখে তার উষ্ণ চাহনি, নাকটা তার ছোট তবে খাড়া, স্পেনীয় নারীদের মতো মাথাভর্তি ঢেউ খেলানো কালো চুল; কিন্তু ওই মুখাবয়বে কী একটা অস্বাভাবিক ইঙ্গিত রয়েছে। ক্লান্তির মতো ক্ষণিকের কোনো কালো ছায়া তার মুখের উপর পড়েছে এমন নয়। তার চাহনির উৎস যেন দূরে কোথাও, এ চাহনি যেন মিষ্টি কোনো অমনোযোগের।

এ রকমটি দেখা যায় কোনো নির্বোধের মুখে। তবে এ চাহনি যেন থেকে থেকে তার মুখের সৌন্দর্যের উপর ছড়িয়ে পড়ছে। মাঝে-মাঝেই অকারণ ভয়ের মিশ্রণ ঘটছে তার চিত্তহারী চাহনির ভেতর দিয়ে প্রকাশিত কোমলতার সঙ্গে। তবে সেই ভয়টা নিমিষেই কেটেও যাচ্ছে। তার কাজ করে ক্ষয়ে যাওয়া গ্রন্থিল হাতের মসৃণ অংশ দিয়ে স্বামীর পিঠ স্পর্শ করে মহিলা বলে, ঠিক আছে, ঠিক আছে। অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে হাসি থামিয়ে মাথার উপরের মোটা কাপড়ের ছাউনির তলা দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় রাস্তার উপর ইতিমধ্যে জমে উঠা কাদা চিকচিক করে ওঠা শুরু করেছে।

গাড়োয়ানের মাথায় পাগড়ির হলুদ রঙের মোটা রশির কারণে তার চেহারায় প্রসন্ন একটা ভাব ফুটে উঠেছে। পায়ের গুলের ওপরে সাজানো প্রশস্ত আসনে বসা ঢিলা পাজামায় তাকে আরও বেশি গাট্টাগোট্টা দেখাচ্ছে। স্বামী লোকটা আরব গাড়োয়ানের দিকে ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমাদের কি আরও অনেক দূর যেতে হবে?

বিরাট সাদা গোঁফের আড়ালে হাসি ছড়িয়ে দিয়ে গাড়োয়ান বলে, আর আট কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাবেন।

মুখে হাসি না থাকলেও মনোযোগী দৃষ্টিতে স্বামী লোকটা তার স্ত্রীর দিকে তাকায়। তার দৃষ্টি এখনো সামনের রাস্তায় নিবদ্ধ। লোকটা গাড়োয়ানকে বলে, লাগাম আমার হাতে দিন।

–আপনার যা ইচ্ছে, বলে বৃদ্ধ গাড়োয়ান তার হাতে লাগাম দিয়ে পাশে ফাঁকা হওয়া জায়গায় একটু সরে বসে। লাগাম হাতে দুটো ঝাঁকি মেরে লোকটা ঘোড়া দুটোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ঘোড়া দুটো ধীর গতি থেকে আরেকটু দ্রুততায় দুলকি চালে চলা শুরু করে এবং দ্রুতই সোজা চলতে থাকে।

আরব গাড়োয়ান মন্তব্য করে, আপনি ঘোড়া চালানোর কায়দা কানুন বেশ ভালোই জানেন, দেখছি।

লোকটা শুকনো সংক্ষিপ্ততায় উত্তর দেয়, হ্যাঁ।

চারপাশের আলো কমে আসে। হঠাৎই যেন ঝুপ করে রাত নেমে আসে। বাম পাশ থেকে একটা লণ্ঠন তুলে এনে পেছনের দিকে ফিরে গাড়োয়ান কয়েকবার চেষ্টা করে ভেতরের সলতেয় আগুন জ্বালাতে পারে। আবার জায়গামতো রেখে দেয় লণ্ঠনটা। এখন বৃষ্টি পড়ছে মৃদু লয়ে, একটানা। লণ্ঠনের মৃদু আলোয় বৃষ্টি চক চক করে। বাইরে বৃষ্টির মৃদু শব্দে অন্ধকার ভীড় করে। মাঝে মাঝেই গাড়িটা কাঁটাঅলা ঝোপঝাড়ের পাশ ঘেঁষে চলতে থাকে। ছোট ছোট গাছপালা লণ্ঠনের মৃদু আলোয় সেকেন্ডের জন্য ঝিঁকিয়ে উঠে মিলিয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ সময় গাড়িটা ফাঁকা জায়গার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায়। চার পশের অন্ধকারের কারণে ফাঁকা জায়গা আরও প্রশস্ত মনে হয়। রোদে পোড়া ঘাসের গন্ধ আর থেকে থেকে ভেসে আসা প্রাকৃতিক সারের গন্ধ মনে করিয়ে দেয় তারা এখন আবাদী জমির ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে।

