শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক

‘উরি আল্লাহ’ মুখ ফুটে বেরোনো কথাটাকে জিভ থেকে আবার টেনে পেটে নামাল নুহু। ওরা জানতে চায়ছে, আমরা রোহিঙ্গা কি না! তবে কি ওরা ভেক নিয়ে ছো মেরে বসে থাকা মায়ানমার-সেনা? লুন সানের ফৌজ?

রোহিঙ্গা! এই পরিচয়টার জন্যই আজ তাদের এই হাল। তাদের বেঁচে থাকাটাই লাটে উঠেছে। মাঝে মাঝে নুহুর মনে হয়, আল্লাহ তাদের এই রোহিঙ্গা না করে কোনো পোকামাকড় করে পাঠালেই পারতেন? কোনো বুনেঢ্যাঙর করেও পাঠাতে পারতেন। নুহু জানে, তাদের শরীরের হাড়ের কোনো দোষ নেই, তাদের শরীরের মাংসের কোনো দোষ নেই, তাদের নাক-চোখেরও কোনো দোষ নেই, যত দোষের মূলে হল এই একটাই পরিচয়, রোহিঙ্গা! এই রোহিঙ্গা পরিচয়টাকে কি গলা টিপে মারা যায় না? নুহু তার মনের এই ক্ষেদটা একবার বিড়ি টানতে টানতে সুং তান কে বলেছিল। সুং তান জেলে বৌদ্ধিষ্ট। নুহুদের পিঠাপিঠি জেলেপাড়ার লোক। নুহুর সাথে তার জব্বর পিরিত।

সুং তানরা গরীব জেলে। ‘খাটি খাই’ গোছের। দংখালীর এই জেলেপাড়াটায় সুং তানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। নুহুরা বলে, বোদ্ধপাড়া। কেউ কেউ রসিকতা করে বলে, বুদ্ধুপাড়া। নুহুদের সঙ্গে সুংতানদের চিরদিনই দহরম-মহরম ভালো। চাল-ডাল, তেল-নুন ধার নেওয়ানেয়ির সম্পর্ক। এ সম্পর্কের হাড় শত শত বছরের পুরোনো। এই সেদিন পর্যন্তও হিংসার বিষাক্ত ফণা এখানে দাঁত বসাতে পারেনি। তাদের হক কথা, আমাদের আলাদা কোনো জাত নেই, আমরা এক সাথে খাটি, একসাথে খাই, এটাই আমাদের জাত। আমাদের জাত শ্রমে, ধর্মে নয়। তবুও নুহুরা টের পাচ্ছিল, ওপর তলার একটা অন্য গরম হাওয়া এখানেও দাঁত ফোটাতে শুরু করেছে। বিদ্বেষের একটা চোরা বিষ স্রোত মিহি করে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই গোব্যাচারি মানুষগুলোর মনে।

নুহু সুং তান কে বলেছিল, ‘আমাদের রোহিঙ্গা হয়ে জন্মানোটাই পাপ। আমরা যদি তোমাদের মতো বৌদ্ধ হতেম, তাহলে নিশ্চয় আমাদের ওপর এই জুলুম করত না মায়ানমার সেনা? যত দোষ মুখের দাড়ি আর মাথার টুপিতে!’

‘ধুর বোকা, এটা কোনো কথা হল? যে যে ধর্মেই জন্মাক না কেন, যে জাতিতেই জন্মাক না কেন, তাকে সেই ধর্ম বা জাতি নিয়েই গর্ব করা উচিৎ। কোনো জাতিই ছোট না। কোনো ধর্মও ছোট না। সব জাতিই সমান। সব ধর্মও সমান। এই পৃথিবীতে কত জাতি আর কত ধর্ম আছে বলো তো? শত শত, হাজার হাজার! একজন যদি আরেকজনকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লাগে, তাহলে তো পৃথিবীটাই ধংস হয়ে যাবে। একজন আরেকজনের মাথায় যদি কুঠার তোলে, তাহলে তো কোনো মানুষই বেঁচে থাকবে না। ধর্ম কুঠারে নয়, ধর্ম প্রেমে।’

‘তাহলে আমাদের কেন বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে? ওই ধর্মের জন্যই তো?’

