শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা


আরেফিন ঘুম থেকে উঠে অভ্যাস বসত খবরের কাগজ খোঁজেন। পত্রিকাটা সাধারণত দরজার নিচ দিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে না পেয়ে তিনি দরজা খুলে বাইরে যান। বাইরেও কোনো পত্রিকা নেই। তার মনে প্রশ্ন জাগে। কি হলো? পত্রিকা আজ দেয়নি?

আরেফিন রুমে এসে রুমকিপারকে ফোন দিয়ে পত্রিকার বিষয়ে জানতে চান। রুমকিপার তাকে জানায়, পত্রিকা আজ বের হয়নি। আগামী কয়েকদিন পত্রিকা বের হবে কি না সন্দেহ।

আরেফিন এর কারণ জানতে চাইলে রুমকিপার সরাসরি এর উত্তর না দিয়ে বলল, টিভি দেখুন না স্যার! টিভিতে খবর দেখুন।

টিভিতে চীনা ভাষার খবর হয় বলে আরেফিন টিভি ছাড়েন না। তিনি মনে মনে বিরক্ত হন। দেশ-দুনিয়ার কোনো খবর জানা যাবে না! এটা কী করে সম্ভব! সকালে পত্রিকা না পড়তে পারলে মনে হয়, কি যেন করা হয়নি। নিজেকে বড় অসম্পূর্ণ লাগে। মন খারাপ করে কিছুক্ষণ সোফায় বসে থাকে। মোহিনীর কথা তার খুব মনে পড়ে। তিনি ফোন হাতে নিয়ে মোহিনীকে ফোন করেন। না। মোহিনীকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর তিনি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে মোহিনীকে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু ম্যাসেঞ্জার খোলা যাচ্ছে না। উইচ্যাট ছাড়া অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কাজ করছে না। হতাশ হয়ে আরেফিন বসে থাকেন। ঘড়ির দিকে তাকান। ঘড়ির কাঁটা তখন নটার ঘরে। সাড়ে নটায় নাস্তার সময় শেষ হয়ে যাবে।

আগে নাশতা করতে যাবে নাকি গোসল করবেন? এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে কিছুটা সময় পার হয়ে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আর মাত্র পনের মিনিট হাতে আছে। এখন গোসল করতে গেলে নাশতা পাওয়া যাবে না। তাই তিনি তাড়াহুড়া করে জামা-প্যান্ট গায়ে দিয়ে নাশতা করতে ছুটে যান। রেস্তোরাঁয় এসে তিনি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকান। পরিবেশটা কেমন যেন অচেনা লাগে। চেনা মানুষগুলোও অচেনার মতো আচরণ করছে। দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। তিনি মনে মনে ভাবেন, হঠাৎ কি হলো? কেউ কাউকে যেন চেনে না। ফাঁকা ফাঁকা করে বসে আছে। কেউ কারো সঙ্গে কথা বলে না। গল্প করে না। একেকজন দূরে দূরে বসে রোবটের মতো খাবার খাচ্ছে। এ কী অবস্থা!

নাশতা করতে গিয়ে আরেফিন রীতিমতো গোলকধাঁধায় পড়ে। শত শত আইটেমের খাবার সাজানো। কিন্তু কোনটা তিনি নেবেন তা খুঁজে পান না। চীনে এসে তিনি প্রথম টের পেলেন তার জন্য খাবারের সমস্যা কতটা প্রকট।

আরেফিন দেখলেন, নাশতার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। অনেক চিন্তাভাবনার পর তিনি প্লেটে করে ডিম, রুটি, ফলের রস আর কিছু কাটা ফল নিলেন। অনেকটা নাকেমুখে দেওয়ার মতো অবস্থা। তৃপ্তি সহকারে খেতে পারলেন না।