পেছনের দিকে ঝুঁকে বসে লাগাম ধরে আছে স্বামী লোকটা। পেছন থেকে তার স্ত্রী কথা বলে ওঠে, এদিকে মনে হয় জনমানুষ নেই।

–তোমার কি ভয় করছে?

–কী বললে?

স্বামী পুনরায় জিজ্ঞেস করে। তবে এবার তার কথা বলা চিৎকারের মতো শোনায়।

–না, না। ভয় করছে না। তুমি সাথে থাকলে ভয় কিসের? তবে চিন্তিত মনে হয় তাকে।

–তোমার মনে হয় ব্যথা হচ্ছে?

–একটু একটু।

লোকটা ঘোড়া দুটোকে তাড়া দিলে রাস্তার মাঝে উঁচু হয়ে থাকা মাটির ওপরে চাকার আওয়াজ আর রাস্তার ওপরে ঘোড়ার নাল পরা খুরের আওয়াজ চারপাশের অন্ধকারকে ভরিয়ে তোলে।

১৯১৩ সালের এক রাত। ভ্রমণকারীরা দুঘণ্টা আগে বনের রেল স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছে। তৃতীয় শ্রেণির ট্রেনের কাঠের বেঞ্চে এক দিন এক রাতের দীর্ঘ ভ্রমণের পর তারা পৌঁছেছিল রেল স্টেশনে। এই আরব গাড়োয়ান তাদেরকে প্রায় বিশ কিলোমিটার ভেতরের দিকে একটা ছোট গ্রামের কাছে অবস্থিত এক খামারে নিয়ে আসার জন্য স্টেশনে অপেক্ষায় ছিল। ওই খামারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা স্বামী লোকটার। বাক্সপেটরা এবং অন্যান্য কয়েকটা জিনিসপত্র গাড়িতে তুলতে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া খারাপ রাস্তার কারণে আরও দেরি হয়ে গেছে। সঙ্গীর নীরবতা ভাঙার জন্য গাড়োয়ান বলে ওঠে, ভয় পাাবেন না। এদিকে কোনো চোর ডাকাত নেই।

সবখানেই আছে। তবে আমার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও আছে, বলে স্বামী লোকটা তার আঁটো পকেটের উপর চাপড় মারে।

গাড়োয়ান বলে, ঠিকই বলেছেন, পাগল ছাগল সবখানেই আছে।

ঠিক তখনই পেছন থেকে মহিলা তার স্বামীকে ডাক দেয়, হেনরি, ব্যথা করছে।

লোকটা ঘোড়াগুলোকে আরেকবার তাড়া দিয়ে স্ত্রীর উদ্দেশে বলে, এই তো আমরা পৌঁছে গেলাম বলে। আরেক মুহূর্ত পরে লোকটা পিছু ফিরে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, এখনও কি ব্যথা আছে?

স্বামীর দিকে অন্যমনস্কতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটুখানি হাসে মহিলা। দেখে মনে হয় না তার কষ্ট হচ্ছে। তবু বলে, হ্যাঁ, অনেক।

লোকটা গম্ভীর দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে।

মহিলার কণ্ঠে ক্ষমা প্রর্থনার সুর বাজে, তেমন কিছু না। মনে হয়, ট্রেনের কারণে এরকম হচ্ছে।

গাড়োয়ান বলে ওঠে, ওই যে দেখুন গ্রামটা। আসলেই রাস্তা থেকে বেশ খানিক দূরে বাম দিকে সলফেরিনো গ্রামের কয়েকটা আলো দেখা যায়। বৃষ্টির ভেতর দিয়ে আলোগুলো আবছা আবছা দেখায়। গাড়োয়ান আরও বলে, তবে আপনাদের ডান দিক দিয়ে যেতে হবে।

স্বামী লোকটা কিছুটা দ্বিধায় থেকে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমরা কি গ্রামের ভেতরে যাব, না কি বাড়িটাতে আগে যাব?