‘সব ধর্মেই, সব জাতিতেই কিছু খারাপ মানুষ থাকে, মন্দ মানুষ থাকে নুহু, আমাদের মধ্যেও তা আছে। আর এই খারাপ মানুষদের হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা চলে এলেই সর্বনাশ। সব ভেঙে তছনছ করে দেয়। আজ আমাদের দেশে সেটাই ঘটছে।’ ফদফদ করে বকে গেছিল তামাটে রঙের পাঁচ ফুটের বেঁটেখাট মানুষ সুং তান। তারপর জোরে শ্বাস ঠেলে বলেছিল, ‘আমি কিন্তু ভাই, ওসবের ধাড়ধারি নে। তুমিও যা আমিও তাই।’ কথাটা বলার সময় যেন সুং তান তার বুক চিড়ে নুহুকে দেখাতে চেয়েছিল যে, সে একজন সাধারণ মানুষ ছাড়া অন্য কিছুই নয়। তার ‘নির্বাণ’য়েই শান্তি। বুদ্ধ আজীবন শান্তির কথাই বলতে চেয়েছেন। জীবনে অহিংসা ভড় না করলে ‘নির্বাণ’ হবে কীভাবে? ‘নির্বাণ’ ছাড়া তো মুক্তি নেই। সেই যেন একই কথা, কোথাও যেন ‘নির্বাণ’ আর ‘ঈমান’এর একই ঘাটে এসে গলাগলি করা।

‘হ্যাঁ, আমরা রোহিঙ্গা, তো কী হয়েছে? কেটে পানিতে ভাসিয়ে দেবেন? জবেহ করবেন? আসুন, তাইই করুন।’

আচমকা যেন দুম করে বাঁশ ফাটল। ছইয়ের ভেতর থেকে ছ্যান ছ্যান করে উঠলেন হালেমা। হৃদপিন্ড ধড়াক করে উঠল মতির। আরিফার তো মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার জোগাড়। নুহুর হৃদস্পন্দন তখন চরমে। আতঙ্কের পারদ ধুকপুক করছে। আর রেহাই নেই! মরণ এবার দুয়ারে! মা কি সর্বনাশটাই না করল! মতিও মনে মনে তার মা’কে দুষতে লাগল, অ্যা ক্যামুন মা গো, পেটে ধরা ছেলেকে জেনেবুঝে জল্লাদের হাতে তুলে দিচ্ছে!

বলতে বলতে আগন্তুক নৌকাটা থেকেও একটা মেয়েলি কণ্ঠস্বর ভেসে এল। যেন হালেমার কথাটাই দেওয়ালে ধাক্কা লেগে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এল। ঠান্ডায় বসে যাওয়া স্বর। যেন বহুত কষ্টে ঠেলেঠুলে গলা ফুঁড়ে বের হয়ে আসছে। গলার স্বরই জানান দিচ্ছে, মেয়েটি বৃদ্ধা এবং অসুস্থ। কথার মাঝে মাঝে গলা খিঁচে ধরা কাশিও জড় পাকিয়ে দিচ্ছে। নৌকাটার একেবারে পেট থেকে কথাটা ভেসে এল, ‘আমরাও তো তাই! হাতে জান নিয়ে পানি পানি ঘুরে বেড়াচ্ছি।’