যদিও সকালবেলাই আরেফিন সারাদিনের খাবার খান। সকালে যে আইটেমগুলো থাকে সেগুলো অন্তত মুখে দেওয়া যায়। দুপুরের এবং রাতের খাবারের কোনো আইটেমই তিনি ঠিকমতো খেতে পারেন না। সব খাবারেই তার সন্দেহ। সাপ, কেচো, বেজি, শুকর অথবা পোকামাকড় খেয়ে ফেলার ভয়। কোনো কিছু খেতে গেলেই শরীরের রোমকূপগুলো খাড়া হয়ে ওঠে। বমি বমি ভাব আসে। আজ সকালে যে নাশতা করেছে তা দিয়ে সারাদিন টেকা দায়। তাই তার মাথায় সারাদিনের চিন্তা।

অনেকটা হতাশা নিয়েই রিসিভশনের দিকে এগিয়ে যান আরেফিন। রিসিভশনে গিয়ে পত্রিকা না পাওয়ার বিষয়টি জানান। রিসিভশনিস্ট মুসকি হেসে বলল, দুঃখিত, আজ পত্রিকা দেয়নি।

বিষয়টা আরেফিনের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে তিনি আবারও বললেন, পত্রিকা দেয়নি! না দেওয়ার কারণ কি জানতে পারি?

আপনি হয়তো জানেন না, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ব্যাপকভাবে বিস্তারলাভ করায় এখানে লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউন মানে বুঝতে পারছেন তো? সবকিছু বন্ধ। কেউ কোথাও মুভ করতে পারছেন না। সব ধরনের চলাচল বন্ধ।

আরেফিনের চোখেমুখে বিস্ময়। তিনি কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি কিছুক্ষণ হাবাগোবার মতো দাঁড়িয়ে থেকে রুমের দিকে হাঁটা দিলেন। সকাল থেকেই হোটেলের পরিবেশটা কেমন যেন হয়ে গেল। হোটেলের প্রাণবন্ত পরিবেশে মলিনতা ভর করল। লিফটে একজন উঠলে দ্বিতীয়জন লাইনে অপেক্ষা করে। কেউ উঠতে গেলেও আরেকজন বলে, প্লিজ উঠবেন না।

আরেফিন রুমে গিয়ে সেভ করলেন। গোসল সারলেন। কর্মশালায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। আরেফিনের রুম যে ফ্লোরে সেই ফ্লোরেই তাদের কর্মশালা। তিনি পায়ে হেঁটে সেমিনার কক্ষে গেলেন। সেখানে গিয়েও তিনি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তিনি দেখলেন, সেমিনার কক্ষের চেহারা একদিনের মধ্যে পাল্টে গেছে। আরেকদিন আসনগুলো ছিল পাশাপাশি। একজনের খুব কাছাকাছি আরেকজন। আজ নিরাপদ দূরত্বে আসনগুলো সাজানো হয়েছে। একজন ভলান্টিয়ার দূরত্ব বজায় রেখে আরেফিনের সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর বিনয়ের সঙ্গে বলল, আপনার আসনে নেমপ্লেট রয়েছে। আপনার নেমপ্লেট যেখানে রয়েছে আপনি সেখানেই বসবেন।
তারপর একে একে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সবাই এসে উপস্থিত হলেন। প্রশিক্ষকরাও এসে যার যার আসনে বসলেন। শুরুতেই আয়োজকদের একজন কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিষয়ে কথা বললেন। তিনি সবাইকে খুব সাবধানতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়ে বললেন, করোনাভাইরাস ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে। একজন আক্রান্ত ব্যক্তি হাজারজনকে সংক্রমিত করতে পারেন। সুতরাং খুব সাবধান! আর এখানে যারা প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষণার্থী সবাই হোটেলেই অবস্থান করছেন। কাজেই বাইরে থেকে কারো আসার সুযোগ নেই। আপনারা বাইরের কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন না। কারো সঙ্গে করমর্দন করবেন না। দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে সাবধনতা।

আরেফিন দুশ্চিন্তায় পড়েন। তিনি জানতে পারেন, কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। প্রিয়জনরা দেখতেও পারে না। আরেফিনের ভেতরে ভয় ঢোকে। আক্রান্ত হওয়ার ভয়।