–না, না বাড়িটার দিকেই চলো। সেটাই ভালো হবে।

গাড়িটা ডান দিকে মোড় নেয়। সামনে অচেনা বাড়িটা তাদের জন্য অপেক্ষা বরছে। গাড়োয়ান বলে, আর এক কিলোমিটার।

স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে লোকটা বলে, আমরা পৌঁছে গেলাম বলে। হাতের মাঝখানে মুখ ডুবিয়ে মহিলা মাথা গুঁজে পড়ে আছে। লোকটা ডাক দেয়, লুসি।

তবে তার কোনো সাড়া নেই। হাত বড়িয়ে স্ত্রীকে ছুঁয়ে দেয় হেনরি। তার স্ত্রী নীরবে কাঁদছে। কণ্ঠ আরও জোরে চিৎকারের মতো করে প্রত্যেকটা শব্দ আলাদা আলাদা করে উচ্চারণ করে লোকটা বলে, তুমি ওখানে গিয়েই শুয়ে পড়বে। আমি ডাক্তার নিয়ে আসব।

–হ্যাঁ, ডাক্তার নিয়ে এসো। ব্যথাটা আমার কাছে ওই রকম মনে হচ্ছে।

আরব গাড়োয়ান তাদের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বলে হেনরি বলে, তার বাচ্চা হবে।
–গ্রামে কি ডাক্তার আছে?

–হ্যাঁ, আছে। আপনি চাইলে আমিই ডাক্তার ডেকে আনতে পারি।

–না, না যেতে হবে না। বাড়িটাতে খেয়াল রাখলেই হবে। আমিই দ্রুত যেতে পারব। কোনো ছোট গাড়ি কিংবা ঘোড়া পাওয়া যাবে?

–হ্যাঁ, গাড়ি একটা আছে। তারপর সে লুসির দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার ছেলে হবে। দোয়া করি ছেলেটা খুব সুন্দর হোক।

লুসি তার কথা কিছু বুঝেছে বলে মনে হয় না। তবে মৃদু হাসতে থাকে।

হেনরি বলেন, ও শুনতে পায় না। বাড়িতে গিয়ে ওর সাথে কথা বলার সময় জোরে বলতে হবে আর ইশারায় বুঝাতে হবে। গাড়িটা হঠাৎ ঘাসের চাপড়ার উপর দিয়ে চলতে থাকলে চাকার নিচে কোনো শব্দ শোনা যায় না। রাস্তাটা এখানে আরও সরু। পাশে কয়েকটা টালি ছাওয়া ঘর দেখতে পাওয়া যায়। ঘরগুলোর পেছনে আঙুরের ক্ষেতের প্রথম সারি। গাঁজানো আঙুরের কড়া গন্ধ এসে নাকে লাগে। উঁচু ছাদঅলা কয়েকটা ভবন পার হয়ে যায় গাড়ি। তারপর গাড়ির চাকা আকর বিছানো একটা উঠোনের উপর চলে আসে। মুখে কিছু না বলেই গাড়োয়ান লাগাম হাতে নিয়ে টেনে ধরে। ঘোড়াগুলো থেমে যায়; একটা বেশ জোরে নিশ্বাস ছাড়ে।

গাড়োয়ান হাতের ইশারায় একটা সাদা রং করা বাড়ি দেখায়। নিচু একটা দরজার পাশ বেয়ে উঠে গেছে একটা লতাগাছ। কপার সালফেট দিয়ে নীল রং করা হয়েছে দরজাটা। গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে হেনরি বৃষ্টির ভেতরেই দৌড়ে যায় ঘরটার দিকে। দরজা খুলে সামনে দেখতে পায় একটা অন্ধকার কামরা। ফাঁকা অগ্নিকুণ্ড থেকে একটা চাপা গন্ধ নাকে আসে। তার পেছন পেছন আগত গাড়োয়ান অন্ধকার পার হয়ে সরাসরি উনানের কাছে চলে আসে; জ্বলন্ত কয়লা ঘেঁটে কামরার মাঝখানে রাখা টেবিলের ওপরে ঝুলন্ত কোরোসিনের একটা লণ্ঠন জ্বালায়।