‘বাপ রে, বাঁচলাম’। ধড়ে প্রাণ ফিরে এল মতির। ‘আমি তো বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।’ ঠোঁট নড়ল নুহুর। ভয়ের মেঘ কেটে মনের আকাশে এখন খুশির ঘুড়ি উড়তে শুরু করে দিয়েছে। নুহু এবার বৈঠাটাকে স্যাৎ স্যাৎ করে পাক মেরে মেহমান নৌকাটার দিকে টান মারল। মতিও দাঁড়টাকে বেঁকিয়ে ধরল। ‘কট’ করে উঠল নৌকাটা। মতি যখন গায়ের শক্তিটাকে একেবারে নিংড়ে দিচ্ছে, তখন তার দুবলা পাতলা শরীরটাও ধনুকের মতো বেঁকে যাচ্ছে। মতি ভাবছে, যাক একটা সাথী নৌকা তো পাওয়া গেল। আপদ-বিপদে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়া যাবে। কিন্তু ওরা উচিপুরংএর দিক থেকে আসছে কেন! ওরা যদি আমাদের মতো পালিয়েই যাবে, তাহলে তো ওরা উচিপুরংএর দিকে যেত? কিন্তু এ তো দেখছি ঘুরে আকিয়াবের দিকেই যাচ্ছে! খটকা বাঁধল মতির। ব্যাপারটা কি? তবে কি উচিপুরংএর দিকেও বার্মিজ সেনারা ডেরা বেঁধে আছে! মতি একবার ভাবল, ব্যাপারটা নুহুর সঙ্গে আলোচনা করি। আবার পরক্ষণেই ভাবল, না থাক, সরাসরি ওদের সঙ্গেই কথা বলি। নৌকাটা একেবারে আগন্তুক মেহমান নৌকাটার ঘাড় ঘেঁষে ভিড়ল। আলতো করে দুই নৌকার খোলের সঙ্গে ঠোকাঠুকিও লাগল। দুই নৌকাই দুলে উঠল। দুই নৌকার এই প্রেমময় টোকাতে নদীর জলও ছলাৎ করে কোমর দুলিয়ে উঠল। তার নীল-কালো জলের গালে মিহি করে টোলও পড়ল। নুহুদের নৌকাটা কাছে ভিড়তেই, আগন্তুক নৌকাটা থেকে পিলপিল করে গুচ্চের মানুষ বেরিয়ে এল! ফিক করে একটা কুপিও জ্বলে উঠল। নৌকার ওপরে গেঁড়ে বসে থাকা কালো ঘুটঘুটে ছায়াটা দুদ্দাড় করে নদীতে নেমে গেল। ছায়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝিম মেরে থাকা নৈশব্দটাও নেমে গেল। একটা ফিনফিনে তামাটে আলো নৌকাটায় ছড়িয়ে গেল। এই আলোতে নুহু চোখ ফেড়ে দেখল, দশটা মানুষের মাথা! মাঝবয়সী দুজন মেয়ে। সঙ্গে দুটো বাচ্চা। আর পাঁচজন পুরুষ। তার মধ্যে একজন বৃদ্ধ। ছইয়ের ভেতরে কাঁথা মুড়ি দিয়েও কেউ একজন বসে আছেন। ‘খক’ ‘খক’ করে কাশছেন। সম্ভবত সেই বৃদ্ধা মেয়েটিই হবে, যিনি একটু আগেই কাশতে কাশতে কথাগুলো বলছিলেন।

 আপনারা রোহিঙ্গা তো আকিয়াবের দিকে যাচ্ছেন কেন?’ মনের খুঁতখুতিটা উগলালো মতি। সে এতক্ষণে দাঁড়টা ধরে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘আমরা উচিপুরংএর দিকেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু ওদিকে বিজিবি যেতে দিচ্ছে না। তারা ধরে আবার এদিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে।’ চুল কোঁকড়ানো একটা ছিপছিপে চেহারার মাঝবয়সী লোক কথাগুলো বলল।

‘হাই আল্লাহ!’ আঁতকে উঠল আরিফা। ভাবল, এবার কী হবে! ভদ্রলোকের কথাটা শুনে মতিরও বুক চিনচিন করতে শুরু করে দিয়েছে। সে আফসোস করল, যাহ শালা, যে আশা নিয়ে এগোচ্ছিলাম, তাও জলে ভেসে গেল! বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড আবার এমন কেন করছে! তারা তো রোহিঙ্গাদেরকে এতদিন আশ্রয় দিচ্ছিল। হঠাৎ কী এমন হল যে, তারা মুখ ফিরিয়ে নিল! মতিরা শুনেছে, তাড়া খাওয়া, ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বড় আশ্রয়দাতা হল বাংলাদেশ। তাদের মানবিক মুখের জন্যেই হাজার হাজার রোহিঙ্গারা এখনও জীবনে বেঁচে আছে। টিকে আছে দুনিয়াদারি। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার বিভিন্নপ্রান্তে শরণার্থী শিবিরগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কুতুপালং, নয়াপাড়া, থাংখালী, উচিপুরং ক্যাম্পগুলোই আজ রোহিঙ্গাদের ঠিকানা। এগুলোর কোত্থাও আমাদের ঠিকানা হল না! এতটুকু মাথা গোঁজার ঠাঁই হল না! হুহু করে উঠল মতির হৃদয়। হাই আল্লাহ, আব্বার কী হবে! ও যে যেকোনো সময় ইন্তেকাল করবে! তার দাফন করার মাটিটুকু পাব কোথায়! আব্বার স্বপ্নাদেশ তবে কি বিফল হয়ে যাবে!