আরেফিন উহান শহর নিয়ে অনলাইনে কিছু পড়াশুনা করেন। এই শহর সম্পর্কে কিছুটা জানার চেষ্টা করেন তিনি। উহান, হুবেই প্রদেশের রাজধানী শহর। এই শহরে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস। ঢাকা শহরের মতোই ঘনবসতি। কিন্তু নিয়মশৃঙ্খলা মানার ব্যাপারে উহানবাসী খুবই সচেতন। লকডাউন ঘোষণার পর সবাই ঘরে ঢুকে যায়। বিশেষ প্রয়োজনেও কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। যদিও লকডাউনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন ঘোষণা করল, কেউ বাড়ির বাইরে বের হবেন না। সবাই ঘরে থাকবেন। ব্যাস, সবাই পুলিশের ঘোষণা শতভাগ মেনে নিল।

সতের বছর আগে এই শহরে সার্স ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছিল। কিন্তু এবারের আক্রমণটা আরও বেশি ভয়ঙ্কর বলে ধারণা করছেন নগরবাসী। লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সেই তথ্যও জানতে পারলেন তিনি। তার ভেতরে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অজানা ভাইরাস নিয়ে অজানা আতঙ্ক। এমন আতঙ্ক আগে কখনো সে অনুভব করেননি। এখন করছেন। রুমের মধ্যে তার কেবলই মনে হচ্ছে, চারদিক থেকে ভাইরাসগুলো জাতিসাপের মতো ফণা তুলে ধেঁয়ে আসছে।

আরেফিন ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠেন। চিৎকারের এক পর্যায়ে তিনি তার মাকে ডাকেন। মা বাঁচাও! অনেক দিন পর তার মা’র কথা মনে পড়ল। বিপদের সময় তার মা’র কথা খুব মনে পড়ে। আজও তার খুব মনে পড়ছে। মনে মনে তিনি ভাবেন, আমার মা কেমন আছেন গ্রামে? বাবা কি এখনো মাকে মারেন? তার বংশ তুলে গালি দেন? মা’ বাপের বাড়ির জমি বিক্রি করে টাকা আনতে বলে? বাবাটা এতো স্বার্থপর কেন? এই রকম একটা নীচুঘরে আমি কেন জন্ম নিলাম? কেন আমার উচুঘরে জন্ম হলো না? তাহলে আমার জীবনটা অন্য রকম হতে পারত। মোহিনীর সঙ্গে আমার জীবনটাকে অন্যভাবে সাজাতে পারতাম। উচু-নীচুর দ্বন্দে! না হলো সংসার! না হলো ভালোভাবে বেঁচে থাকা।

আরেফিন মোহিনীর কথা ভাবেন। এখন মোহিনী কি করছে? কোথায় আছে সে? সে কি তার বাপের বাসায় চলে গেছে? নাকি নিজের বাসায় আছে? ওই বাসাটিও তো ওর কেনা। কাজেই বাপের বাসা কিংবা নিজের বাসায় যাওয়া আসা কোনো কিছুই ম্যাটার করে না। কিন্তু সে আমার ওপর এতোটা রেগে গেল কেন? আমি তাকে চীনের আসার কথা আগে থেকে বলিনি। এটাই কি আমার অপরাধ? এর চেয়ে বড় অপরাধ তো আগেও করেছি। সেটাতে তো এতোবেশি রিঅ্যাক্ট করেনি! হ্যাঁ, আমি ওর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। ওর হাত ছুঁয়ে বলেছিলাম, আমি ভুল করেছি। ভবিষ্যতে আর ভুল হবে না। সেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছি। কাজটা আমার ভুলই হয়েছে। প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা অপরাধ। আমার উচিত ওর কাছে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু আমার ফোন তো সে ধরছে না! কি করে ক্ষমা চাইব? দেখি তো আবার চেষ্টা করে!

