ইফতার-সেহেরি: যা খাবেন, যা খাবেন না
ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের একটি বড় এবাদত রোজা রাখা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মুসল্লিরা সংযম পালন করেন। রোজার মাসে খাদ্যাভ্যাসে আসে বড় পরিবর্তন। সাধারণত আমরা দিনে দুই বা তিনবেলা খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু রোজার সময়ে খাবারের এই চিরাচরিত নিয়ম পাল্টে যায়। শেষরাতে সেহরি খেয়ে রোজা শুরু হয়, শেষ হয় মাগরিবের আজান শুনে ইফতার করার মাধ্যমে। বছরের অন্যান্য সময়ের থেকে আলাদা খাদ্যাভ্যাস বলেই এসময় খাবারের প্রতি একটু বেশি যত্নশীল হতে হয়। এমন সব খাবার খেতে হবে, যেগুলো শরীরের জন্য বেশি উপকারী। সেহরি, ইফতার ও রাতের খাবারে খেতে হবে স্বাস্থ্যকর সব খাবার।
তীব্র গরমের এই সময় রোজা রেখে সুস্থ থাকাটা বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয়। এ জন্য ইফতার ও সেহেরিতে বেশকিছু খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম। আবার কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় রাখলে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে রোজা রাখার সময়টা কিছুটা হলেও সহজ হবে বলে আশা করা যায়। রমজানে যেসব খাবার খাওয়া যেতে পারে সেগুলো নিয়েই ঢাকাপ্রকাশ-এর আজকের আয়োজন।
রোজায় যা খাওয়া উচিত:
- খেজুর∶ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী এই ফলটি খাওয়া রাসুলুল্লাহ সা. এর সুন্নত। এতে আছে শর্করা, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন, ক্লোরিন ফাইবার, যা সারা দিন রোজা রাখার পর খুবই দরকারি।
- দই∶ ইফতারিতে দই বা দই-চিড়া খেতে পারেন। এতে সারাদিন অভুক্ত পেট ঠান্ডা রাখতে ও হজমক্রিয়া সহজ করতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে। প্রতি ১০০ গ্রাম দইয়ে শক্তি থাকে ২৫৭ ক্যালরি।
- ভুষি: কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে জুস কিংবা দুধের সঙ্গে ইসুবগুল খেতে পারেন। এটিও পেট ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
- গ্লুকোজ বা স্যালাইন∶ বেশি দুর্বল লাগলে যাদের উচ্চ রক্তচাপ কিংবা বহুমূত্রসহ, নানাবিধ জটিল রোগের সমস্যা নেই, তারা এক গ্লাস গ্লুকোজ বা স্যালাইন খেয়ে নিতে পারেন ইফতারের পর।
- সবজি ও ফল∶ সবজি ও ফল খেতে হবে নিয়ম মতো। তা না হলে এই সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে নিত্যসঙ্গী।
- পর্যাপ্ত পানি ও ডাব∶ রোজায় শরীরে পানির ঘাটতি দেখা যায় অধিক। তাই নিয়ম করে পানি খাওায়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই গরমে ০অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি না খেলে হজমের সমস্যা হবে। ইফতারের পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটু পরপর পানি খেতে হবে। প্রতিদিনের ইফতারের তালিকায় ডাবের পানিও রাখা যেতে পারে। এটি সারাদিনের ক্লান্তি দূর করবে ও গ্লুকোজের চাহিদা পূরণ করবে।
- সিদ্ধ ছোলা∶ ইফতারে সিদ্ধ ছোলা খুবই উপকারি। ২৫-৩০ গ্রাম ছোলায় প্রায় ১০০ ক্যালরি থাকে। কিন্তু ফ্যাট থাকে মাত্র ৫ গ্রাম, যা কি না রক্তের চর্বি কমায়। তাই সামান্য পরিমাণ খেয়ে নিলেই অনেক শক্তি পাওয়া যায়। আবার সিদ্ধ ছোলা পেঁয়াজ, কাচামরিচ, শসা, টমেটো আর অল্প সরিষার তেল দিয়েও মাখিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এই খাবারটি মুহূর্তেই শরীরে শক্তি যোগাবে।
- আমিষ∶ খাবারে যাতে আমিষের ঘাটতি না হয় সেজন্য ইফতার বা সেহরিতে মাছ, মুরগির তরকারিও খাওয়া যেতে পারে। যাদের গরুর মাংসে বিধিনিষেধ নেই তারা গরুর মাংস খেতে পারেন। তবে প্রতিবেলা মাংস না খেয়ে একবেলা মাছ খেতে চেষ্টা করুন।
যা খাবেন না∶
- অতিরিক্ত লবণ: অতিরিক্ত লবণ বা কাচা লবণ খাবেন না। কারণ লবণ পানির তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়। রোজায় মানুষ ক্ষুধার চেয়ে পানির তৃষ্ণায় কষ্ট পান বেশি।
- ভাজা-পোড়া: ভাজা পোড়া একদমই না। ভাজা পোড়া খাবারে তেলের অধিক্য থাকে এবং অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকার পরে ভাজাপোড়া পেটে গ্যাসের সমস্যা করে। তাছাড়া ওজন আধিক্যের ব্যপার তো আছেই। এ খাবার থেকে বুক জ্বালা-পোড়া ও এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- চা বা কফি: চা বা কফি খাবার অভ্যাস যাদের আছে, তারা চেষ্টা করবেন শুধুমাত্র ইফতারের পর পরই পান করতে। কারণ চা/কফি ডায়ারিউটিক, অর্থাৎ ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ তৈরি করে ফলে দেহে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে।
এসজে/এএস