বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

একাত্তরের শরণার্থীরা কেন মুক্তিযোদ্ধা নয়

আমি মুক্তিযুদ্ধের জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করলাম, ভাই হারালাম,মা মেয়ে হারালাম, তিনমাস বয়সী নাতনি হারালাম, দেশের বাড়িঘর, গরু, ছাগল, ধান, মাছ, গাছ, সহায় সম্পত্তি সব হারালাম। নিঃস্ব হলাম। ক্যাম্পে যেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলাম। বিশ্ববিবেককে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করলাম। মুক্তিযুদ্ধের জন্য এতো কিছু ত্যাগ করলাম। নিজে নিঃস্ব হলাম। তবুও আমি কেন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত হতে পারব না। কেন এই লাইনে আমার দাঁড়ানোর অধিকার নেই।

কথাগুলো বলছিলেন দক্ষিণবঙ্গের শেষ প্রান্তের গ্রাম জেলেখালি চান্নির চক এর মুক্তিযুদ্ধের জন্য সব হারানো একজন মানুষ সুরেন বাবু। সুরেন বাবু ছিলেন ঐ গ্রামের একজন জমিজমাওয়ালা বিত্তশালী ও প্রভাব প্রতিপত্তিশালী লোক। হিন্দু মুসলিম অধ্যুষিত বড় গ্রামের বিচার শালিসেও তিনি থাকতেন প্রধান ভূমিকায়। হিন্দু মুসলিম সবাই তাকছ শ্রদ্ধা করতো। তার ছোট ভাই নগেন বাবুও ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকার প্রভাবশালী। এলাকায় দুই ভাইয়ের প্রভাব প্রতিপত্তি ও মানুষের প্রতি আন্তরিক ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট সুনাম ছিল। সবাই তাদের ভালোবাসতো।

তখনও তাদের ছিল যৌথ পরিবার। দুইভাইয়েরই ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে। পরিবারে সদস্য ও কৃষাণ-মাহিন্দার, ঝি-চাকরসহ বাড়িতে প্রায় ২৫ /৩০ জন লোক। তরপর তো আত্মীয়-স্বজন, অতিথি লেগেই আছে। প্রতি ওয়াক্তে সবমিলিয়ে প্রায় ৪০/৫০ জন লোকের রান্না হতো। তাদের পরিবারকে ছোটখাটো একটা মজলিস বাড়ি বললেও অত্যুক্তি হবে না।
প্রায় ৮০ বিঘার মতো পৈত্রিক ধানী জমি। ৩ বিঘার উপর বিশাল বাড়ি। এক বিঘার উপর বিরাট পুকুর। পুকুর ভরা মাছ। গোয়াল ভরা ৩০/৩২ টা গরু। ৭/৮ টা দুধের গাভি। উঠানে ২/৩ টা গোলায় ভর্তি ধান। গ্রামের অভিজাত পরিবার বলতে যা বোঝায় তা তারা।

তখন দেশে চলছে একটা অরাজক অবস্থা। সুরেণ বাবু সবসময় দেশকে নিয়ে ভাবতো। তার এমনি ভাব ছিল যে, দেশের ভালোর জন্য সে সব বিলিয়ে দিতে পারে।
এসে গেল ১৯৭১ সাল। দেশে শুরু হলো স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন। হটাও পাক বাঁচাও দেশ শ্লোগানে মুখর হলো সারা বাংলা। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিলেন "এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। তোমাদের যার যা আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো"।
ভাষণটি সুরেণ বাবুর পরিবার মনোযোগ দিয়ে রেডিওতে শুনলেন এবং মানসিকভাবে যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিলেন।
২৫ শে মার্চ কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার আগেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেলেন। ২৬ শে মার্চ ঘোষণাপত্রটি বঙ্গবন্ধু্র পক্ষে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন জন পাঠ করলো। সেটাও সুরেণ বাবু শুনলেন।
শুরু হয়ে গেল স্বাধীনতা যুদ্ধ।
গ্রামে গ্রামে গঠিত হচ্ছে মুক্তিবাহিনীর কমিটি। সুরেণ বাবু তার নিজ গ্রামের মুক্তিবাহিনীর প্রধান হলেন । যুদ্ধে যাওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন। কিন্তু বাধ সাধল গ্রামের কিছু পাকিস্তানি দোসর মুসলিম রাজাকার, আলবদর, আল শামসরা। তারা সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ির উপর এসে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতে লাগলো। বৌ, মা-বোনদের তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিলো। লুটপাট, ছিনতাই ও বাড়িঘরদোর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলো।
ভয় পেয়ে গেল হিন্দুরা। তারা জন্মভিটা ছেড়ে
শরনার্থী হয়ে পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতে আশ্রয় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
অগত্যা পরিবারের কথা ভেবে সুরেণ বাবুও সেই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন।