আরেফিন মোবাইল ফোনে মোহিনীকে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু মোহিনীকে পান না। একবার নয় দুইবার নয়, পাঁচছয় বার। তারপর তিনি মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলেন। দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলেন, দুর্ভাগ্য!

আরেফিন মনের অস্থিরতা দূর করার জন্য টিভি ছাড়েন। টিভিতে সিনেমা দেখবেন বলে রিমোটের বোতাম চাপতে থাকেন। একের পর এক চ্যানেলে যান। কোনোটাই যুৎসই মনে হয় না। তিনি রিমোট ছুড়ে ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দেন। বালিশে মুখ গুজে নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। ওই চেষ্টাই সাড়। মনের ছটফটানি কিছুতেই দূর হচ্ছে না। আরেফিন মনে মনে বলেন, ক্যারিয়ারের স্বার্থে কর্মশালায় এসে আমি কি সবই হারালাম!

চলবে…

আরও পড়ুন

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

Header Ad
Header Ad

পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গে সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রকাশের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মন্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বলেন, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে মন্তব্য এসেছে, তা ভিত্তিহীন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে নিপীড়ন চলে আসছে, তার প্রতি ভারতের দীর্ঘদিনের উদ্বেগের সঙ্গে এই বিষয়টির তুলনা টানার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা একেবারেই অসৎ প্রচেষ্টা। এমনকি যেসব অপরাধী ওইসব ঘটনায় জড়িত, তারা আজও বিচার এড়িয়ে চলেছে।”

এর আগে ৮ এপ্রিল, ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সুরক্ষা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

এই মন্তব্যকেই ‘হস্তক্ষেপমূলক’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশকে দায়ী করেছেন। গত ১৬ এপ্রিল নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে এক সভায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একসঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি ছড়িয়েছেন।”

প্রসঙ্গত, নতুন ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আগুন লাগানো, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এই ইস্যু শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়—উত্তর প্রদেশসহ ভারতের আরও কিছু রাজ্যেও সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ এবং নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

Header Ad
Header Ad

দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা

পুলিশ কনস্টেবল শামীম হোসেন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত পুলিশ কনস্টবল শামীম হোসেন (৩০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে সহকর্মীরা শয়নকক্ষের জানালা দিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।

নিহত শামীম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে। তার কনস্টবল নং ৫৩২।

চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই রমজান আলী জানান, শামীম হত অক্টোবরে দর্শনা ইমিগ্রেশনে যোগদান করে। যোগদানের পর থেকেই গত ৬ মাস ধরে নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের ২য় তলার একটি কক্ষে বাস করে আসছিলেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় কয়েকজন সহকর্মী খোঁজ নিতে গেলে শামীম হোসেনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।

খবর পেয়ে সকালে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, সহকারী পুলিশ সুপার দামুড়হুদা -জীবননগর) সার্কেল জাকিয়া সুলতানা, দর্শনা থানার ওসি শহীদ তিতুমীর ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর বেলা ১১ টায় মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে আত্মহত্যা। তবে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

পুলিশ কনস্টেবল শামীম হোসেন ২০১৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে।