কষ্ট দলা পাকিয়ে উঠছে মতির। হৃদয়টা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাচ্ছে। আর কত সহ্য করবে! সে যে কাঠ-পাথর লোহা-ইস্পাত দিয়ে তৈরি নয়? সেও যে একজন রক্ত-মাংসের মানুষ।

‘তাহলে এখন কী করবে? কোন দিকে যাবে?’ কথা তো নয়, যেন একদলা কষ্ট টং করে গলা থেকে বেরিয়ে এল নুহুর। সঙ্গে দিক হারা পথ হারা মানুষের আকুতি।

‘আরে আলোটা!’ চমকে উঠল মতি। তারা যে এসব ঝুট-ঝামেলায় পড়ে ধেয়ে আসা লাল আলোটার কথা ভুলতেই বসেছিল।

‘আরে তাই তো!’ ঘাড় ঘোরালো নুহু। সে লম্বা দৃষ্টি ফেলল বঙ্গোপসাগরের দিকে। ঝাপসাতে যতদূর দৃষ্টি যায়, ভালো করে জরিপ করল। ‘কই, কোথায় গেল! আর তো দেখা যাচ্ছে না!’ বিস্ময় প্রকাশ করল নুহু। চোখের পাতায় অদ্ভুত সারল্যতা। ঠোঁটে একটা আত্মতৃপ্তির প্রশান্তি। কিন্তু মাথা চুলকালো মতি, ‘লেডা ক্যাম্পের দিকে যাব নাকি।’

‘তা গেলে হয়, তবে ওখানকার বিজিবি আবার চরে উঠতে দেবে? রাইফেল নিয়ে তাড়া করবে না তো!’ আশঙ্কা প্রকাশ করল নুহু।

‘হ্যাঁ, ওরাও ঢুকতে দিচ্ছে না। আমরাও খবর নিয়েছি।’ আগন্তুক নৌকা থেকে কথাটা ভেসে এল। চুল কোঁকড়ানো লোকটা গলা ঝেড়ে কথাগুলো বলল। সে আরও জানাল, ‘তবে শুনলাম, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের ঘুমধুম সীমান্ত চৌকির স্টেশন প্রধান লেফটানেন্ট জেনারেল আলি কাদের খুব ভালো লোক। খুবই মানবিক। দরদী মানুষ। তিনি নাকি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাচ্ছেন না। তিনি রোহিঙ্গাদের ট্রলারে করে নিয়ে গিয়ে টেঙ্গার চরে রেখে আসছেন। একটু দূর হলে কী হল, মানুষগুলো বেঁচেবর্তে তো থাকছে? আপাতত একটা ঠাঁই তো পাচ্ছে?’

‘টেঙ্গার চর বলতে মেঘনা………।’ মতি ফট করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল অমনি তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে লোকটা ভড়ভড় করে বলতে লাগল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, ওই যে মেঘনা নদীর পলি জমে যেটা নতুন গড়ে উঠেছে, ওটাই টেঙ্গার চর।’

‘তা আপনারা ওখানে গেলেন না কেন?’ হুট করে বেখাপ্পা প্রশ্ন করল নুহু।

‘ওখানে তো সরাসরি যাওয়া যাবে না। সে তো অনেক দূর। ঢেরখানি পশ্চিমে। বিজিবির লোকেরাই অন্যান্য ক্যাম্প থেকে ট্রলারে করে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে। ওখানে সরাসরি যাওয়ার ফুরসত থাকলে কি আর বলতে হত, ঠেলেঠুলে ঠিকই চলে যেতাম।’ একজন খোকলা দাঁতের লোক ত ত করে তোতলালো। সঙ্গে কোঁকড়ানো চুলের লোকটি যোগ করল, ‘টেঙ্গার চরে ওরা বেশিদিন রাখছে না। কিছুদিন রাখার পর আবার নাকি নয়াপাড়া অথবা কুতুপালং ক্যাম্পে সরিয়ে নিচ্ছে। টেঙ্গার চর যে জোয়ারের সময় তিন-চার ফুট পানির তলে ডুবে যায়।’

‘বলছেন কী!’ ভ্রূ কুঁচকে উঠল মতির। যেন এক বুক আশার মধ্যে কেউ জল ঢেলে দিল।

‘হ্যাঁ, তাইই তো শুনলাম। আমাদের পাশের বাড়ির কামালরা ওখানেই আছে।’ কোঁকড়ানো চুলের লোকটি এবার গলা দঢ় করে বলল। মতি বলল, ‘এ তো পেটে না মেরে ভাতে মারা!’