সুরেন বাবু যখন সিদ্ধান্ত নিলেন তার পরিবার নিয়ে ভারতে শরণার্থী হবে তখন তার গরুবাছুড় সহায় সম্পদ স্থানীয় চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠ বন্ধু সৈয়দ সানার হেফাজতে রাখার চিন্তা করলেন।
সেই মোতাবেক সৈয়দ সানার কাছে যেয়ে বললেন, দেখে বন্ধু আজ সময়ের বড় বেরহম। নিজের জন্মভিটা, জন্মভূমি, জন্মমাটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে পরবাসে। জানিনা ভাগ্যে কি আছে? আমার এই গরু বাছুড়, সহায় সম্পদ, বাড়িঘর সব তোমার হেফাজতে রেখে গেলাম। দেখো!
যদি কখনও দেশ স্বাধীন হয় আর বেঁচে ফিরে আসতে পারি, সেদিন আবার দেখা হবে।
তারপর জন্মভিটের একদলা মাটি নিয়ে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে নিজের কপালে তিলক এঁকে দিলো। বললো হে মাটি তোমাকে ছেড়ে চললাম নিরুদ্দেশে। যদি বেঁচে থাকি আর যদি ভাগ্য সহায় হয় আবার ফিরে আসব।
সব ফেলে নিঃস্ব হয়ে পাড়ি জমালেন ভারতের উদ্দেশ্যে।
বাড়ির সকল সদস্যকে তুলে দিলেন নৌকায়। আর তারা দুইভাই তাদের বোন ও বোনজামাইকে সাথে নেওয়ার জন্য গেলেন ডাঙাপথে। কিছুদুর যেতেই পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়লো দুই ভাই। ব্রাশফায়ারের জন্য অন্যদের সাথে দুজনকেও লাইনে দাঁড় করিয়ে দিলো।
সুরেন বাবু সেখান থেকে কোনোমতে পালিয়ে বেঁচে গেলেও ছোট ভাই নগেন বাবু আর পালাতে পারলো না। পাক আর্মিদের ব্রাশফায়ারে শহীদ হলো সে।

সুরেন বাবু কোনোমতে বেঁচে পরিবারের সাথে নৌকায় যোগ দিলো। সেদিন শরণার্থীদের পদে পদে ছিলো বিপদ।
কিছু দুর যেতেই এবার আবার নৌকাসহ পাক আর্মিদের আক্রমণে পড়লো। পাকদের তাড়া খেয়ে নৌকা থেকে যে যার মতো ছুটে পালালো। সুরেন বাবুর বড় পুত্রবধূ ভয়ে দৌড়াতে গিয়ে কোঁচড় থেকে তিন মাসের শিশু কন্যাটি কখন যে পড়ে গেল ঠিক পেলো না। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছে কিন্তু আর পাওয়া যায়নি।
পুত্রবধূটি পাগলির মতো কাঁদতে কাঁদতে চললো তাদের সাথে।
অবশেষে অনেক কষ্টে যেয়ে পৌঁছালো‌ শরণার্থী শিবিরে।