তখনই কেবল হেনরির চোখে পড়ে সে সাদা রং করা রান্নাঘরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। লাল সিরামিক টালির তৈরি বাসনপত্র ধোয়ার জায়গা, একটা পুরনো দেরাজ এবং তাকঅলা টেবিল, আর দেয়ালে একটা ভেজা স্যাঁতসেতে ক্যালেন্ডার। লাল টালির সিঁড়ি শেষ হয়েছে দ্বিতীয় তলার মাথায়। আগুনটা জ্বালিয়ে দাও, বলে সে গাড়ির কাছে ফিরে এলো। তার স্ত্রী গাড়িতেই নীরবে অপেক্ষা করছে। হেনরি স্ত্রীকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে যাতে নিরাপদে মাটিতে তার পা রাখতে পারে। তাকে বুকের সাথে এক মুহূর্ত ধরে রেখে হেনরি জিজ্ঞেস করে, হাঁটতে পারবে?

–হ্যাঁ, পারব, বলে সে স্বামীর বাহুতে আলতো ছোঁয়া রাখে।

ঘর পর্যন্ত ধরে নিয়ে গিয়ে হেনরি বলে, একটু অপেক্ষা করো।

(চলবে)

এসএ/

Header Ad
Header Ad

নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা

ছবি: সংগৃহীত

রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মুখোমুখি লড়াই মানেই ফুটবল দুনিয়ায় বাড়তি উত্তেজনা। স্প্যানিশ ফুটবলের এই দুই মহারথীর লড়াই কেবল মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে মিশে আছে স্পেন ও কাতালুনিয়ার জাতিসত্ত্বার লড়াই এবং রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের ইতিহাসও।

এবারের কোপা দেল রে ফাইনালে (শনিবার দিবাগত রাত ২টা, বাংলাদেশ সময়) আবার মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল ও বার্সা। তবে এবারের লড়াইয়ে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। রেফারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। সেভিয়ায় ফাইনালের আগে নির্ধারিত অনুশীলন করেনি রিয়াল, সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি কোচ ও খেলোয়াড়রা। এমনকি দুই ক্লাবের কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজেও থাকছেন না রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। গুঞ্জন উঠেছিল, রিয়াল হয়তো ফাইনাল বয়কটও করতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা খেলবে।

এদিকে, বার্সেলোনার সামনে রয়েছে ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ। লা লিগায় শীর্ষে থাকা বার্সা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছে। কোপা দেল রে শিরোপা তাদের ট্রেবল যাত্রার প্রথম ধাপ হতে পারে।

 

ছবি: সংগৃহীত

বার্সার জন্য দুঃসংবাদ, ইনজুরির কারণে দলের নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি এই ফাইনালে খেলতে পারবেন না। তার জায়গায় শুরুতে দেখা যেতে পারে ফেরান তোরেসকে। তবে দলের বাকিরা সুস্থ ও প্রস্তুত রয়েছেন। লিগের শেষ ম্যাচে অধিকাংশ মূল খেলোয়াড় বিশ্রামে থাকায় বার্সেলোনা কিছুটা সতেজ ভাবেই নামবে মাঠে।

রিয়াল মাদ্রিদেও রয়েছে ইনজুরি সমস্যা। দলের ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপে চোটে পড়েছিলেন আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচে। শেষ মুহূর্তে তার ফিটনেস দেখে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ডিফেন্ডার ফার্লান্দ মেন্ডি ফাইনালে থাকছেন না, এটা নিশ্চিত।

এখন পর্যন্ত সামগ্রিক এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে—১০৫ জয়। বার্সেলোনা জয় পেয়েছে ১০২ ম্যাচে। তবে কোপা দেল রে’র ইতিহাসে এগিয়ে আছে বার্সা। ৩৭ দেখায় বার্সা জিতেছে ১৬ ম্যাচ, রিয়াল ১৩টি। ৮ ম্যাচ ছিল ড্র।

তবে কোপা দেল রে’র ফাইনালে ৭ বার এল ক্লাসিকো অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে রিয়াল জিতেছে ৪ বার এবং বার্সা ৩ বার।