‘ওই আর কি, আজ না মেরে সাতদিন পরে মারা।’

‘তাহলে এখন উপায়?’ অন্ধকারে পথ হাতড়ায় মতি।

‘আপাতত পথ বলতে গেলে তো এখন একটাই পথ বাকি।’

‘কোন পথটা বলুন তো!’ উৎসুক হয়ে উঠল মতি। মনের মধ্যে তখন এক চিলতে ঠাঁই ফিরে পাওয়ার প্রবল আকুতি উছাল মারছে। 

‘নয়াপাড়া ক্যাম্প।’ লোকটা আলগোছে বললেন। তারপর সুখের কথা শোনালেন, ‘নয়াপাড়া ক্যাম্প বড় ক্যাম্প। ওখানে বিজিবি ঢুকতে দিচ্ছে না, এখন পর্যন্ত এরকম কোনো খবর নেই।’

‘তাহলে আর দেরি কেন? চলুন একসঙ্গেই যাই।’ তড়াক করে উঠল মতি। ঘাড়ের গামছাটাকে ঝেরে কোমরে বাঁধল। লোকটাও কোমর হেলাল, ‘হ্যাঁ, চলুন, তবে লেডা বর্ডার ঘেঁষেই যেতে হবে, তানাহলে আবার মায়ানমার সেনার খপ্পরে পড়ে যেতে পারি!’

‘তো, তাইই চলুন।’ তাড়া লাগাল মতি। সে এমন করছে যেন পারলে উড়ে চলে যাবে। নদী তার কাছে আর ভালো লাগছে না। অসহ্য হয়ে উঠছে। একটুখানি মাটি দেখার জন্যে তার মন ছু ছু করছে। 

‘আপনাদের বাড়ি কোথায় ছিল?’ জানতে চায়ল নুহু।

চলবে... 

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

আরএ

 

Header Ad

কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া

ছবি: সংগৃহীত

মিল্ক বিউটিখ্যাত দক্ষিনি অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া নতুন বছরে তার জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়ে পা রাখতে যাচ্ছেন। খলচরিত্র করে আলোড়ন তোলা অভিনেতা বিজয় ভার্মার সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন চলছিল অনেক দিন ধরেই। তবে এ নিয়ে কেউই মুখ খোলেননি। এবার তাদের সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তামান্না। এমনকি ২০২৫ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়ার সম্ভাবনা আছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমের এক প্রোমোশনাল ইন্টারভিউতে তামান্না তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানান, প্রেমের সম্পর্কের জন্য জীবনে দুবার হৃদয় ভেঙেছে তার। সেই সময়টা তামান্নার জন্য খুবই ভয়াবহ ছিল।

তিনি আরও জানান, তিনি খুব কম বয়সে একজন ছেলের সঙ্গে প্রথম ভালোবাসায় জড়িয়েছিলেন এবং তার দ্বিতীয় সম্পর্কটি ছিল তার অভিনয় ক্যারিয়ারের শিখরে থাকা অবস্থায়। তবে সে সময় তিনি অনুভব করেন যে, সেই ছেলে তার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য সঠিক ব্যক্তি নয়।

তবে এত কিছুর পরও বাহুবলিখ্যাত তামান্না প্রেমিকের নাম প্রকাশ করেননি। এর আগে গুঞ্জন ছিল যে, তিনি ভারতীয় অভিনেতা বিজয় ভার্মার সঙ্গে ডেট করছেন। পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায় বহুবার ফ্রেমবন্দি হয়েছেন তারা। যদিও নিজেদের এ সম্পর্ক আড়ালে রাখতে বদ্ধপরিকর দুজনই। এখন দেখার অপেক্ষা তামান্না জীবনসঙ্গী হিসেবে কাকে বেছে নেন।

সবশেষ তামান্না ভাটিয়াকে আইটেম গার্ল হিসেবে দেখা যায় অমর কৌশিক পরিচালিত ‘স্ত্রী ২’ সিনেমায়। এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেন রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কাপুর, পঙ্ক ত্রিপাঠিসহ আরও অনেকে।