অস্থায়ী একটা তাঁবুতে স্থান হলো তার পরিবারের। ঘিঞ্চি পরিবেশ। শুধু লোক আর লোক। কেউ তাঁবু খাটিয়ে, কেউ একচালা টিনের ছাবড়া বানিয়ে, কেউ কেউ স্কুল কলেজের বারান্দায়, কেউবা সিমেন্টের বড় পাইপের মধ্যে অবস্থান নিয়েছে।
ঘন জনসমাগমে তৈরি হয়েছে এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বস্তির চেয়েও খারাপ অবস্থা।
নেই কোনো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। একটা কাঁচা পায়খানায় শতাধিক লোক পায়খানা করছে। নেই স্নানের ব্যবস্থা। নদীর ময়লা নোংরা জলে পায়খানা ভাসছে সেই জলে সব ডুব মেরে স্নান করছে। খাওয়া দাওয়ার পরিবেশও অস্বাস্থ্যকরকর। রোগবালাই, মহামারী লেগে আছে। প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু বৃদ্ধ যুবা মারা যাচ্ছে বিভিন্ন রোগে।
এরমধ্যেই সুরেন বাবু পরিবার নিয়ে কোনোমতে দিনাতিপাত করছে। হঠাৎ আশ্রয়কেন্দ্রে কলেরা মহামারী আকার ধারণ করলো। তার মা ও বড় মেয়ে কলেরায় মারা গেল।
এতো কিছুর মাঝেও যারা এদেশ থেকে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে গিছিল সুরেন বাবু তাদের বিভিন্নভাবে সাধ্যমতো সহযোগিতা করলো। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিলো, খাবার ব্যবস্থা করলো, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে গেলো ইত্যাদি ইত্যাদি।

যাইহোক নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করলো। শরণার্থীরা সব দলে দলে দেশে ফিরে আসতে থাকলো। সুরেন বাবুও পরিবার নিয়ে দেশে ফিরে আসলেন।
বাড়িতে ফিরে এসে দেখলেন এক বিরাণভূমি। ধানের গোলাগুলি ভাঙাচোরা। তাতে নেই কোনো ধান। ঘরে আসবাবপত্রসহ কিচ্ছুটি নেই। একেবারে ফাঁকা। পুকুরে মাছ নেই। বাড়ির বড় বড় গাছগুলো সব কেটে নিয়ে গেছে। সৈয়দ সানার কাছে গরু চাইতে গেলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দিলো।
এখন তার পরিবার একেবার নিঃস্ব।

স্বাধীনতার কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামে গ্রামে শুরু হলো মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি।
মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম ওঠানোর জন্য সব লাইন দিলো।
সুরেন বাবুও সেই লাইনে দাঁড়িয়ে গেলেন।
চেয়ারম্যান সাহেব সুরেন বাবুর কাছে এসে প্রশ্ন করলেন,
তুমি লাইনে দাঁড়িয়েছো কেন? তুমি কি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলে?
সুরেন বাবুর স্পষ্ট জবাব, শুধু যারা যুদ্ধ করেছিল তারাই কি মুক্তিযোদ্ধা? যারা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল তারা? স্বাধীনতাকে দ্রুত পাইয়ে দিতে যারা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল তারা? তারা কি মুক্তিযোদ্ধা নয়?

আচ্ছা চেয়ারম্যান সাহেব জানা আছে কি
সেসময় এই শরণার্থীরাই স্বাধীনতার জন্য বিশ্ববিবেককে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছিল?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই শরণার্থীদের দুর্বিষহ জীবন বিবেচনা করে দ্রুত স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য বিশ্ব সংঘকে চাপ প্রয়োগ করেছিল।
আমি তো মনে করি এই শরণার্থীরাই অর্ধেক স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। স্বাধীনতার জন্য শরণার্থীদের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। তবুও কেন তারা মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবে না।

সেদিনের অনেক রাজাকার আলবদর আল শামসকে দেখছি মুখের খোলস বদলে এই লাইনে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা বনে যাচ্ছে।
অথচ আমি স্বাধীনতার জন্য এতো ত্যাগ করার পরও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারব না? কেন পারব না বলতে পারেন?
এই বলে আক্ষেপের সুরে উপরের কথাগুলো বলছিলেন সুরেণ বাবু।
এ কথাগুলো শুধু সুরেন বাবুর নয় এ কথাগুলো আমাদের সকলের। এ কথাগুলো বিশ্ব বিবেকের।



ডিএসএস/ 

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’