চলতি মৌসুমে দুই দলের দুই দেখায় দুটিতেই বার্সেলোনা জয়ী হয়েছে—লা লিগায় ৪-০ এবং সুপারকোপা দে এস্পানার ফাইনালে ৫-২ ব্যবধানে।

 

স্টেডিয়াম: দে লা কার্তুহা, সেভিল
সময়: বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত ২টা

 

Header Ad
Header Ad

মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার মুরাদনগরে নাঈম সরকার (১৯) নামের এক যুবককে মাদকাসক্তির কারণে ত্যাজ্য ঘোষণা করেছেন তার বাবা মফিজুল ইসলাম। ছেলের মাদকাসক্তি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

মফিজুল ইসলাম উপজেলার কোম্পানীগঞ্জের নগরপাড় এলাকার বাসিন্দা। তিনি বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কুমিল্লা নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এক হলফনামার মাধ্যমে ছেলে নাঈমের সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

হলফনামায় মফিজুল উল্লেখ করেন, নাঈম একাদশ শ্রেণির ছাত্র হলেও দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। সে মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এতে পরিবারে প্রতিনিয়ত অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছিল। গভীর রাতে বাড়ি ফেরা, মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা এবং নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছিল নাঈম। পরিবারের মান-মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মফিজুল ইসলাম বলেন, "সন্তানের এমন বিপথগামী আচরণে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। বহু চেষ্টা করেও তাকে সঠিক পথে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছি। অবশেষে পরিবার ও সমাজের সম্মান রক্ষার্থে তার সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি।"

Header Ad
Header Ad

গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে ক্রমাগত গরম বাড়ছে। সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং ও ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে সাধারণ মানুষ। তবে এ নিয়ে আশার খবর দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

তিনি বলেন, "এবারের গরমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। আমরা সীমিত পর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের প্রজেকশনে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। আশা করছি, অনেকটাই ম্যানেজ করতে পারবো।"

শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টারস বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত 'জ্বালানি সংকট উত্তরণের পথ' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে উপদেষ্টা আরও জানান, লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা হবে। জ্বালানি আমদানি করে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে হবে। এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকারের মেয়াদ স্বল্প হওয়ায় কাজের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, "জ্বালানির ক্ষেত্রে যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগে। আমরা এমন কিছু হাতে নিচ্ছি না, যা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বকেয়া পরিশোধে। বিল পরিশোধ না করলে কোনো দেশ ব্যবসা করবে না।"

তিনি আরও জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে সিস্টেম লস ৫০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লাইন লিকেজ ও গ্যাস চুরির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও কমিয়ে আনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আগামী বছর আর কোনো বকেয়া থাকবে না, শুধুমাত্র কারেন্ট পেমেন্ট দিতে হবে। ভর্তুকি বাড়বে না, বরং কমবে। আমরা যে সংকটের গহ্বরে পড়েছিলাম, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।"

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, বিট নিলামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে পুনরায় রি-টেন্ডার করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা
গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত: সৌরভ গাঙ্গুলি
র‍্যাফেল ড্রতে ৯ কোটি টাকা জিতলেন দুই প্রবাসী বাংলাদেশি
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো
অন্য নারীতে মজেছেন সৃজিত! মিথিলা কোথায়?
৪ মাসে কুরআনের হাফেজ হলেন ১০ বছরের অটিস্টিক শিশু আহমাদ
রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন বেহাত না হয়: আলী রীয়াজ
১৪ ব্যাংকে ২৩৮ কোটি টাকা স্থানান্তর, যা বললেন বিসিবি সভাপতি
কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি, মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান সেনা
বাইরে থেকে ফিরেই ঠান্ডা গোসল? সাবধান! এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে বিপদ
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান-ভারত পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প
রাঙামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে রিয়াল, ফাইনাল ম্যাচ বয়কটের হুমকি
আইন উপদেষ্টাকে জড়িয়ে ভারতের গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন, মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
নিজ দেশেই বিমান হামলা চালালো ভারত, ‘অসাবধানতা’ বলছে বিমান বাহিনী
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আরও ৮৪ ফিলিস্তিনি
আইনি নোটিশ প্রসঙ্গে যা বললেন ডা. তাসনিম জারা