Header Ad

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকার বিনিময়ে নয় মাসের শিশু সন্তানকে দত্তক দেন শরীফা খাতুন নামে মানসিক ভারস্যমহীন এক মা। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশের সহায়তায় ওই শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফেরত দেন।
মানসিক ভারসাম্যহীন নারী শরীফা খাতুন বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট মুসলিমবাগ এলাকায় তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান।

প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত এক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় শরীফা খাতুনের। এর পর সন্তানদের নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলত তার পরিবার।

গত মঙ্গলবার নিজের ৯ মাসের কন্যা সন্তানকে পঞ্চগড় পৌরসভার দক্ষিণ তেলিপাড়া এলাকায় একটি হলুদ খেতে রেখে ভিক্ষা করতে যান শরীফা খাতুন। এ সময় শিশুটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে স্থানীয় রুনা আক্তার নামে এক নারী; একইসঙ্গে শরীফাকেও নিজ বাড়িতে নেন তিনি। রুনা নামে ওই নারীর নিজ সন্তান না থাকায় শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইলে, ৫০০ টাকার বিনিময়ে রেখে চলে যান শরীফা।

এরপর চার দিন পর অবশেষে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছে শিশুটি। বর্তমানে শিশুটিকে দেখভাল করছেন মানসিক ভারসামহীন শরীফার ১৬ বছরের বড় ছেলে নয়ন।

এ বিষয়ে শরীফার ছেলে নয়ন ইসলাম বলেন, গত চার দিন আগে মা বোনকে নিয়ে হঠাৎ পঞ্চগড়ে যান। পরে একসময় বাড়িতে একাই এসে ঘরে তালা লাগিয়ে বন্দি অবস্থায় থাকতে শুরু করেন। বোন কোথায় তা জানতে চাইলে কোনো কিছুই জানাচ্ছিলেন না।

পরে অনেক কৈশলে বোনের অবস্থান জানতে পারি। এরপর সেই বাড়িতে গিয়ে বোনকে ফেরত চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করেন। আরও জানতে পারি মা বোনকে নেবেন না বললে তারা ৫০০ টাকা মাকে খেতে দিয়ে একটা কাগজে স্বাক্ষর করে নেন। শুক্রবার সাংবাদিক ও পুলিশ এসে তদন্ত করে আমার বোনকে আনতে নির্দেশ দিলে মাকে সঙ্গে নিয়ে বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসি।

স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক আগে থেকে ওই নারীকে দেখছি। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে পরিবার চালান। তবে কয়েকদিন আগে নিজের সন্তানকে মানুষের কাছে দিয়ে প্রায় পাগল হয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

কাজলা নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, সকালে শরিফা আমার কাছে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরেছেন আর বলেছেন আপু যেভাবেই পারো আমার মেয়েকে এনে দাও।

প্রতিবেশীরা বলেন, স্বামী না থাকায় পরিবারটা চালাতে শরীফা খাতুন ভিক্ষা করতেন। এর মাঝে এমন কাণ্ড ঘটে তিনি পাগল হয়ে গেছেন। তার তিনটা সন্তান। একটা ছেলে ও দুটি মেয়ে। এদের কি হবে আমরা জানি না। তবে সরকারি সহায়তা পেলে তাদের গতি হতো।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, আগের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। খবর পাওয়ার পর পঞ্চগড় সদর থানার ওসিকে জানানো হয়। বিষয়টি পুলিশের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু সমাধান করে ভারসাম্যহীন নারীর কাছে তার বাচ্চা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যেহেতু ওই নারীর বাড়ি বোদা উপজেলায়, সেখানকার ইউএনওকে জানিয়ে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

Header Ad

অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা

ছবি: সংগৃহীত

অ্যন্টিগার পেস সহায়ক উইকেটে নতুন বলের বাড়তি সুবিধা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছিল বাংলাদেশ। দিনের প্রথম সেশনে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সময় গড়াতেই বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় দুই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার মিকাইল লুইস ও আলিক অ্যাথানেজকে। জুটি গড়ে দুজনের ছুটতে থাকেন শতকের পথে। কিন্তু দুজনের কারও প্রত্যাশা পূরণ হতে দেয়নি বাংলাদেশ। দিনের শেষভাগে নার্ভাস নাইন্টিতে দুজনকে মাঠ ছাড়া করে প্রথম দিনের ইতি টানে বাংলাদেশ।

টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিন শেষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫০ রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দিকে বৃষ্টি হানা দেয় ম্যাচে। বৃষ্টি থামার পর আলোক স্বল্পতায় ৮৪ ওভার হওয়ার পরই দিনের খেলা শেষ করেন আম্পায়াররা।

টস জিতে বোলিংয়ে নেমে মেডেন ওভারে শুরুটা ভালো করেন হাসান মাহমুদ। অন্যপ্রান্তে আরেক পেসার শরিফুল ইসলামও মেডেন ওভার নেন। উইকেটের দেখা না পেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার কার্লোস ব্রাথওয়েট ও লুইসকে বেশ কয়েকবার পরাস্ত করেন বাংলাদেশের দুই পেসার।

ইনিংসের অষ্টম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আনা হয় তাসকিন আহমেদকে। এই পেসারই প্রথম ব্রেকথ্রু দেন দলকে। ১৪তম ওভারে তাসকিনের অফ স্টাম্পে পড়ে একটু ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে ডিফেন্স করেছিলেন ব্রাথওয়েট। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত হানে পায়ে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেন। যদিও তৎক্ষণাৎ রিভিউ নেন ব্রাথওয়েট। তবে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়নি।

তিনে নেমে টিকতে পারেননি কেসি কার্টি। ডানহাতি ব্যাটারকেও ফিরিয়েছেন তাসকিন। উইকেটে আসার পর থেকেই তাড়াহুড়ো করছিলেন তিনি। তাসকিনের মিডল এবং লেগ স্টাম্পের লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করার চেষ্টায় লিডিং এজ হয়ে মিড অনে থাকা তাইজুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়েছেন কার্টি।

২৫ রানে দুই উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলকে পথ দেখান লুইস ও কেভম হজ। তবে হজ ২৫ রান করে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ৫৯ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।

এরপর বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছে লুইস ও আথানজে জুটি। দুজনেই সেঞ্চুরির পথে ছিলেন। তবে সম্ভাবনা জাগিয়েও কেউই মাইলফলক ছুঁতে পারেননি।

ইনিংসের ৭৫তম ওভারে মিরাজের বলে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে ভুল করেন লুইস। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় স্লিপে। ক্যাচ নিতে ভুল করেননি শাহাদাত হোসেন দিপু। নব্বইয়ের ঘরে ২৬ বল আটকে থেকে আউট হন লুইস। ফলে ভেঙে যায় ২২১ বলে ১৪০ রানের জুটি। ২১৮ বলে এক ছক্কা ও নয় চারে ৯৭ রান করেন এই ওপেনার।

এর কিছুক্ষণ পরই ফিরেছেন আথানজেও। তাইজুলের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি স্কুপের মতো খেলেছিলেন আথানজে। যদিও তেমন গতি না থাকায় তার ব্যাটে লেগে বল উপরে উঠে যায়। সহজ ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক লিটন। দশটি চার ও একটি ছক্কায় ১৩০ বলে ৯০ রান আসে বাঁহাতি এই ব্যাটারের ব্যাটে। তিন রানের মধ্যে দুই সেট ব্যাটারকে ফিরিয়ে লড়াইয়ে ফেরার সম্ভাবনা জাগায় বাংলাদেশ।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ
মাকে হত্যার পর থানায় হাজির ছেলে
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জনকে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি
উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না: রিজভী
ভিসা কবে উন্মুক্ত করবে সেটা ভারতের নিজস্ব ব্যাপার: হাসান আরিফ
জুরাইন রেলক্রসিং ছাড়লেন রিকশাচালকরা, ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু
পাঁচ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
সাফজয়ী নারী ফুটবলার আইরিনকে নওগাঁয় সংবর্ধনা
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেবে পাকিস্তান
বেনাপোলে সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার
পুলিশ-অটোরিকশা চালক সংঘর্ষ, ঢাকা-পদ্মা সেতু ট্রেন চলাচল বন্ধ
ভারতীয় সাবমেরিনের সঙ্গে মাছ ধরা নৌকার সংঘর্ষ, নিখোঁজ ২
সংসার ভাঙার দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান
ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি
আ.লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন থেকে ফিরলেন আরও ৮২ বাংলাদেশি