Header Ad
Header Ad

দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর আত্রাইয়ে বিষ প্রয়োগ করে দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে সানজিদা (১৬) নামে এক কিশোরীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন নিহত কিশোরীর স্বজনেরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত কিশোরীর মামা ফজলুর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে ওই কিশোরীর মা খুশি বেগম, নানা মোসলেম প্রামাণিক, চাচা সাইফুল ইসলাম মন্ডল, মামা হামিদুল প্রামাণিক উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্য ফজলুর রহমান বলেন, নিহত কিশোরী সানজিদা আত্রাই উপজেলার আন্দার কোটা গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শামসুল মন্ডলের মেয়ে। সানজিদা উপজেলার ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা কাজের সূত্রে দীর্ঘদিন ধরে সৗদি আরবে ও আরব আমিরাতে (দুবাই) অবস্থান করছেন। শামসুল মন্ডলের স্ত্রী খুশি বেগম মেয়ে সানজিদাকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে বাস করে আসছিলেন। শামসুল বসতবাড়ির বসতভিটার উত্তর পাশে বাবা মোসলেম মন্ডলের কাছ থেকে জমি কিনে নিয়ে ৪ বছর আগে মাটির বাড়ি তৈরি করেন। সেই বাড়িতেই সানজিদা ও তার মা বসবাস করতো। পরে ওই জায়গায় পাকা বাড়ি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করলে শামসুলের বাবা মোসলেম ও ভাই সাজিম মন্ডল বাঁধ সাজে। সানজিদার দাদা শামসুলকে বসতভিটার উত্তর পাশে পাকা বাড়ি না করে দক্ষিণ পাশে নীচু জায়গায় বাড়ি করার জন্য বলে আসছিল। এ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। সানজিদার বাবা ও ভাই বিদেশে থাকায় বাড়ি করা নিয়ে বিরোধের জেরে সানজিদা ও তার মায়ের সঙ্গে তাঁর দাদা মোসলেম ও চাচা সাজিমের প্রায় পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। এই কলহের জেরে দাদা মোসলেম মন্ডল ও সাজিম মন্ডল হত্যার উদ্দেশ্যে গত ৯ এপ্রিল হত্যার উদ্দেশ্যে সানজিদার শরীরে বিষ প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ এপ্রিল রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে সানজিদা বলে গেছে তার দাদা ও চাচা তাঁর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করেছে। তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করা আছে। এ ঘটনায় রাজশাহী রাজপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে মোসলেম মন্ডল ও সাজিম মন্ডল পলাতক রয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ এপ্রিল সকালে সানজিদা প্রাইভেট পড়ার জন্য ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে যায়। প্রাইভেট পড়ে সে বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে আসে। এ সময় সাংসারিক কাজে সানজিদার মা খুশি বেগম বাড়ির বাইরে ছিলেন। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে সানজিদার দাদা মোসলেম ও চাচা সাজিম সানজিদার ঘরের ভেতরে যায়। দাদা মোসলেম সানজিদার পাশে বসে একপর্যায়ে তাকে জাপটে ধরে এবং চাচা সাজিম পকেট থেকে বিষের ইনজেকশন বের করে তার বাম হাতের শিরায় জোর ইনজেকশন প্রয়োগ করে। তারা সানজিদাকে হুমকি দিয়ে বলে এ কথা কাউকে বললে তার মতো বাবা ও ভাইকেও হত্যা করবে। সানজিদার মা খুশি বেগম বাড়িতে এসে মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় মেয়েকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ওই দিনই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সানজিদার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত মোসলেম ও সাজিমের ফাঁসি দাবি করা হয়।

সাজিম মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে তা বন্ধ পাওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘যে মেয়েটি মারা গেছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় যোগাযোগ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় রাজশাহী রাজপাড়া থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। সেখানেই নিহত কিশোরীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত
দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা
দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ
গত ৯ মাসে এক আকাশ ভালোবাসা অর্জন করেছি : প্রেসসচিব
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজে আগ্রহ দেখায়নি বেসরকারি চ্যানেল, দেখাবে বিটিভি
সন্ত্রাসী তালিকা থেকে তালেবানকে বাদ দিলো রাশিয়া
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, জানালেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
ব্রাজিলের ভক্তদের ‘বানরের’ সঙ্গে তুলনা, নিষেধাজ্ঞার মুখে আর্জেন্টিনা
নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক
কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা
চুয়াডাঙ্গায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন নিহত
ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪
সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
গাইবান্ধায় মাদক মামলায় ৩ যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
তোপের মুখে ওয়াক্‌ফ আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
নিজেকে বরিশাল সিটির মেয়র ঘোষণার দাবিতে মামলা করলেন ফয়জুল করীম