প্রজাতন্ত্রের সেবাদানে 'রাষ্ট্রপতি' লাভজনক পদ নয়: হাইকোর্ট
রাষ্ট্রপতি ‘লাভজনক পদ’ হলেও প্রজাতন্ত্রের সেবাদানে এটি লাভজনক পদ নয় বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার (২৪ এপ্রিল) হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৩৯ পৃষ্ঠার একটি পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ ঘোষণা দিয়েছেন আদালত।
এর আগে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দু'টি রিট গত ১৫ মার্চ সরাসরি খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির লিটনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আমরা মনে করি যে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি 'লাভজনক পদ' হলেও, 'প্রজাতন্ত্রের সেবাদানে এটি লাভজনক পদ নয়।
আদালত বলেন, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) সাবেক কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত থাকলেও, তা কোনোভাবেই রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচিত হওয়া থেকে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে না, কারণ রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের লাভজনক পদ নয়।
এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতির কার্যাবলী সংক্রান্ত বিধান প্রজাতন্ত্রের সেবায় অন্যান্য কর্মচারীদের প্রবিধানের অনুরূপ নয় বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত।
হাইকোর্ট তার রায়ে বলেন, আমরা মনে করি যে সংবিধান অনুযায়ী ‘নির্বাচন’ এবং ‘নিয়োগ’ একই অর্থ বহন করে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হলেন নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের ‘ঐক্যের প্রতীক’। আর সংবিধানের নবম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিরা প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিযুক্ত কর্মচারি। এই বিবেচনায় রিট দুটি খারিজ করা হয়েছে বলেও রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৪ এপ্রিল) দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। একক প্রার্থী হওয়ায় চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
এ প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে ৭ মার্চ একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম এ আজিজ খান। এবং রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করা-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনের বৈধতা নিয়ে আবদুল মোমেন চৌধুরী, কে এম জাবিরসহ ছয়জন গত ১২ মার্চ আরেকটি রিট করেন।
পরে দুটি রিটের ওপর শুনানি শেষে ১৫ মার্চ সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিলে আবেদন করলে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন এবং পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে আপিল দায়ের করতে বলেন।
ওই দিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম এ আজিজ খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এবি এম আলতাফ হোসেন।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরে আইনজীবী এম এ আজিজ খান বলেন, এখন যেহেতু পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে, আমরা সিপি (লিভ টু আপিল) দায়ের করব। আশা করি আপিল বিভাগে আমাদের আবেদনের শুনানি হবে, সেখানে এ রিটের ফয়সালা হবে।
কেএম/এএস