নওগাঁয় মাঘেই যেন বসন্তের আগমন !
নওগাঁয় বসন্তের আগমনে গাছে গাছে ফুলের মেলা সাথে পাখিদের কোলাহল। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
ষড়ঋতুর শেষ ঋতু বসন্ত। ফাল্গুন এবং চৈত্র মাস মিলে হয় বসন্ত। শীতের বিদায় ও গ্রীষ্মের আগেই আগমন ঘটে ঋতুরাজ বসন্তের। তবে শীত না যেতেই মাঘের কনকনে ঠান্ডায় নওগাঁয় গাছে গাছে নানা রঙের ফুলের আগমন জানান দেয় ‘মাঘেই যেন বসন্ত এসে গিয়েছে!’
তাই তো কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী শাহ আব্দুল করিম গেঁয়ে গেছেন বসন্তের গান।
‘বসন্ত বাতাসে ও সই গো, বসন্ত বাতাসে
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে সই গো বসন্ত বাতাসে।
বন্ধুর বাড়ি ফুল বাগানে নানা বর্ণের ফুল
ফুলের গন্ধে মনানন্দে ভ্রমরা আকুল
সই গো বসন্ত বাতাসে’।
ঋতুরাজ বসন্ত শুধু গান-কবিতায় নয় মানুষও সেজে উঠে প্রকৃতির রঙে।
তাই সময়ের আগেই দ্বারে বসন্ত জাগ্রত হয়ে ওঠায় শীতপ্রেমীরা আহ্লাদের কিছু দেখছেন না। মৌসুমের প্রথম থেকে শীত যে-ক্ষিপ্ততা দেখিয়েছে, মাঘের শীত বাঘ প্রবচনটি সত্য করে সেটা মেনে নিয়েছে। ভরা মাঘে লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে থার্মোমিটারের পারদ! মাঘ মাস শেষ হতে এখনো বাকি ২ সপ্তাহ এরই মধ্যে উত্তরের বাতাস বিদায় ঘন্টা বাজছে। শুরু হয়েছে দখিণার গুঞ্জন। প্রকৃতিতে ফাগুন লেগেছে। গ্রামাঞ্চলে ক্ষণে ক্ষণে ধ্বনিত হচ্ছে কোকিলের কুহুতান। ঘরছাড়া সুরে মাতোয়ারা পাখিরাও। বনে-বাদাড়ে সংগীত-জলসার আয়োজনে ব্যস্ত তারাও।
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে নওগাঁ শহরের বিজিবি ক্যাম্প সড়কে গিয়ে দেখা যায়, ছোটযমুনা নদীর বিজিবি সেতুসংলগ্ন রাস্তার ধারের নতুন কুড়ি ও ফুলে রাঙা হয়ে উঠেছে শিমুল গাছটি। রাস্তার ধারে শিমুল গাছে প্রকৃতির আদরমাখা স্পর্শে জেগে উঠেছে। শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে প্রকৃতি ফিরে পেতে চলছে ফুল, ফল ও রঙের এক অপরূপ সমারোহ, আগমনী বার্তা ছড়াচ্ছে বসন্তের। শিমুলের হাসিতে বনে লেগেছে লাল রঙের ছোয়া। নানান পাখির মিষ্টি কিচিরমিচির মাতাল করতে আসছে ঋতুরাজ বসন্ত সবুজ-শ্যামল বাংলায়।
শুধু কি ফুল? ফলের গাছগুলোও ভরে উঠেছে মুকুলে। সেই সঙ্গে আম, লিচু ও জাম গাছগুলো হয়ে উঠেছে ফুলেল। সদর উপজেলার জেলা পরিষদ পার্ক, নওগাঁ সরকারি শিশু পরিবার ভবনের সামনে পলাশ গাছগুলো নতুন কুঁড়ি ও ফুলে ভরে উঠেছে। অনাবিল আনন্দ ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে প্রকৃতি। ইট-কাঠের এই যুগে আগাম বসন্তে প্রকৃতি যেন তার সব সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে। নতুন কুঁড়িতে ছেয়ে গেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ফলদ বাগানের বৃক্ষরাজি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বলেছেন :
বসন্তে কি শুধু কেবল ফোটা ফুলের মেলা রে। দেখিস নে কি শুক্নো-পাতা ঝরা-ফুলের খেলা রে।
আবার বসন্ত মানেই দ্রোহ, খুন রাঙা বিক্ষোভ। বসন্ত মানে অধিকার, বসন্তেই যে ভাষার আন্দোলন! ভাই হারানোর শোক সন্তানহারা মায়ের চোখের জল।
হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন,
বাংলাদেশের শহর গ্রামে চরে
ফাগুন মাসে রক্ত ঝরে পড়ে।
ফাগুন মাসে দুঃখী গোলাপ ফোটে
বুকের ভেতর শহিদ মিনার ওঠে।
এ প্রসঙ্গে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকলাইন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘পলাশ-শিমুলসহ বেশ কিছু ফুল ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ফুটে। তবে এমন নয় যে একেবারে ফাল্গুনেই ফুটে। শীতের শেষে আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী ফুলগুলোর গঠন পরিবেশ চলে আসে। অঞ্চলভেদে ফুল ফোটার সময়ে ভিন্নতা দেখা দেয় কিছু আগে পরে। তবে পলাশ-শিমুল ফুলগুলোর প্রাচুর্য থাকে বসন্তকালে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈষিক দূষণ আর জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের ফলে ধীরে ধীরে প্রতিটি ঋতুই হারাচ্ছে তার নিজস্ব বৈচিত্র্য আর সৌন্দর্য। প্রকৃতিকে স্বরূপ ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজন পরিবেশ দূষণ রোধ ও ব্যাপকভাবে বৃক্ষ রোপণ করা।’